ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে বেপরোয়া মার্জিন ঋণ: বড় সংকটে মার্চেন্ট ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১২:৩০:৫৩
শেয়ারবাজারে বেপরোয়া মার্জিন ঋণ: বড় সংকটে মার্চেন্ট ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা দীর্ঘদিনের। এর মূলে রয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা এবং আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, যা বাজারকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের মতো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সঠিক মূল্যায়ন ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ ছাড়াই নির্বিচারে মার্জিন ঋণ বিতরণ করে বিনিয়োগকারী ও নিজেদের আর্থিক অবস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। বর্তমানে এই জটিল অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ প্রায় অদৃশ্য বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের ঋণ কেলেঙ্কারি:

জিএসপি ফাইন্যান্সের অধীনস্থ মার্চেন্ট ব্যাংক জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের কার্যক্রম সম্প্রতি গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এত বিপুল পরিমাণে নিয়ম বহির্ভূত মার্জিন ঋণ বিতরণ করেছে যে, এখন তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, এই ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতা বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য ইতোমধ্যেই তলানিতে নেমে এসেছে।

নিরীক্ষকের উদ্বেগজনক প্রতিবেদন:

সম্প্রতি প্রকাশিত নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের আর্থিক অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট ২৫৪টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের বিপরীতে মোট ৩৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা মার্জিন ঋণ দিয়েছে। বর্তমানে এসব বিও অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণরূপে নেগেটিভ ইক্যুইটিতে পরিণত হয়েছে, অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ সিকিউরিটিজের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। এই বিপুল ঋণের বিপরীতে হাতে থাকা সিকিউরিটিজের বর্তমান বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়, যা ঋণের তুলনায় নগণ্য।

সঞ্চিতি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম:

এহেন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের উচিত ছিল ৩৬২ কোটি ৭১ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা, যাতে সম্ভাব্য লোকসান মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬০ কোটি ১ লাখ টাকা সঞ্চিতি রেখেছে, যা প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে প্রায় ৩০২ কোটি ৭০ লাখ টাকা কম। এই কম সঞ্চিতি দেখানোর ফলে কাগজে-কলমে লোকসান কম এবং ইক্যুইটি বেশি দেখানো হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক চিত্রকে গোপন করেছে।

অন্যান্য আর্থিক অনিয়ম:

নিরীক্ষক জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের আর্থিক বিবরণীতে আরও বেশ কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের কাছে ২৬ লাখ টাকা পাওনা দেখানো হচ্ছে, যা আদায়যোগ্য নয়। তা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক বিবরণীতে এটিকে সম্পদ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে, যা হিসাবরক্ষণ নীতির পরিপন্থী।

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের নির্দেশনা অমান্য:

এছাড়া, জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনাও মানেনি। নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিট ছয় মাসের মধ্যে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করতে হয়। কিন্তু জিএসপি ইনভেস্টমেন্টে ২৫ কোটি টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিট ছয় মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকলেও এখনো তা শেয়ারে রূপান্তর করা হয়নি। এটি এফআরসি-র নিয়মাবলীর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বাজারের ওপর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ উদ্বেগ:

জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের মতো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বেপরোয়া মার্জিন ঋণ বিতরণ এবং আর্থিক অনিয়ম শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের কার্যকলাপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করে এবং সামগ্রিকভাবে বাজারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, এই নেতিবাচক প্রভাব আরও ব্যাপক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা অপরিহার্য।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ