MD. Razib Ali
Senior Reporter
জাল দলিল শনাক্তকরণ: দলিল আসল না নকল জানুন চেনার সহজ উপায়
জমির স্বত্ব নির্ধারণ এবং কেনাবেচার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে জাল দলিল, নকল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং ভুয়া আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) হলো সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। জালিয়াত চক্র অনেক সময়ই প্রকৃত স্বত্বাধিকারীর পরিচয় ব্যবহার করে কোটি টাকার জমি গোপনে হস্তান্তর করে দেয়। এই ধরনের প্রতারণা থেকে ক্রেতাকে বাঁচতে হলে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
প্রতারকরা সাধারণত সেই জমিগুলোকেই নিশানা করে, যেগুলোর খাজনা দীর্ঘ সময় ধরে পরিশোধ করা হয়নি অথবা যা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে—অর্থাৎ যার কোনো তদারকি নেই। কুড়িগ্রামের বুড়িঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান এই প্রসঙ্গে গুরুতর সতর্কতা জারি করে বলেন, "যে জমির কোনো তদারকি নেই, সেই জমিই বেশি ঝুঁকিতে পড়ে। ভুয়া এনআইডি, জাল দলিল এমনকি নকল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) তৈরি করে প্রতারক চক্র জমি বেচাকেনা করে।"
তবে ক্রেতা যদি সতর্ক থাকেন, তবে তিনি নিজেই জাল দলিল শনাক্ত করতে পারেন। এখানে দলিল যাচাইয়ের জন্য ৯টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কৌশল তুলে ধরা হলো:
জাল দলিল সনাক্তকরণের ৯টি নিশ্চিত পদ্ধতি
১. দলিলের ভলিউম ও রেজিস্ট্রি নম্বর পরীক্ষা: সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রক্ষিত রেকর্ড অনুযায়ী বিক্রয় দলিলের সাল, সংশ্লিষ্ট ভলিউম এবং রেজিস্ট্রি নম্বর যথাযথভাবে মিলিয়ে দেখুন। প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য অফিসে লিখিত আবেদন করে সত্যতা নিশ্চিত করা উচিত।
২. সরকারি সিলমোহর ও স্বাক্ষরের প্রামাণ্যতা: দলিলে ব্যবহৃত সরকারি সিলমোহর এবং স্বাক্ষরগুলো প্রকৃত কি না তা যাচাই করুন। বিশেষত, যদি সরকারি ছুটির দিনে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়ে থাকে, তবে বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে।
৩. স্থানীয়দের মাধ্যমে আসল স্বত্বাধিকারী সনাক্তকরণ: একই জমির একাধিক মালিক দেখানো হলে সতর্ক থাকতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জমির প্রকৃত মালিক বা স্বত্বাধিকারী সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
৪. খতিয়ান ও নামজারির ধারাবাহিকতা যাচাই: সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে খতিয়ান এবং নামজারির পরম্পরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করুন। যাচাইকালে জমির দাগ নম্বর, ঠিকানা এবং পরিমাণের নির্ভুলতা মিলিয়ে নেওয়া অপরিহার্য।
৫. আমমোক্তারনামায় উভয় পক্ষের ছবি সংযুক্তি নিশ্চিতকরণ: জমি যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়, তবে অবশ্যই দলিলের সঙ্গে আমমোক্তার বা ক্ষমতা দাতা ও গ্রহীতা—উভয় পক্ষের ছবি সংযুক্ত আছে কি না তা নিশ্চিত করুন।
৬. বিক্রয়ের তারিখ ও দখল হস্তান্তরের সামঞ্জস্য: দলিলের তৈরির তারিখ এবং বাস্তবে জমি ক্রেতার কাছে হস্তান্তরের সময়ের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি আছে কি না তা যাচাই করা জরুরি।
৭. দলিল লেখকের তথ্য যাচাইকরণ: দলিলটি কোন লেখক তৈরি করেছেন, তার নাম ও পরিচয় জেনে নিন। প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর পরিচয় ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
৮. পুরনো ভায়া দলিলের সত্যাসত্য নিরূপণ: বিক্রেতার কাছ থেকে পূর্ববর্তী সব ভায়া দলিলসহ অন্যান্য নথি সংগ্রহ করুন এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সেসবের সঠিকতা নিশ্চিত করুন।
৯. স্ট্যাম্পের উৎস এবং সিরিয়াল নম্বর পরীক্ষা: দলিল তৈরির জন্য ব্যবহৃত স্ট্যাম্প কোথা থেকে ক্রয় করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। সিরিয়াল নম্বর দেখে স্ট্যাম্পের উৎসের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব।
মূল্যবান জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতার জন্য চূড়ান্ত পরামর্শ
জমি কেনার আগে শুধুমাত্র দলিল দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। উপরোক্ত প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আইনজীবী ও ভূমি অফিসের পেশাদারদের পরামর্শ নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য সচেতনতার অভাব শুধু বিপুল অর্থই নয়, আপনার মূল্যবান সময় ও মানসিক প্রশান্তিও কেড়ে নিতে পারে।
জিজ্ঞাসা ও উত্তর (FAQ)
১. প্রশ্ন: জমি কেনার আগে দলিলপত্রের সঠিকতা কীভাবে যাচাই করা যেতে পারে?
উত্তর: সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের ভলিউম নম্বর, রেজিস্ট্রি নম্বর এবং সাল মিলিয়ে দেখা যায়। এছাড়াও, ভূমি অফিস থেকে নামজারি ও খতিয়ানের ধারাবাহিকতা যাচাই করা আবশ্যক।
২. প্রশ্ন: জাল দলিল সহজে চেনার প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর: সরকারি ছুটির দিনে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, পূর্ববর্তী ভায়া দলিলের অনুপস্থিতি এবং ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের উৎস যাচাই করা জাল দলিল চেনার প্রাথমিক উপায়।
৩. প্রশ্ন: আমমোক্তারনামার মাধ্যমে জমি হস্তান্তর হলে ক্রেতার কোন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি?
উত্তর: আমমোক্তারনামার মাধ্যমে জমি হস্তান্তর হলে, দলিলে অবশ্যই ক্ষমতা দাতা ও গ্রহীতা—উভয় পক্ষের ছবি সংযুক্ত আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে।
৪. প্রশ্ন: জমি কেনার সময় মালিকানা যাচাইয়ের জন্য স্থানীয়দের ভূমিকা কী?
উত্তর: স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে একই জমির একাধিক মালিকানা দেখানো হচ্ছে কি না এবং আসল স্বত্বাধিকারীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৫. প্রশ্ন: দলিলটি আসল কি না, তা যাচাই করার জন্য কোন সরকারি অফিসে যাওয়া প্রয়োজন?
উত্তর: দলিল আসল কি না, তা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এবং খতিয়ান ও নামজারির ধারাবাহিকতা যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে যাওয়া প্রয়োজন।
৬. প্রশ্ন: স্ট্যাম্পের উৎস যাচাই করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: দলিল তৈরির জন্য ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের সিরিয়াল নম্বর দেখে তার উৎস নিশ্চিত করা যায়। বৈধ উৎস থেকে কেনা হয়েছে কি না, তা জালিয়াতি এড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
৭. প্রশ্ন: দলিল লেখকের তথ্য যাচাই করা কেন জরুরি?
উত্তর: দলিল লেখক প্রকৃত ব্যক্তি কি না এবং তাঁর পরিচয় ও তথ্য সঠিক কি না, তা সরেজমিনে যাচাই করা উচিত। এতে দলিলের বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
মো: রাজিব আলী/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: বিশাল লিড বাংলাদেশের, দেখেনিন স্কোর
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: লিড নিল বাংলাদেশ, দেখেনিন সর্বশেষ স্কোর
- বিএনপির ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! আসছে নতুন ১১ প্রার্থী
- ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! ১১ আসনে নতুন প্রার্থীবিএনপির
- শেয়ারবাজারে বড় খবর: বিএসইসি’র ‘মার্জিন বিধিমালা ২০২৫’ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
- আইএমএফের কড়া বার্তা: ঝুঁকিতে দেশের ১৬ ব্যাংক
- চলছে বাংলাদেশ বনাম নেপাল ম্যাচ: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- ১২ হাজার টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- বাংলাদেশ বনাম নেপাল: ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- ২৮ প্রতিষ্ঠানের ‘নেগেটিভ ইক্যুইটি’ ও ‘লস প্রভিশন’ সমন্বয়ের সময় বাড়ল, রইল শর্ত
- ব্রাজিল বনাম সেনেগাল: কখন, কোথায় ও কবে ম্যাচ, জানুন সময়সূচি
- আজ বাংলাদেশ বনাম নেপাল ম্যাচ: খেলাটি কখন, কোথায় ও কিভাবে দেখবেন লাইভ
- সোনার দাম: এক নজরে জেনে নিন ১৮,২১ ও ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- বাংলাদেশ বনাম নেপাল: লস টাইমে গোল, অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় দিন শেষ: জয়ের ১৬৯, সাদমান ও মুমিনুলের ফিফটি