ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ার কারসাজি: বিএসইসি’র কড়া তদন্তের নির্দেশ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৭:৪২:১৭
শেয়ার কারসাজি: বিএসইসি’র কড়া তদন্তের নির্দেশ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও লেনদেনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নড়েচড়ে বসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। এমন আকস্মিক নির্দেশনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিএসইসি’র নির্দেশ: সিন্ডিকেট চক্র চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে জিকিউ বলপেনের শেয়ারের দাম এবং লেনদেনের ধরনে অস্বাভাবিকতা স্পষ্ট। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কোনো স্বাভাবিক বাজার আচরণ নয়, বরং একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজির ফল হতে পারে। বিএসইসি এই গুরুতর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ডিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে।

বিএসইসি’র পরিচালক ও মুখপাত্র, জনাব আবুল কালাম, গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, "ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসার পরই কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।" তিনি আরও জানান যে, কমিশনের সার্ভিল্যান্স টিম প্রতিদিন জিকিউ বলপেনের লেনদেন কার্যক্রম এবং শেয়ারের মূল্য অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিএসইসি ডিএসইকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

অবিশ্বাস্য মূল্যবৃদ্ধি: ৫০ কার্যদিবসে প্রায় ২৭৫% লাফ!

বিএসইসি’র চিঠিতে প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৩ জুন জিকিউ বলপেনের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৫৯ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু মাত্র ৫০ কার্যদিবসের ব্যবধানে, অর্থাৎ আজ ২৯ সেপ্টেম্বর, সেই শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯৯ টাকা ৫০ পয়সায়। এর অর্থ হলো, এই স্বল্প সময়ে শেয়ারটির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩৯ টাকা ৭০ পয়সা, যা শতকরা হিসাবে ২৭৫.১৫ শতাংশের অবিশ্বাস্য উল্লম্ফন।

অস্বাভাবিকতার নেপথ্যে: স্বল্প মূলধন ও লোকসানি কোম্পানির চিত্র

বাজার বিশ্লেষকরা এই অস্বাভাবিক উত্থানকে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, জিকিউ বলপেনের মতো একটি স্বল্প মূলধনী কোম্পানির (পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা) ক্ষেত্রে এমন আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি কোনো স্বাভাবিক অর্থনৈতিক যুক্তিতে সম্ভব নয়। সাধারণত, অল্প সংখ্যক শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।

কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতিও এই অস্বাভাবিকতাকে সমর্থন করে না। জিকিউ বলপেন গত তিন বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান গুনছে:

২০২৪ সাল: শেয়ারপ্রতি লোকসান ৩ টাকা ৫০ পয়সা

২০২৩ সাল: শেয়ারপ্রতি লোকসান ১২ পয়সা

২০২২ সাল: শেয়ারপ্রতি লোকসান ২ টাকা ৬৫ পয়সা

বাজারের একটি বড় অংশের অভিযোগ, জিকিউ বলপেনের প্রায় সমস্ত শেয়ারই বর্তমানে কারসাজিকারীদের হাতে কেন্দ্রীভূত। ফলস্বরূপ, তারা সামান্য লেনদেনের মাধ্যমেও ইচ্ছামতো শেয়ারের দাম বাড়িয়ে আকাশচুম্বী করতে সক্ষম হচ্ছে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ।

বিএসইসি’র এই কঠোর পদক্ষেপ শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ