ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ আতঙ্ক! ধসে ডিএসই, বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৫ ২১:২৮:২৪
শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ আতঙ্ক! ধসে ডিএসই, বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে গত পাঁচ দিনের রক্তক্ষরণের পর যে সাময়িক স্বস্তি এসেছিল, তা বুধবার আবারও তীব্র আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনের গুঞ্জন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করলে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৮১ পয়েন্টের বেশি কমে ৫,১৬২ পয়েন্টে নেমে আসে, যা দিনের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছায়।

দিনের শুরুর আশাবাদ দ্রুতই ফিকে হলো

বুধবার দিনের শুরুতে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, যা বিনিয়োগকারীদের মনে ক্ষণিকের জন্য আশা জাগিয়েছিল। প্রথম দেড় ঘণ্টায় সূচক ৫,২০৬ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেলেও, এই ঊর্ধ্বগতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দিনের শেষ ভাগে 'প্যানিক সেলিং' বা আতঙ্কিত হয়ে বিক্রির চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে, সূচক আবারও লাল রঙে (নেতিবাচক) শেষ হয়। এর আগের দিনে সূচক ৩০ পয়েন্ট কমেছিল, কিন্তু বুধবার বিক্রির চাপের ফলে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৬ কোটি টাকা বেশি।

মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনী ঘিরে উদ্বেগ

দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এক ধরনের ভীতি দ্বারা প্রভাবিত। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যেকোনো মুহূর্তে মার্জিন ঋণ বিধিমালা পাস করতে পারে। এই উদ্বেগ থেকেই অনেকে ঝুঁকি কমাতে আগাম শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাখ্যা করেন, "যদি বিধিমালা সংশোধন হয়, তাহলে হঠাৎ করে অনেক শেয়ার মার্জিন ঋণের অযোগ্য হয়ে পড়বে। ফলে যেসব শেয়ারে ইতিমধ্যেই ঋণ দেওয়া আছে, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করে সমন্বয় করতে হবে। এতে বাজারে বিক্রির চাপ অনিবার্যভাবে বাড়বে।"

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে কী আছে?

মার্জিন ঋণ বিধিমালার সংশোধিত খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে যে, শুধুমাত্র ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারগুলোই মার্জিন ঋণের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। এর জন্য শর্ত হলো: শেয়ারের পিই রেশিও ৩০-এর নিচে থাকতে হবে এবং ফ্রি-ফ্লোট বাজারমূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা হতে হবে।

অন্যদিকে, ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলো মার্জিন ঋণের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে। এমনকি ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার হলেও, যদি সেগুলোর পিই রেশিও বেশি হয় অথবা বাজারমূলধন কম হয়, তাহলে সেগুলোও ঋণযোগ্য হবে না।

এই প্রস্তাবনার ফলে বাজারের সিংহভাগ শেয়ার হঠাৎ করে মার্জিন ঋণের অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মন্তব্য করেছেন, "বাজার এখন নীতিগত ধোঁয়াশার মধ্যে ঘুরছে। বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন না যে এই পরিবর্তন তাদের জন্য লাভজনক হবে নাকি বিপর্যয় ডেকে আনবে।"

বিএসইসির আশ্বাস: অস্থিরতা নয়, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা লক্ষ্য

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, "বিএসইসির লক্ষ্য বাজারকে অস্থিতিশীল করা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। আমরা তাড়াহুড়ো করে বিধিমালা পাসের মাধ্যমে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করতে চাই না।"

তিনি আরও জানান, নতুন নীতিমালার ফলে যেসব শেয়ার মার্জিন ঋণের আওতার বাইরে চলে যাবে, সেগুলোর সমন্বয়ের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত: স্বচ্ছতার অভাবই আতঙ্কের মূল কারণ

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মার্জিন ঋণ বিধিমালার সংস্কার বাজারে স্বচ্ছতা আনতে পারলেও, বর্তমানে যোগাযোগ ও সময়োপযোগী ব্যাখ্যার অভাবেই মূলত আতঙ্ক বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বিএসইসিকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে, এই সংশোধন কাদের জন্য, কীভাবে উপকার আনবে এবং কখন থেকে কার্যকর হবে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ