ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ারবাজারে আসছে বড় পরিবর্তন: ডিএসইর রেকর্ড ডেট প্ল্যান!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ০০:১৫:৫৬
শেয়ারবাজারে আসছে বড় পরিবর্তন: ডিএসইর রেকর্ড ডেট প্ল্যান!

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পথে হাঁটছে। রেকর্ড ডেটে শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখার পুরনো প্রথা বাতিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএসই, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বাজারের দক্ষতা বৃদ্ধি, লেনদেন প্রক্রিয়ার বাধা দূর করা এবং দেশের শেয়ারবাজারকে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করা।

এই ambitious পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ডিএসই গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে ডিপোজিটরি (ইউজার) রেগুলেশনস ২০০৩ এবং সেটেলমেন্ট অব ট্রানজেকশনস রেগুলেশনস ২০১৩ সংশোধনের অনুরোধ করা হয়েছে, যা রেকর্ড ডেটেও স্পট ট্রেডিং চালু করার পথ প্রশস্ত করবে।

বর্তমান নিয়মের সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রস্তাবনার সুবিধা

বর্তমানে, বাংলাদেশে কোনো কোম্পানির রেকর্ড ডেট থাকলে সেদিন সেই নির্দিষ্ট শেয়ারের লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। রেকর্ড ডেট হলো সেই নির্ণায়ক তারিখ যা নির্ধারণ করে কোন শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বা বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) ভোট দিতে পারবেন এবং ডিভিডেন্ড, রাইটস শেয়ার বা বোনাস শেয়ারের মতো কর্পোরেট সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হবেন।

ডিএসইর নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, রেকর্ড ডেটে শেয়ার লেনদেন চালু থাকলেও একটি স্পষ্ট বিভাজন থাকবে: বিক্রেতা তাদের শেয়ারের জন্য কর্পোরেট সুবিধা পাবেন, কিন্তু নতুন ক্রেতা কোনো সুবিধা পাবেন না। ডিএসই মনে করছে, এই সুদূরপ্রসারী সংস্কার দেশের শেয়ারবাজারে এক বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং লেনদেন ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করবে।

আরও পড়ুন:

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: বি-ক্যাটাগরির ঝুঁকি, ৬ শেয়ারে অবিশ্বাস্য মুনাফা

লভ্যাংশ পেল ৩ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা

৫ ব্যাংকের শেয়ার বাজেয়াপ্ত: সরকারি সিদ্ধান্তে শেয়ারহোল্ডাররা দিশেহারা!

শেয়ারবাজারের সব গুরুত্বপূর্ণ খবর এখানে

বাজার বিশেষজ্ঞ ও ডিএসইর অভিমত

ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এই উদ্যোগের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে আমাদের শেয়ারবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রেকর্ড ডেটে শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকে না; এটি মূলত একটি প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের বিষয়।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “লেনদেন বন্ধ না থাকলে বাজারের তারল্য বাড়বে এবং সামগ্রিক লেনদেনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।”

ইমন বর্তমান পদ্ধতির একটি বড় সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন: “আমাদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে ৩৬৫টি। যদি প্রতিটি কোম্পানির শেয়ার বছরে একদিন করে লেনদেন বন্ধ থাকে, তাহলে ৩৬৫ দিন প্রয়োজন। কিন্তু বছরে আমরা মাত্র ২২০-২২৫ দিন লেনদেন করি। এর ফলে প্রায়শই একই দিনে একাধিক কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকে, যা বাজারের টার্নওভার কমিয়ে দেয় এবং বিনিয়োগকারীদের লেনদেন করার সুযোগ সীমিত করে।”

প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি এবং আশার আলো

ডিএসই তাদের চিঠিতে নিশ্চিত করেছে যে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ (সিডিবিএল) রেকর্ড ডেটে লেনদেন চালু করার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। একই সাথে, ব্যাক-অফিস এবং ওএমএস ভেন্ডররাও প্রয়োজনীয় সিস্টেম পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ডিএসই।

বাজার সংশ্লিষ্ট মহল এই প্রস্তাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তাদের মতে, গত কয়েক বছরে বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়ায় বাজার কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। তারা আরও যোগ করেন যে উন্নত বিশ্বের শেয়ারবাজারগুলোতে লেনদেন বন্ধ না রেখেই বিনিয়োগকারীদের কর্পোরেট সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করা সম্ভব। যদি বাংলাদেশের বাজারেও এমন ব্যবস্থা চালু করা যায়, তবে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে, বাজারের কার্যক্রম আরও সচল হবে এবং দেশের শেয়ারবাজার একটি আধুনিক ও গতিশীল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত হবে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ