ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিলুপ্তির মুখে ৮ আর্থিক প্রতিষ্ঠান: শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ২১:৫৩:৩৪
বিলুপ্তির মুখে ৮ আর্থিক প্রতিষ্ঠান: শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

ঢাকা: দেশের আর্থিক খাতে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বড় পদক্ষেপের কারণে। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে হাজারো সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের পুঁজি হারানোর আশঙ্কা এখন প্রবল।

বিলুপ্তির তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো:

যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তির খবর শেয়ারবাজারকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেগুলো হলো— ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রাইম ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস।

বিনিয়োগকারীদের করুণ পরিণতি:

এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। আর্থিক অনিয়ম ও ব্যাপক খেলাপি ঋণের কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় মেটানোর মতো সম্পদ না থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিতভাবে ক্ষতির শিকার হবেন। তাদের ভাষায়, বিলুপ্তির প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীরা সবশেষে থাকেন এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের পুঁজি ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, "যদি কোম্পানিগুলো আমানতকারীদের অর্থই ফেরত দিতে না পারে, তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কীভাবে তাদের মূলধন ফিরে পাওয়ার আশা করতে পারেন?" তারা দায়ী পরিচালক ও স্পন্সরদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।

শেয়ারবাজারে ধস এবং নীরব বিএসইসি:

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তালিকাভুক্ত এই ৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত সপ্তাহেই শেয়ারগুলোর দাম ১৯ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে অনেক শেয়ারই অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে, এমনকি কোনো কোনোটি ২ টাকারও কমে নেমে এসেছে।

তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এখনও বিলুপ্তির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানালে তারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করবেন। কিন্তু বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশ্বাস, দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার:

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অবশ্য আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, "তাদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে এবং স্পন্সর-পরিচালকদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।" তিনি আরও জানান, বিলুপ্তির প্রক্রিয়া ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাক্ট ২০২৩ অনুযায়ী হাইকোর্টের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হবে।

আরও পড়ুন:

এক কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর

বিনিয়োগকারীদের চাহিদার ঝড়ে উড়ছে ৭ কোম্পানির শেয়ার

দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল:

এই আর্থিক সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। বহু বছর ধরেই এসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছিল। এর বড় উদাহরণ হলো প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) জালিয়াতি, যিনি চারটি এনবিএফআই থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার করেছিলেন। এই ঘটনা আর্থিক খাতের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির চিত্রই তুলে ধরে।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ