ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

টেস্ট ক্রিকেটে বল বদলের নিয়ম, কারণ ও পদ্ধতি এক নজরে

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১৮:৫৫:৫২
টেস্ট ক্রিকেটে বল বদলের নিয়ম, কারণ ও পদ্ধতি এক নজরে

টেস্ট ক্রিকেটে বল বদলের বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার চলমান টেস্ট সিরিজে একটি বিষয় বারবার উঠে এসেছে—প্রতিনিয়ত বল পরিবর্তন। মূল বলগুলো দ্রুতই আকার হারাচ্ছে, ফলে ম্যাচ অফিসিয়ালদের বল লাইব্রেরি থেকে নতুন বল এনে খেলাতে হচ্ছে। দর্শক, খেলোয়াড় এমনকি বিশ্লেষকরাও জানতে আগ্রহী হচ্ছেন—এই বল লাইব্রেরি কী, কোথা থেকে আসে এই বলগুলো, কীভাবে বাছাই করা হয়, এবং কোন পরিস্থিতিতে বল বদলানো হয়?

এই প্রতিবেদনটিতে আমরা বিশ্লেষণ করব টেস্ট ক্রিকেটে বল বদলের নিয়ম, কারণ, পদ্ধতি এবং এর সঙ্গে জড়িত নানা দিক।

কেন বদলানো হয় টেস্ট ম্যাচের বল?

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, বল বদলানো যায় কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। প্রতিটি টেস্ট ম্যাচে ব্যবহৃত বল একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তবে কেবলমাত্র বল নরম হয়ে গেছে বলে তা পরিবর্তনযোগ্য নয়। পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলো হলো—

বলের আকার পরিবর্তন (Loss of Shape): বল যদি গোলাকার না থাকে বা ভিন্নধর্মী কোনো আকৃতি ধারণ করে।

ভিজে যাওয়া (Wet Ball): বৃষ্টির কারণে বা মাঠে বল পড়ে ভিজে গেলে।

দৃশ্যমান ক্ষতি (Visible Damage): বল ফেটে যাওয়া, সিম ছিঁড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

আইসিসি’র আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র এই তিনটি কারণেই বল বদলানো সম্ভব। খেলোয়াড়দের হাতে বল নরম মনে হলেও সেটি আইনি কারণ নয়।

বল পরিবর্তনের প্রক্রিয়া: কিভাবে বাছাই করা হয়?

প্রতিটি টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে তৈরি করা হয় একটি “বল লাইব্রেরি”। এই লাইব্রেরিতে থাকা বলগুলো মূলত স্থানীয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যবহৃত পুরনো বল। ম্যাচ শুরুর দুই থেকে তিন দিন আগে মাঠের দায়িত্বে থাকা অ্যাসোসিয়েশন—যেমন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হলে ল্যাঙ্কাশায়ার, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে হলে মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন—এই বলগুলো সরবরাহ করে।

এরপর বলগুলো পরীক্ষা করে চতুর্থ আম্পায়ার। ব্যবহার করা হয় ধাতব গজ (ring-shaped gauge), যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় বলটি ব্যবহারযোগ্য কিনা।

যে বল একটি রিং দিয়ে যায়, কিন্তু অন্যটি দিয়ে না যায়, সেই বলটিই লাইব্রেরিতে স্থান পায়।

দুটি রিং দিয়ে গেলে বলটি অতিরিক্ত ছোট।

কোনোটিতেই না গেলে সেটা বড়।

একটি দিয়ে গিয়ে অপরটি দিয়ে না গেলে সেটি আদর্শ মাপের বলে বিবেচিত।

একটি ম্যাচে সাধারণত ১২ থেকে ২০টি পর্যন্ত বল লাইব্রেরিতে রাখা হয়। তবে কোনো ভেন্যুতে যদি উপযুক্ত বলের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে ম্যাচ রেফারি এবং আম্পায়াররা একত্রে আরও বল চেয়ে নিতে পারেন।

কী কী উৎস থেকে আসে এই বলগুলো?

১. স্থানীয় প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ব্যবহৃত বল – মূল উৎস।

২. দলগুলোর অনুশীলনে ব্যবহৃত পুরনো বল – প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারযোগ্য।

৩. সিরিজের পূর্ববর্তী ম্যাচের বল – যদি বলটি ভালো অবস্থায় থাকে এবং কোনো বোলার স্মারক হিসেবে না রাখে, তবে তা লাইব্রেরিতে যোগ করা হয়।

এই বলগুলো বয়স বা ওভারের সংখ্যা অনুযায়ী বাছাই করা হয় না। একটি বল হয়তো ৬০ ওভার খেলেছে কিন্তু ভালো মাঠে, অপরটি ৩০ ওভারে বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত—তাই সিদ্ধান্ত হয় দৃষ্টিনির্ভর পর্যবেক্ষণে।

কে সিদ্ধান্ত নেয় বল বদলের?

বল বদলানোর প্রাথমিক অনুরোধ আসে মাঠের মধ্যে থেকে, সাধারণত বোলিং দলের পক্ষ থেকে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন অনফিল্ড আম্পায়াররা। তারা বলটির অবস্থা পরীক্ষা করেন এবং যদি আইসিসির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বলটি অযোগ্য মনে হয়, তাহলেই বল বদলের অনুমতি দেন।

কখনো কখনো, আম্পায়াররা নিজেরাই বল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন—যদি তারা বলের ওপর বল টেম্পারিং বা অনিয়মের লক্ষণ পান। তবে এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল, কারণ বল টেম্পারিং একটি গুরুতর অভিযোগ এবং তার জন্য দৃশ্যমান প্রমাণ প্রয়োজন।

বল বদলের সময় কৌশলগত খেলাও চলে

বল পরিবর্তন কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া নয়, বরং অনেক সময় তা কৌশলগত সিদ্ধান্তেও পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ, চলমান লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় বোলাররা বল বদলের আবেদন করেন, কারণ তখন বলটি তাদের হাতে ভালো সুইং করাচ্ছিল। কিন্তু বদলে আনা বলটি কার্যত কিছুই করতে পারেনি এবং মাত্র আট ওভার পর সেটিও আকার হারিয়ে ফেলে।

অন্যদিকে, ম্যাচের শেষ দিনে ইংল্যান্ড বল নরম থাকুক চায়, কারণ এতে ব্যাটাররা বড় শট খেলতে কম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তখন তারা কোনো বদল চায়নি, যদিও বলটি দৃশ্যত ক্ষয়প্রাপ্ত ছিল।

কোন ব্র্যান্ডের বল বেশি সমস্যা করে?

বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটে তিন ধরনের বল ব্যবহৃত হয়:

SG – ভারত ও কিছু এশীয় দেশে

Dukes – ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ

Kookaburra – অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে

গত কয়েক বছরে SG বল নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে আকার হারানোর কারণে। কুকাবুরা বলের সিম তুলনামূলকভাবে কম উঁচু হওয়ায় তা সুইং করাতে অসুবিধা হয় বলে অনেক বোলারের মত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডিউকস বল নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে—ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলোয়াড়রা অভিযোগ করছেন, বল দ্রুতই অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ডিউকস বলের গায়ে বছরের স্ট্যাম্প থাকে। ফলে পুরনো বল নতুন করে ব্যবহার করার সুযোগ কম থাকে। SG ও কুকাবুরা বলের ক্ষেত্রে এমন ট্র্যাকিং সুবিধা নেই।

টেস্টের গভীরতায় বল বদলের গুরুত্ব

একটি বল বদলের সিদ্ধান্ত টেস্ট ম্যাচের গতি সম্পূর্ণ পাল্টে দিতে পারে। বল বদলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে একাধিক দিক—নিয়ম, প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা এবং কখনো কখনো কৌশলও। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন ও পাঠক যখন গভীর, বিশ্লেষণধর্মী কনটেন্ট চায়, তখন বল লাইব্রেরির এই জটিল দুনিয়া নিয়ে আলোচনাও হয়ে ওঠে সময়োপযোগী।

এই রিপোর্ট থেকে বোঝা যায়—বল বদল কেবল একটি রুটিন কাজ নয়, বরং ক্রিকেটের গভীর কৌশলের একটি অংশ। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর হলে হয়তো বিতর্ক কিছুটা কমবে, তবে বলের চরিত্র বদলানো নিয়ে নাটকীয়তা বরাবরই টেস্ট ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

প্রশ্ন ১: টেস্ট ক্রিকেটে বল কখন বদলানো যায়?

উত্তর: বল আকার হারালে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ভিজে গেলে আইসিসি নিয়ম অনুযায়ী বল বদলানো যায়।

প্রশ্ন ২: বল লাইব্রেরিতে কোন ধরনের বল রাখা হয়?

উত্তর: স্থানীয় প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ব্যবহৃত উপযুক্ত মাপের পুরনো বল, যেগুলো নির্ধারিত গজ টেস্টে উত্তীর্ণ।

প্রশ্ন ৩: কোন ব্র্যান্ডের বল বেশি বিতর্কের জন্ম দেয়?

উত্তর: বর্তমানে ডিউকস বল নিয়ে বেশি অভিযোগ থাকলেও SG ও কুকাবুরাও অতীতে সমালোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: বল বদলে কি ম্যাচের গতি পাল্টাতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, একটি বল বদল কৌশলগতভাবে ম্যাচের রণনীতি এবং ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রশ্ন ৫: চতুর্থ আম্পায়ারের ভূমিকা কী?

উত্তর: তিনি বল যাচাই করে বল লাইব্রেরি তৈরি করেন এবং নতুন বল সিলেকশনের সময় বল উপস্থাপন করেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ