Alamin Islam
Senior Reporter
শেয়ারবাজারে ব্যাংকের আস্থা: বিনিয়োগে নতুন রেকর্ড
দেশের শ্লথ অর্থনীতির গতি এবং বিনিয়োগের সীমিত সুযোগের মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকগুলোর একক শেয়ারবাজার এক্সপোজার তাদের মোট মূলধনের ১৫.২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮.১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
একই সময়ে, ব্যাংক ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত এক্সপোজারও ২৩.২৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ইতিবাচক প্রবণতা দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে শেয়ারবাজারে নতুন গতি আনতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
কেন বাড়ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ?
ব্যাংকাররা মনে করছেন, শেয়ারবাজার যখন তুলনামূলক নিম্নমুখী ছিল, তখন ব্যাংকগুলো কৌশলগত বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। এর ফলে মূলধনী মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি লভ্যাংশ আয়ের পথও সুগম হয়েছে। মার্চে ডিএসইএক্স সূচক ৫,২১৯.১৬ পয়েন্টে থাকলেও, ১১ সেপ্টেম্বরে তা ৫,৫২৩.৭৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে – যা ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের প্রতি আস্থার প্রতিফলন।ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এককভাবে তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ এবং সমন্বিতভাবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ এই আইনানুগ সীমার মধ্যেই রয়েছে, যা তাদের বিনিয়োগকে নিরাপদ পরিসরে রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক। তবে, যেকোনো বিনিয়োগের মতোই এখানেও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকা অপরিহার্য।
বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি শেয়ারবাজার কার্যক্রমে জড়িত। ২০২৪ সালে ডিএসইর বাজার মূলধনে ব্যাংকগুলোর অবদান পূর্ববর্তী বছরের ১৫.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
অতীতের শিক্ষা এবং বর্তমানের সতর্কতা
২০০৯ সালের শেয়ারবাজার ধসের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাংকগুলো শিক্ষা নিয়েছে। সে সময় আইনসম্মত সীমার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে ২০১০-১১ সালে বাজার বিপর্যয় ঘটেছিল। তবে বর্তমানে, ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার আইনানুগ সীমার মধ্যে রয়েছে এবং ধাপে ধাপে বাড়ছে, যা একটি সতর্ক ও পরিমিত বিনিয়োগ পদ্ধতির ইঙ্গিত দেয়।
বাজার বিশ্লেষকরা এই বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, অর্থনীতির ধীরগতি, ঋণের সীমিত চাহিদা এবং বাজারে অতিরিক্ত তারল্যের কারণে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারকে একটি বিকল্প বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়লে বাজারের স্থিতিশীলতা ও আস্থা দুটোই বৃদ্ধি পায়, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য শুভ।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও টেকসই কৌশল
যদিও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ inherently ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যাংকগুলোর মতো শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাজারের দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একদিকে যেমন মুনাফা অর্জন করতে পারে, অন্যদিকে বাজারকেও স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
তাদের মতে, ব্যাংকগুলো যদি স্বল্পমেয়াদী লাভের পরিবর্তে টেকসই বিনিয়োগ কৌশল অনুসরণ করে, তবে এটি পুরো আর্থিক ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তিশালী অবলম্বন হয়ে উঠবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হবে। সামগ্রিকভাবে, ব্যাংকগুলোর এই বর্ধিত বিনিয়োগ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, যা বাজারের গভীরতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আব্দুর রহিম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভরিতে ১৩,০৯৯ টাকা কমলো স্বর্ণের দাম, ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি কত
- আবারও এক লাফে কমলো সোনার দাম
- রবি আজিয়াটার তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ: রেকর্ড নিট মুনাফা
- রেকর্ড নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করলো ওয়ালটন
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান: ডিএলএস পদ্ধতিতে শেষ হলো ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- একলাফে কমলো ভরিতে ১৩,০৯৯ টাকা স্বর্ণের দাম, আজ ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি কত
- ২১ কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- ১৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে দুই ব্রোকারেজ হাউসের ট্রেডিং লাইসেন্স বাতিল করল ডিএসই
- ব্যাপক হারে কমলো সোনার দাম, স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা
- ৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা: রেকর্ড মুনাফায় কোহিনূর কেমিক্যালস
- রেকর্ড মুনাফায় কোহিনূর কেমিক্যালস, ১৪ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- ১৮ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- চলছে বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ: সরাসরি দেখুন (Live)
- মার্জিন ঋণ বিধিমালায় আমূল সংস্কার: আবারও অস্থির শেয়ারবাজার