ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

ক্রিকেট দুনিয়ায় শোকের কালো ছায়া: মারা গেলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ১১:২৮:৫২
ক্রিকেট দুনিয়ায় শোকের কালো ছায়া: মারা গেলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রিকেট বিশ্বের আকাশ থেকে ঝরে পড়ল আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বিদায় নিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার, সাবেক অধিনায়ক ও কোচ বব সিম্পসন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রিকেট দুনিয়ায়।

সিম্পসনের স্মরণে অস্ট্রেলিয়া–দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলোয়াড়রা কালো বাহুবন্ধনী পরবেন এবং আজকের ওয়ানডে ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করবে দুই দল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে, তার অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

একসাথে তিন চরিত্রে উজ্জ্বল নায়ক

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসে একসাথে ওপেনার, স্লিপ ফিল্ডার এবং কার্যকর লেগ স্পিনার—তিন ভূমিকায় যে কজন কিংবদন্তি জায়গা করে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে সবার উপরে থাকবেন সিম্পসন।১৯৫৭ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলে তিনি ৬২টি টেস্টে সংগ্রহ করেন ৪৮৬৯ রান। গড় ছিল ৪৬.৮১, সেঞ্চুরি ১০টি, হাফ সেঞ্চুরি ২৭টি। সর্বোচ্চ ইনিংস ৩১১ রান। ফিল্ডিংয়ে ১১০ ক্যাচ ও বোলিংয়ে ৭১ উইকেট শিকার তার বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ বহন করে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ। ২৫৭ ম্যাচে করেছেন ২১ হাজারের বেশি রান, আছে ৬০টি সেঞ্চুরি ও ১০০ হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৫৯। সঙ্গে ৩৪৯ উইকেট ও ৩৮৩ ক্যাচ।

অধিনায়ক ও দারুণ জুটি

সিম্পসন ৩৯ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দেন। বিল লরির সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি এখনও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জুটিগুলোর একটি। বিশেষত ১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৮২ রানের রেকর্ড উদ্বোধনী জুটি আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে ভাসমান।

অবসর ভাঙার ঘটনাও তাকে আলাদা জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। ৪১ বছর বয়সে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের সময়ে দল যখন অভিজ্ঞতার সংকটে ভুগছিল, তখন আবারও মাঠে ফিরে নেতৃত্ব নেন তিনি। তার অধিনায়কত্বেই ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় অস্ট্রেলিয়া।

সোনালি যুগের স্থপতি

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচ হিসেবে তার অবদান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় তোলে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে তিনি এনে দেন ১৯৮৭ বিশ্বকাপ জয়, ১৯৮৯ সালে ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ জয় এবং ১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। বলা যায়, তার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আধুনিক সোনালি যুগ।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

অস্ট্রেলিয়া সরকার ১৯৭৮ সালে তাকে ‘অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’র সদস্য এবং ২০০৭ সালে ‘অফিসার অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে জায়গা করে নেন স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে, আর ২০০৬ সালে যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমে।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার শোকবার্তা

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড বলেন—

“বব সিম্পসন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের প্রকৃত মহাতারকা। খেলোয়াড়, অধিনায়ক, কোচ—সব ভূমিকাতেই তিনি ছিলেন অনন্য। অবসর ভেঙে আবারো দেশের নেতৃত্ব নেওয়া তার আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত। আর কোচ হিসেবে যে ভিত্তি তিনি গড়ে গিয়েছিলেন, সেটিই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে বিশ্বসেরা দলে পরিণত করেছে।”

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ