ঢাকা, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

সিএমএসএফ হবে কেন্দ্রীয় ডিভিডেন্ড হাব: কর কাঠামো বদলানো হবে

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২১ ০৯:৫৭:৪৬
সিএমএসএফ হবে কেন্দ্রীয় ডিভিডেন্ড হাব: কর কাঠামো বদলানো হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার দেশের শেয়ারবাজার ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল’ বা সিএমএসএফ-কে একটি কেন্দ্রীয় ডিভিডেন্ড বিতরণকারী সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। এর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছাতে নতুন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা চালু হবে। পাশাপাশি কর কর্তনের প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়তা আসবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝামেলাবিহীন সমাধান তৈরি হবে।

এ লক্ষ্যে সিএমএসএফ-এর আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা এবং কার্যপরিধি সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।

একক প্ল্যাটফর্মে ডিভিডেন্ড বিতরণ ও কর কর্তন

নতুন ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলোর ঘোষিত ডিভিডেন্ড সরাসরি সিএমএসএফ-এ জমা হবে। পরবর্তী ধাপে সিএমএসএফ থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডিভিডেন্ড বিতরণ করা হবে। কর কর্তনও এখানেই সম্পন্ন হবে এবং তা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে।

বর্তমানে কর কর্তনের পর পৃথক প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহের প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। অনলাইন কর প্রত্যয়ন অনেক সময় পাওয়া যায় না এবং বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তা সংগ্রহে আগ্রহী হন না। সিএমএসএফ যদি ডিভিডেন্ড হাব হিসেবে কাজ করে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা একটি একক চালানের ভিত্তিতে কর সুবিধা নিতে পারবেন। এতে রিটার্ন দাখিল সহজ হবে এবং কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে।

প্রতিষ্ঠার পরিসংখ্যান ও বিতর্ক

২০২১ সালের জুনে গঠিত সিএমএসএফ এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অবণ্টিত ডিভিডেন্ড ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারবাজারে তারল্য জোগান। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা নগদ এবং ৩০৫ কোটি টাকার শেয়ার ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে।

তবে ফান্ডের পরিচালন ব্যয় ও কার্যক্রম নিয়ে অতীতে সমালোচনা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সম্মানী ও অনুষ্ঠান খাতে ব্যয় ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট পরিচালন ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে ফান্ডটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমিন বলেন, “বাজার থেকে কোম্পানির কার্যকরী মূলধনের অর্থ তুলে সিএমএসএফে জমা দিতে হওয়ায় কোম্পানিগুলোর অপারেশনাল চাপ বেড়েছে। এছাড়া এই তহবিলের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”

বৈদেশিক লেনদেনে সীমাবদ্ধতা

সিএমএসএফ সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পাঠাতে একটি বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব খুলতে চেয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ফান্ডটির আইনি ভিত্তিকে দুর্বল উল্লেখ করে অনুমোদন দেয়নি।

এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সাম্প্রতিক বৈঠকে সিএমএসএফকে একটি স্ট্যাটুটরি (statutory) তহবিলে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলা হয়, যাতে তা একটি পূর্ণাঙ্গ আইনসিদ্ধ সংস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।

বিনিয়োগ কার্যক্রম থেকে সরে আসছে সিএমএসএফ

সিএমএসএফ অতীতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর মাধ্যমে কিছু ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেছে এবং একটি মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হিসেবেও ছিল। এই ধরনের কার্যক্রম বাজারে সমালোচনার জন্ম দেয়, কারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের ঘাটতি দেখা যায়।

নতুন কাঠামো অনুযায়ী, সিএমএসএফ বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহার করে আর কোনো ধরনের বিনিয়োগ বা স্পনসরশিপ করবে না। এটি শুধুমাত্র ডিভিডেন্ড ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।

কেন্দ্রীয় ডিভিডেন্ড হাব হিসেবে সিএমএসএফ-এর কার্যক্রম চালু হলে বিনিয়োগকারীরা স্বয়ংক্রিয় কর কর্তন, একক প্রত্যয়ন এবং সুশৃঙ্খল ডিভিডেন্ড বিতরণ ব্যবস্থার সুবিধা পাবেন। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং শেয়ারবাজারে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত কাঠামো গড়ে উঠবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ