Alamin Islam
Senior Reporter
মিথ্যা মামলার ফাঁদ: কীভাবে বাঁচবেন, কী বলছে বাংলাদেশের আইন? জানুন
কল্পনাতীত এক পরিস্থিতি—যখন কোনো বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্যে আপনার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ভিত্তিহীন একটি মামলা। সামাজিক মর্যাদার পতন, পেশাগত জীবনে মারাত্মক ক্ষতি, তীব্র মানসিক যন্ত্রণা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত আর্থিক বোঝাসহ সবকিছু যেন রাতারাতি ওলটপালট হয়ে যায়। তবে আশার কথা এই যে, দেশের আইনি কাঠামো এই ধরনের হয়রানির মুখে আপনাকে নিঃস্ব হতে দেয় না। বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধি এবং দণ্ডবিধিতে এমন কিছু শক্তিশালী বিধান সন্নিবেশিত আছে, যা ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেই আপনি নিতে পারেন সুদূরপ্রসারী আইনগত পদক্ষেপ। যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে, অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা এমনকি ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও সম্মুখীন হতে পারেন।
যখন মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়
আপনার ওপর আরোপিত অভিযোগের যদি তদন্ত পর্যায়ে কোনো সত্যতা না মেলে, অথবা বিচারিক প্রক্রিয়ার পর আপনি যদি আদালত কর্তৃক নির্দোষ ঘোষিত হন, তবে মামলাটি 'ভিত্তিহীন' বা 'মিথ্যা' হিসেবে স্বীকৃত হবে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, অভিযোগকারী (বাদী) নিজেই এখন অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন।
এই অবস্থায় আপনি তার বিরুদ্ধে মানহানির জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন।
একই সঙ্গে, 'ফলস প্রসিকিউশন' বা মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের দায়ে জেল এবং আর্থিক জরিমানার আবেদনও পেশ করা যেতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সময় ও উচ্চ আদালতে আপিল
মিথ্যা মামলার দায় থেকে সম্পূর্ণভাবে অব্যাহতি পাওয়ার পরেই কেবলমাত্র বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।
যদি কোনো কারণে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আপনার অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান, তবে আপনি ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৭৬(বি) ধারা মোতাবেক উচ্চতর আদালতে আপিলের সুযোগ পাবেন।
প্রয়োজন অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন বা পুনর্বিবেচনার আবেদনও করা যেতে পারে।
আদালতের তাৎক্ষণিক প্রতিকার: ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা
মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত প্রতিকার দিতে এবং বাদীকে শাস্তি দিতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটগণ কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি ২৫০ ধারা: ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারীকে ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। এই ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ৩০ দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
২০৫(৫) ধারা: এই বিধানে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাবাস অথবা ৩ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে।
১৯৫ ধারা: এই ধারার অধীনে, ম্যাজিস্ট্রেট হয় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন অথবা অভিযোগটি প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিষ্পত্তির জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন।
দণ্ডবিধিতে মিথ্যা অভিযোগের গুরুতর ফল
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি (Penal Code) মিথ্যা মামলা দায়ের এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকে অত্যন্ত গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।
দণ্ডবিধি ২১১: মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য সরাসরি শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
দণ্ডবিধি ১৯৩: বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
দণ্ডবিধি ১৯৪: যদি মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, তবে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারীও মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
স্পর্শকাতর মামলায় বাড়তি কঠোরতা
কিছু বিশেষ আইনের অধীনে মিথ্যা অভিযোগ আনলে শাস্তির মাত্রা আরও তীব্র হয়।
শিশু আইন ২০১৩ (৮৩ ধারা): ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে লক্ষ্য করে মিথ্যা মামলা করলে, বাদীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়।
গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (৯(ক) ধারা): গ্রাম আদালতে মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (১৭ ধারা): যৌতুক দাবি বা ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়ে মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে, অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
মিথ্যা মামলার ভয়াবহতা কেবল ভুক্তভোগীর জীবনকেই দুর্বিষহ করে না; এটি সামগ্রিকভাবে বিচারিক ব্যবস্থার ওপরও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। সুতরাং, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আইনি বিধানগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। সঠিক তথ্য-প্রমাণ ও দৃঢ় আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে মিথ্যা মামলার মারাত্মক পরিণতি প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং পুনরুদ্ধার করা সম্ভব আপনার সামাজিক সম্মান, মানসিক স্থিরতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) এবং উত্তর
১. মিথ্যা মামলার ভুক্তভোগী কখন বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবেন?
মিথ্যা মামলায় তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না মিললে, বা আদালত থেকে আপনি খালাস পাওয়ার পরই বাদীর বিরুদ্ধে মানহানি বা ফলস প্রসিকিউশনের অভিযোগ এনে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
২. মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য দণ্ডবিধিতে কী ধরনের শাস্তির বিধান আছে?
দণ্ডবিধি ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য সরাসরি শাস্তির বিধান রয়েছে। এছাড়াও মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে দণ্ডবিধি ১৯৩ ধারায় সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
৩. ম্যাজিস্ট্রেট কি মিথ্যা মামলার ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন?
হ্যাঁ। ফৌজদারী কার্যবিধি ২৫০ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট মিথ্যা মামলার বাদীকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিতে পারেন, যা পরিশোধ না করলে ৩০ দিনের কারাদণ্ড হতে পারে।
৪. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌতুক বা ধর্ষণের মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে কী শাস্তি হতে পারে?
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌতুক বা ধর্ষণের মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে ১৭ ধারায় অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
৫. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড হয়, তবে সাক্ষ্যদানকারীর শাস্তি কী হবে?
দণ্ডবিধি ১৯৪ অনুযায়ী, মিথ্যা সাক্ষ্যের কারণে নিরপরাধ কারও মৃত্যুদণ্ড হলে, সাক্ষ্যদানকারীও মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
তানভির ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: বিশাল লিড বাংলাদেশের, দেখেনিন স্কোর
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: লিড নিল বাংলাদেশ, দেখেনিন সর্বশেষ স্কোর
- ২৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন! ১১ আসনে নতুন প্রার্থীবিএনপির
- শেয়ারবাজারে বড় খবর: বিএসইসি’র ‘মার্জিন বিধিমালা ২০২৫’ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
- আইএমএফের কড়া বার্তা: ঝুঁকিতে দেশের ১৬ ব্যাংক
- ১২ হাজার টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- চলছে বাংলাদেশ বনাম নেপাল ম্যাচ: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- বাংলাদেশ বনাম নেপাল: ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- ২৮ প্রতিষ্ঠানের ‘নেগেটিভ ইক্যুইটি’ ও ‘লস প্রভিশন’ সমন্বয়ের সময় বাড়ল, রইল শর্ত
- ব্রাজিল বনাম সেনেগাল: কখন, কোথায় ও কবে ম্যাচ, জানুন সময়সূচি
- আজ বাংলাদেশ বনাম নেপাল ম্যাচ: খেলাটি কখন, কোথায় ও কিভাবে দেখবেন লাইভ
- সোনার দাম: এক নজরে জেনে নিন ১৮,২১ ও ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- বাংলাদেশ বনাম নেপাল: লস টাইমে গোল, অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় দিন শেষ: জয়ের ১৬৯, সাদমান ও মুমিনুলের ফিফটি
- রহিমা ফুড ও ইভেন্স টেক্সটাইল ও জেএমআই হসপিটালের ইপিএস প্রকাশ