ঢাকা, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সূচক পতনের দিনে লেনদেন কমেছে ব্যাংক খাতে, আগ্রহ বস্ত্র ও কাগজে

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৯:৪৯:২৭
সূচক পতনের দিনে লেনদেন কমেছে ব্যাংক খাতে, আগ্রহ বস্ত্র ও কাগজে

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। সার্বিক সূচক কমলেও লেনদেনের চিত্রে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের পরিবর্তন। লেনদেনের নেতৃত্বে বরাবরের মতোই ব্যাংক খাত থাকলেও গতকালের তুলনায় এই খাতে লেনদেন কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। অপরদিকে, বস্ত্র এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং লেনদেন উভয়ই বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।

আজকের এবং গতকালের সেক্টরভিত্তিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে (উল্লেখ্য, সকল লেনদেন কোটি টাকায় রূপান্তরিত করা হয়েছে):

১. শীর্ষস্থানে থাকলেও কমেছে ব্যাংক খাতের দাপট:আজ ডিএসইতে মোট লেনদেনের শীর্ষে ছিল ব্যাংক খাত, যেখানে ১৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ২২.৮৮%। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে লেনদেন হয়েছে ১১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা (১৩.৬১%)। এই দুটি খাত মিলেই মোট লেনদেনের প্রায় ৩৬.৫ শতাংশ দখল করেছে।

তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, গতকালের তুলনায় এই প্রভাবশালী দুটি খাতেই লেনদেন কমেছে। গতকাল ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছিল ২৩২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, একদিনের ব্যবধানে এই খাতে লেনদেন কমেছে ৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। একইভাবে, ওষুধ ও রসায়ন খাতেও গতকালের ১২৭ কোটি ২০ লাখ টাকার তুলনায় আজ লেনদেন কমেছে প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বড় বিনিয়োগকারীরা এই খাতগুলো থেকে কিছুটা মুনাফা তুলে নিচ্ছেন অথবা নতুন বিনিয়োগে সতর্ক থাকছেন।

২. আগ্রহের কেন্দ্রে বস্ত্র এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাত:বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিম্নমুখী হলেও কিছু খাতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে বস্ত্র খাত। গতকাল এই খাতে যেখানে ৬২ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল, সেখানে আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ কোটি ১০ লাখ টাকায়। অর্থাৎ, একদিনেই এই খাতে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২৭%।

একইভাবে, কাগজ ও মুদ্রণ (Paper and Printing) খাতেও লেনদেনে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। গতকালের ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে আজ এই খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এই খাতে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৭১%। প্রকৌশল (Engineering) খাতেও লেনদেন সামান্য বেড়েছে।

৩. আগ্রহ হারিয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত:বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ (Fuel and Power) খাত। গতকাল এই খাতে ৮০ কোটি ৮০ লাখ টাকার বড় লেনদেন হলেও আজ তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আজকের দিনে এই খাতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, এই খাতের শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি সরিয়ে নিচ্ছেন।

গঠনমূলক পর্যবেক্ষণ ও সম্ভাব্য কারণ:

মুনাফা তুলে নেওয়া (Profit Booking): ব্যাংক এবং জ্বালানি খাতের শেয়ারের দাম সম্প্রতি বেশ ভালো অবস্থানে ছিল। টানা দুই দিনের সূচক পতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা হয়তো এই খাতগুলো থেকে মুনাফা তুলে নিয়ে নিজেদের অবস্থান নিরাপদ করছেন।

খাত পরিবর্তন (Sector Rotation): বিনিয়োগকারীরা বড় খাতগুলো থেকে পুঁজি সরিয়ে তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করছেন। বস্ত্র খাতে রপ্তানির ইতিবাচক খবর এবং কাগজ খাতের ভালো ব্যবসা করার সম্ভাবনা এই আগ্রহের পেছনে কাজ করতে পারে।

সতর্ক বিনিয়োগ: সার্বিক বাজার যখন নিম্নমুখী থাকে, তখন বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ার থেকে সরে এসে তুলনামূলকভাবে কম দামি বা undervalued শেয়ারের দিকে ঝোঁকেন। আজকের লেনদেনের চিত্রে এই প্রবণতার কিছুটা প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

সার্বিকভাবে, ডিএসইর সূচক পতন হলেও অভ্যন্তরীণ লেনদেনের চিত্র একটি জীবন্ত বাজারের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে বিনিয়োগকারীরা স্থির না থেকে প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পরিবর্তন করছেন। ব্যাংক খাতের আধিপত্য থাকলেও বস্ত্র ও অন্যান্য ছোট খাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি বাজারের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। এটি প্রমাণ করে যে, বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট খাতের সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছেন। আগামী দিনগুলোতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে কি না, তা দেখার বিষয় হবে।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ