ঢাকা, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

ভূমি আইন ২০২৪: খাজনা না দিলে জমি থাকবে না আপনার

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ১১:৪০:২৩
ভূমি আইন ২০২৪: খাজনা না দিলে জমি থাকবে না আপনার

জমির স্মার্ট কার্ড আসছে, তিন বছর বকেয়া থাকলে জমি হবে খাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভবিষ্যতে যদি কেউ টানা তিন বছর খাজনা না দেন, তাহলে সেই জমি আর তাঁর থাকবে না। সরকারের খাস খতিয়ানে যুক্ত হয়ে যাবে জমিটি। এমনই চমকপ্রদ ও কঠোর বিধান থাকছে নতুন ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৪’-এ। ভূমি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

নতুন এই আইনে জমির মালিকানা সুরক্ষা, ডিজিটাল রেকর্ড, খাজনা আদায়ে শৃঙ্খলা এবং জমি জালিয়াতি রোধে একাধিক যুগান্তকারী বিধান যুক্ত হচ্ছে।

স্মার্ট কার্ডে জমির মালিকানা

প্রতিটি জমির মালিককে দেওয়া হবে একটি ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ (সিএলও)’, অর্থাৎ ভূমি মালিকানা স্মার্ট কার্ড। এতে থাকবে:

ইউনিক নম্বর

কোড

মালিকের নাম, জমির তথ্য, দাগ-খতিয়ান

এই স্মার্ট কার্ড হবে জমির মালিকানার চূড়ান্ত দলিল। খাজনা পরিশোধ, জমি লেনদেন, নামজারি, এমনকি আদালতেও এটি মূল প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে।

খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত

নতুন আইনের সবচেয়ে কঠোর অংশ হচ্ছে—

টানা তিন অর্থবছর খাজনা পরিশোধ না করলে জমি খাস খতিয়ানে যুক্ত হবে।

অর্থাৎ, সরকার সেই জমিকে বাজেয়াপ্ত করে নিজের নামে নিবন্ধন করবে। তখন জমির আসল মালিক আর মালিক থাকবেন না।

জালিয়াতি করলে শাস্তি: জেল ও জরিমানা

জমির মালিকানা নিয়ে জালিয়াতি করলে এবার ছাড় নেই। নতুন আইনে বলা হয়েছে:

জাল কাগজে জমি দখলের চেষ্টা করলে

২ বছর পর্যন্ত জেল

বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা,

বা উভয় শাস্তি

এতে দীর্ঘদিনের জমি দখল ও জাল দলিল সংক্রান্ত দুর্নীতির রাশ টানবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।

কৃষিজমি অধিগ্রহণে কড়াকড়ি

সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে ঠিকই, কিন্তু—

দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের আগে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি লাগবে

অগ্রাধিকার দিতে হবে অনুর্বর ও কম ফলনশীল জমিকে

এর ফলে কৃষিজমির অবৈধ হ্রাস ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তনেও থাকছে শাস্তিসরকারের অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইন বহির্ভূত হবে

এক বিঘা পর্যন্ত জমি এর আওতার বাইরে

নিয়ম না মানলে হতে পারে—

এক বছরের জেল

বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

স্যাটেলাইট চিত্রে ভূমির মানচিত্র

ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জমির অবস্থান ও ব্যবহার চিহ্নিত করা হবে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ দিয়ে। এতে আলাদা করে বোঝা যাবে—

আবাসিক জমি

বাণিজ্যিক এলাকা

জলাভূমি

বনভূমি

কৃষি জমি ইত্যাদি

জমি বদল মানেই হালনাগাদ বাধ্যতামূলক

জমির মালিকানা বদল হলে সঙ্গে সঙ্গে করতে হবে—

নামজারি

সিএলও স্মার্ট কার্ড হালনাগাদ

নতুন মালিককে নির্ধারিত ফি দিয়ে তথ্য সংশোধন করতে হবে

এভাবে ডিজিটাল রেকর্ডে স্বচ্ছতা ও আপডেট বজায় রাখা যাবে।

বর্তমান নিয়মে কী ছিল?

বর্তমানে ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা দিতে হয় না, তবে ১০ টাকায় দাখিলা সংগ্রহ বাধ্যতামূলক। দাখিলা ছাড়া মালিকানা দাবিতে সমস্যায় পড়তে পারেন।

সরকার যা বলছে

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,

“এই আইন কার্যকর হলে জমি নিয়ে দুর্নীতি, ভুয়া মালিকানা, খাজনা ফাঁকি—সবই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। সাধারণ মানুষ নিজের জমি নিয়ে আরও সচেতন হবেন।”

এই আইনটি কার্যকর হলে শুধু জমি থাকলেই চলবে না, নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করাও বাধ্যতামূলক।নয়তো তিন বছর পর জমি আর আপনার থাকবে না—থাকবে সরকারের নামে খাস খতিয়ানে।

তাই আজ থেকেই দাখিলা সংগ্রহ করুন, খাজনা দিন, আর নিজের জমির মালিকানা নিশ্চিত করুন স্মার্ট কার্ডে।

FAQ ও উত্তর (একলাইনে):

প্রশ্ন: খাজনা না দিলে জমির কী হবে?

উত্তর: টানা তিন অর্থবছর খাজনা না দিলে জমি খাস খতিয়ানে চলে যাবে।

প্রশ্ন: জমির স্মার্ট কার্ড কী?

উত্তর: সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ (সিএলও), যা মালিকানার চূড়ান্ত প্রমাণ।

প্রশ্ন: জমি জালিয়াতির শাস্তি কী?

উত্তর: ২ বছর জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড।

প্রশ্ন: কৃষিজমি অধিগ্রহণে কী নতুন নিয়ম এসেছে?

উত্তর: দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন।

প্রশ্ন: জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে কী হবে?

উত্তর: সরকারের অনুমতি ছাড়া করলে এক বছর জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ