ঢাকা, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সবুজ সংকেত পেলেন ৫ জন: ২৮ আসন নিয়ে বিএনপি জোটের শেষ সিদ্ধান্ত

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৬ ১২:৪৯:১৫
সবুজ সংকেত পেলেন ৫ জন: ২৮ আসন নিয়ে বিএনপি জোটের শেষ সিদ্ধান্ত

দ্বিতীয় ধাপে ২৭২টি আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমানে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য সংরক্ষিত অবশিষ্ট ২৮টি আসনের ভাগ্য দ্রুত নির্ধারণের চেষ্টা করছে। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, এই আসনগুলোর সিংহভাগই জোটের অংশীদারদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তবে কিছু আসন অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেও ফাঁকা রয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বেশ কয়েকটি মিত্র দলের শীর্ষ নেতার মধ্যে হতাশা এবং বিস্ময় দেখা দিয়েছে; কারণ তাদের মধ্যে কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে নিজ নিজ আসনে ভোটের জন্য সক্রিয় প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।

নির্বাচনী প্রতীক বিধি নিয়ে কৌশলগত জটিলতা

বিএনপি নেতাদের মতে, আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে মিত্র দলের আসন প্রত্যাশার চেয়েও বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) একটি সংশোধনী। এই সংশোধনীর ফলে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও ছোট দলগুলোকে তাদের নিজস্ব দলীয় প্রতীকে ভোট করতে হবে।

দলটির একাধিক নীতি-নির্ধারক মনে করছেন, ছোট দলগুলো সাধারণত জয়ের জন্য বিএনপির 'ধানের শীষ' প্রতীকের ওপর নির্ভর করে। আরপিও-তে প্রতীক-সংক্রান্ত এই পরিবর্তন তাদের জয়ের সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিএনপি হিসাব-নিকাশ করে অগ্রসর হচ্ছে যে অন্য কোনো দল এই বিধানে লাভবান হবে কি না। তাই তারা জোটে এমন প্রভাবশালী প্রার্থীদেরই ছাড় দিতে আগ্রহী, যারা নিজস্ব জনপ্রিয়তা ও সামর্থ্যে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন।

দায়িত্বশীল সূত্র অনুযায়ী, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে শরিক নেতাদের ভূমিকা, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠনে তাদের প্রয়োজনীয়তাসহ বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখছেন নীতি-নির্ধারকরা। সব মিলিয়ে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও জোটের জন্য সর্বোচ্চ ২২টি আসন ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

নেতৃত্বের ভাষ্য ও সবুজ সংকেতপ্রাপ্তরা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, “আমাদের সমমনা মিত্র যারা আছেন তাদের আসনসহ আরও দু-একটা দলীয় প্রার্থীর আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেগুলো আরও পরে এবং যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, "প্রার্থী বাছাইয়ে দলের সামগ্রিক লাভ-ক্ষতি হিসাব-নিকাশ করা হয়। সেই হিসাব-নিকাশ শেষে উপযুক্ত প্রার্থীকেই দল বেছে নেয়।" তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, মিত্রদের জন্য ছাড় দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আসনগুলো এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে এবং মিত্রদের কেউ বাদ পড়লে তাদের ভিন্ন উপায়ে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।

ইতিমধ্যে, ফাঁকা ২৮টি আসনের মধ্যে পাঁচজন নেতাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে 'সবুজ সংকেত' দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এরা হলেন- ড. রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, আন্দালিব রহমান পার্থ, অধ্যাপক ওমর ফারুক এবং ববি হাজ্জাজ।

যে আসনগুলো নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র নেতার আসন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে:

জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার: পিরোজপুর-১

নাগরিক ঐক্য সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না: বগুড়া-২

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ: ঢাকা-১৭

বাংলাদেশ এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম: লক্ষ্মীপুর-১

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ: ঢাকা-১৩

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর: পটুয়াখালী-৩

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান: ঝিনাইদহ-২

এছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একাধিক নেতা সিলেট-৫, নীলফামারী-১, সিলেট-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, কিশোরগঞ্জ-১ এবং সুনামগঞ্জ-২ আসন দাবি করায় সেসব আসনের প্রার্থী ঘোষণাও স্থগিত রেখেছে বিএনপি।

অন্য এক জটিলতায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও তার স্ত্রী তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনটি চেয়েছেন। তবে বিএনপি এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ায় জেএসডি এখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও এবি পার্টির সাথে জোট করার আলোচনা করছে।

ক্ষোভ ১২ দলীয় জোটে, সোমবার সংবাদ সম্মেলন

দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকা ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ১২ দলীয় জোটের অন্তত চারজন শীর্ষ নেতা নড়াইল-২ (ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ), কিশোরগঞ্জ-৫ (অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা), ঝালকাঠি-১ (মোস্তাফিজুর রহমান ইরান) এবং যশোর-৫ (রশিদ বিন ওয়াক্কাস) আসনে ছাড় প্রত্যাশা করলেও সেখানে বিএনপি নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ২০১৮ সালের নির্বাচনে 'ধানের শীষ' প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটে ১২ দলীয় জোট শুক্রবার এক বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠক শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে মনোনয়ন ঘোষণায় তারা স্তম্ভিত ও ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং এটিকে প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ হিসেবে দেখছেন। জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের পর তারা ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সোমবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই বৈঠকে জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম উপস্থিত ছিলেন না।

আল-মামুন/

ট্যাগ: বিএনপি আসন সমঝোতা BNP Candidates List বিএনপি ২৮ আসন বিএনপি মিত্রদের আসন বিএনপি শরিক দল বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা বিএনপি ২৭২ আসন ২৮ আসন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় বিএনপি আসন্ন নির্বাচন বিএনপি কৌশল ১২ দলীয় জোটের ক্ষোভ জোটের প্রতীক সমস্যা আরপিও সংশোধনী নির্বাচন নিজস্ব প্রতীকে ভোট জোট বিএনপি প্রতীক নিয়ে জটিলতা বিএনপি জোটের আসন বণ্টন নুরুল হক নুর কোন আসনে মাহমুদুর রহমান মান্না আসন আন্দালিব রহমান পার্থ আসন জোনায়েদ সাকি প্রার্থী ড. রেদোয়ান আহমেদ সবুজ সংকেত শাহাদাত হোসেন সেলিম আসন মোস্তফা জামাল হায়দার আসন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য সেলিমা রহমান প্রার্থী বাছাই আ স ম আবদুর রব নির্বাচন গণঅধিকার পরিষদ আসন নাগরিক ঐক্য আসন এলডিপি আসন বিএনপি জেএসডি জোট রাজনীতি বিএনপি কেন ২৮ আসন ফাঁকা রাখল মিত্রদের আসন নিয়ে বিএনপির জটিলতা বিএনপি জোটের রাজনীতিতে সংকট বিএনপি শরিকরা কেন ক্ষুব্ধ BNP 28 Seats BNP Seat Sharing BNP Alliance Seats BNP Election Strategy BNP Seat Negotiation BNP 272 candidates declared RPO Amendment Bangladesh Election BNP Coalition Symbol Issue Bangladesh 12-Party Alliance BNP Allies Disappointment Symbol problem for alliance parties Mirza Fakhrul Islam Alamgir statement Mahmudur Rahman Manna seat Andaleeve Rahman Partho BNP seat Nurul Haque Nur candidate Jonaed Saki seat Col Oli Ahmad son candidate Shahadat Hossain Selim green signal ASM Abdur Rab JSD Gonodhikhar Parishad seat allocation Nagorik Oikya candidate Why BNP kept 28 seats vacant BNP strategy for alliance partners Crisis in BNP coalition politics BNP seat distribution dilemma Bangladesh political news

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ