ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাথরুমে স্ত্রীর সঙ্গে ৫ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৬ ১৪:৪২:৩৯
বাথরুমে স্ত্রীর সঙ্গে ৫ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সেদিনটা ছিল ৫ আগস্ট। রাজপথে উত্তাল জনতা, পতনের মুখে একটি সরকার। কিন্তু ঘটনাটি শুরু হয় একদম ব্যক্তিগত এক শঙ্কা দিয়ে—যেখানে একজন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক ক্ষমতাধর নেতা, নিজ ঘরেও ছিলেন না নিরাপদ।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেই অভিজ্ঞতার কথা বললেন প্রথমবারের মতো। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়াল-এর সঙ্গে এক গভীর ও খোলামেলা সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, “সেদিন আমি নিশ্চিত ছিলাম—এটাই আমার জীবনের শেষ দিন।”

আশ্রয় নয়, পরিণত হয়েছিল ফাঁদে

সংসদ এলাকার নিজের বাসা তিনি এড়িয়ে পাশের আরেকটি বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন—ভেবেছিলেন, সেখানে নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু সেই নিরাপদ আশ্রয়ই একসময় হয়ে ওঠে দুঃস্বপ্নের গহ্বর। আন্দোলনকারীরা বাসায় ঢুকে পড়ে, শুরু করে তাণ্ডব।

তিনি বলেন, “আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। বাইরে ভাঙচুর চলছিল, ভেতরে আমরা থমকে গিয়েছিলাম নিঃশব্দ আতঙ্কে।”

তারা এমনকি বাথরুমেও হানা দেয়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কাদেরের স্ত্রী বোঝাতে থাকেন—তিনি (কাদের) অসুস্থ। কিন্তু তারা তো আর শুনতে আসেনি, তারা এসেছিল ‘লুটে’ নিতে—চোখে আগুন, হাতে লাঠি।

আচরণ বদলালো আচমকাই

শেষ পর্যন্ত দরজা খোলেন ওবায়দুল কাদের। ৭-৮ জন যুবক হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে। প্রথমেই একজন বলে ওঠে, “নেত্রী তো পালালেন, আপনি যাননি কেন?” কাদের কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তখনই দৃশ্যপট বদলে যায়।

কেউ বলে, “ছবি তুলব”, কেউ নেয় সেলফি। কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা চেনার মতো আচরণ—তারা যেন আর সেই উগ্র জনতা ছিল না।

তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারিনি, আচমকা ওদের মনোভাব বদলে গেল কেন। হয়তো কেউ কেউ আমাকে চিনেছিল। কিংবা সেটাই ছিল আমার ভাগ্য।”

গায়ে নতুন শার্ট, মুখে মাস্ক, পথে যাত্রা

এরপর যা ঘটল, তা যেন সিনেমার চিত্রনাট্যও হার মানায়। তারা কাদেরকে পরিয়ে দেয় সাধারণ একটি শার্ট, গলায় ঝুলিয়ে দেয় লাল পতাকার ব্যাজ, মুখে পরিয়ে দেয় কালো মাস্ক। তারপর তাকে হাঁটিয়ে নেয় সংসদ এলাকা থেকে গণভবনের দিকে।

রাস্তা ছিল ফাঁকা, একটিও গাড়ি ছিল না। ঠিক তখনই হঠাৎ করে আসে একটি খালি ট্যাক্সি বা ইজি বাইক। কাদের বলেন, “এটা আমার জীবনের সবচেয়ে অলৌকিক মুহূর্তগুলোর একটি। যেন অজানা কোনো সুরক্ষা এসে হাজির হলো।”

‘চাচা-চাচি অসুস্থ’, এমন বলেই চেকপোস্ট পার

দু’জন আন্দোলনকারী চালকের আসনে বসে যানটি চালাতে শুরু করে। তারা চেকপোস্টে বলে, “চাচা-চাচি অসুস্থ, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। বিরক্ত করবেন না।” এবং এর মধ্য দিয়ে কাদের ও তার স্ত্রীকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।

‘যারা ভাঙচুর করেছিল, তারাই আমাকে বাঁচালো’

“ভাবতেই পারিনি যারা আমার বাসায় হামলা চালিয়েছিল, তারাই আমাকে রক্ষা করবে। ওই দিনটা শুধু বেঁচে যাওয়ার নয়, বোধহয় নতুন করে জন্ম নেওয়ার দিনও ছিল আমার জন্য,”—কণ্ঠে অদ্ভুত এক প্রশান্তি নিয়ে বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরও বলেন, “সেদিনের পর আমার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। বুঝেছি, জীবন কখনও কখনও গল্পকেও হার মানায়।”

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: ওবায়দুল কাদের কেন বাথরুমে লুকাতে বাধ্য হন?

উত্তর: আন্দোলনকারীরা হঠাৎ তার আশ্রয়স্থলে হামলা চালালে নিরাপত্তার জন্য স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকাতে বাধ্য হন।

প্রশ্ন: কাদের ও তার স্ত্রী কতক্ষণ লুকিয়ে ছিলেন?

উত্তর: তারা প্রায় ৫ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন, এসময় বাইরে ভাঙচুর ও লুটপাট চলছিল।

প্রশ্ন: এরপর কী ঘটেছিল?

উত্তর: আন্দোলনকারীদের মধ্যেই কেউ কেউ আচরণ বদলে কাদের ও তার স্ত্রীকে একটি গাড়িতে করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ