ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়: জাতিসংঘের বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৮ ১০:৪০:৪৮
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়: জাতিসংঘের বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। জেনিভা থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও রায় প্রদানের পদ্ধতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) জেনিভায় প্রদত্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এই বিবৃতি প্রদান করেন। তিনি জানান যে, ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ রায় ঘোষণা করেছে। গত বছরের বিক্ষোভ দমনের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য এই রায় একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

নেতৃত্বের স্তরে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা দাবি

শামদাসানির ভাষ্যমতে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওএইচসিএইচআর-এর অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তারা নিয়মিতভাবে আবেদন জানিয়ে এসেছেন যে— ‘নির্দেশনা এবং নেতৃত্বের স্তরে থাকা ব্যক্তিরা সহ’ সকল অপরাধীর আন্তর্জাতিক বিধি অনুসারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। একইসঙ্গে, তিনি জোর দিয়েছেন যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যথাযথ প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ লাভের সুযোগ পান।

অনুপস্থিতিতে বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিয়ে আপত্তি

যদিও সংস্থাটি সরাসরি এই বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেনি, তবুও আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ সংক্রান্ত যে কোনো জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ায় যথাযথ ন্যায্যতা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা অপরিহার্য বলে ওএইচসিএইচআর মনে করে।

মুখপাত্র আরও উল্লেখ করেন যে, এই মামলার রায় যেহেতু দণ্ডিতের অনুপস্থিতিতে প্রদান করা হয়েছে এবং এতে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ জারি করা হয়েছে, সেহেতু আন্তর্জাতিক মাপকাঠি অনুসরণ করা আরও বেশি জরুরি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘সকল পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা’ করার নীতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি এই মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়টি দুঃখের সাথে উল্লেখ করেন।

সংযম ও নিরাপত্তা খাত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ

রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান শামদাসানি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে বাংলাদেশ সরকার সত্য উন্মোচন, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি সমন্বিত পথে অগ্রসর হবে। তিনি মনে করেন, এই সমন্বিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি অর্থবহ ও মৌলিক নিরাপত্তা খাত সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, যা ভবিষ্যতে এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন প্রতিরোধে সহায়ক হবে। এই গুরুদায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ সরকার ও সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করতে হাইকমিশনারের কার্যালয় সর্বদা প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ with Answers)

১. শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিষয়ে কোন সংস্থা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) এই রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

২. ওএইচসিএইচআর-এর মুখপাত্র কে এবং তিনি কোথা থেকে বিবৃতি দিয়েছেন?

সংস্থাটির মুখপাত্র হলেন রাভিনা শামদাসানি এবং তিনি জেনেভা থেকে বিবৃতি দিয়েছেন।

৩. জাতিসংঘের মূল আপত্তির বিষয়গুলো কী কী?

জাতিসংঘ প্রধানত দুটি বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে: প্রথমত, বিচার দোষীর অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে; এবং দ্বিতীয়ত, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে (যা তারা সব পরিস্থিতিতে বিরোধিতা করে)।

৪. ওএইচসিএইচআর ভুক্তভোগীদের জন্য কী কী দাবি করেছে?

ওএইচসিএইচআর দাবি করেছে যে ভুক্তভোগীদের যেন কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।

৫. জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের নাম কী এবং তিনি কী আশা প্রকাশ করেছেন?

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের নাম ভলকার টুর্ক। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ সত্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ