ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে ভিন্ন দুই মেরু: এক শেয়ারে উৎসব, আরেক শেয়ারে সঙ্কট

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৫:০২:০৬
শেয়ারবাজারে ভিন্ন দুই মেরু: এক শেয়ারে উৎসব, আরেক শেয়ারে সঙ্কট

দেশের শেয়ারবাজারে এখন একইসাথে উৎসব আর সঙ্কটের ছবি। যেখানে একটি বীমা কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে উন্নীত হয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াচ্ছে, সেখানে আরেকটি কোম্পানি ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স: আস্থার নতুন ঠিকানা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের জন্য আজ থেকে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে উন্নীত হয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকেই এই নতুন ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করেছে নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার।

এই উন্নতির পেছনে রয়েছে কোম্পানির ধারাবাহিক আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি দায়বদ্ধতা। নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল, যা সফলভাবে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ডিভিডেন্ড প্রদানের এই নিয়মিততাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-কে কোম্পানিটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করতে উৎসাহিত করেছে।

‘এ’ ক্যাটাগরি মানেই হলো একটি কোম্পানি নিয়মিতভাবে ডিভিডেন্ড প্রদান করে এবং শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা পূর্ণ করে। এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থার এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে এর লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জনতা ইন্স্যুরেন্স: সঙ্কটের মুখে

অন্যদিকে, বীমা খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছে। কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) থেকে কোম্পানির শেয়ার নতুন ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করেছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, জনতা ইন্স্যুরেন্স ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল, যার মধ্যে ৬ শতাংশ ক্যাশ ও ৪ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। তবে কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই অনিয়মের কারণে ডিএসই কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করেছে। সাধারণত কোনো কোম্পানি যখন সময়মতো ডিভিডেন্ড প্রদান করতে পারে না, নিরীক্ষিত হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হয়, অথবা ধারাবাহিকভাবে ৬ মাসের বেশি উৎপাদন বন্ধ থাকে, তখন তাকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। এর ফলস্বরূপ কোম্পানিটির শেয়ারে লেনদেন কমে যায়, বিনিয়োগকারীর আস্থা হ্রাস পায় এবং বাজারে একটি নেতিবাচক সংকেত তৈরি হয়।

বাজারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের মতো কোম্পানির ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়া সামগ্রিক বাজারের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। এটি প্রমাণ করে যে সুশাসন ও নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদানে সক্ষম কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারে।

কিন্তু জনতা ইন্স্যুরেন্সের ‘জেড’-এ পতন পুরো বীমা খাতের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিনিয়োগকারীরা এখন আরও সতর্কভাবে বীমা খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কারণ এই ঘটনা দেখিয়ে দিল যে মুনাফা ঘোষণার পরও ডিভিডেন্ড প্রদানে ব্যর্থতা একটি কোম্পানির জন্য কতটা গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই দুই ভিন্ন চিত্র শেয়ারবাজারের গতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক তথ্য বিশ্লেষণের গুরুত্বকে আবারও তুলে ধরল।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ