ঢাকা, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

পাকিস্তানের পর কি ভারতের রাজনীতির শিকার হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট?

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২০ ০৭:১৯:৫৩
পাকিস্তানের পর কি ভারতের রাজনীতির শিকার হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট?

নিজস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে কূটনীতির ছায়া নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত–পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে। এবার সেই ছায়া কি বাংলাদেশের দিকেও ছড়িয়ে পড়ছে? এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভা, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) হুমকি এবং ভারতীয় দলের সফর পিছিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে অনেকের মনেই প্রশ্ন—পাকিস্তানের পর কি এবার ভারতের রাজনীতির শিকার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট?

ঢাকায় সভা মানেই ভারত ‘না’

২৪ জুলাই ঢাকায় এসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করেছে এসিসি। এই সভায় এশিয়া কাপ ২০২৫ আয়োজন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। তবে বিসিসিআই সাফ জানিয়ে দিয়েছে—ঢাকায় সভা হলে তারা অংশ নেবে না, এমনকি এশিয়া কাপও হতে দেবে না। ভারতের প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সূত্র বলেছে, “সভা ঢাকায় হলে এশিয়া কাপ হতে পারে না।”

এই হুমকি স্বাভাবিক কোনো অবস্থান নয়। বরং এটি ইঙ্গিত করে, বাংলাদেশকে ঘিরেও ভারত এখন কূটনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে ক্রীড়াঙ্গনে।

সফর চূড়ান্ত, তারপরও পিছিয়ে গেল ভারত

এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি–টোয়েন্টি খেলতে। সফরের সময়সূচিও চূড়ান্ত করেছিল বিসিবি ও বিসিসিআই। কিন্তু হঠাৎ করে ভারত সফর পিছিয়ে দেয় ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

বিসিবি জানিয়েছিল, সফর পিছিয়েছে ভারতের অনুরোধে। কিন্তু সফর বাতিল বা বিলম্বের পেছনে কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানায়নি ভারত।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বলেছে—বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত সরকার ক্রিকেট দলের সফরে অনুমতি দিচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, ক্রীড়াঙ্গনেও এখন রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব পড়ছে।

ফুটবলেও একই ধারা

শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়নি ভারত। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) কোনো কারণ না জানালেও ধারণা করা হয়, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।

কেন ঢাকায় আপত্তি?

ঢাকায় এসিসির সভায় ভারতের আপত্তির একটি বড় কারণ পাকিস্তান। বর্তমান এসিসি সভাপতি মহসিন নাকভি, যিনি আবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান এবং একযোগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাকিস্তান দল এখন ঢাকায় সফরে রয়েছে, এবং শেষ টি–টোয়েন্টির দিনই এসিসির সভা নির্ধারিত।

ভারতের অভিযোগ, নাকভি ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাকায় সভা ডেকে তাদের ওপর ‘রাজনৈতিক চাপ’ সৃষ্টি করছেন। বিসিসিআই বলেছে, ঢাকায় সভা হলে তারা অংশ নেবে না এবং বৈঠকের সিদ্ধান্তও মানবে না।

এছাড়া, ভারত ছাড়া আফগানিস্তান ও ওমানও নাকি ঢাকায় আসতে অনাগ্রহী, যা ভারতের প্রভাব বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

ভারত–পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ রয়েছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। কারণ, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—“সন্ত্রাস ও ক্রিকেট একসঙ্গে চলতে পারে না।” এর ফলেই দুই দেশের মধ্যে কেবল এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপের মতো বহুজাতিক টুর্নামেন্টেই দেখা হয়।

কিন্তু এবার বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যদি এমন রাজনীতিকরণ শুরু হয়, তাহলে এটি হবে দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়াঙ্গনের জন্য নতুন এক দুঃসংবাদ।

সামনে কী?

বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চলছে আইসিসির সভা। সেখানে এসিসি সদস্যরাও রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকার সভা ও এশিয়া কাপ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। কিন্তু বিসিসিআই যদি তাদের অবস্থান বদলায় না, তাহলে এশিয়া কাপ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

নভেম্বরে ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের ঢাকায় এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে অংশ নেওয়ার কথা। এখন সেই সফর নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গন রাজনৈতিক প্রভাব থেকে কখনোই পুরোপুরি মুক্ত ছিল না। তবে এবার প্রশ্ন উঠছে—পাকিস্তানের মতো এবার কি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের শিকার হতে যাচ্ছে?

যদি তাই হয়, তবে শুধু ক্রিকেট নয়—পুরো অঞ্চলের ক্রীড়া পরিবেশই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ