ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

জোটের স্বার্থে ১০০ আসনে জামায়াতের তালিকা কাটছাঁট, আসছে নতুন মুখ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৫ ১১:১৮:১৫
জোটের স্বার্থে ১০০ আসনে জামায়াতের তালিকা কাটছাঁট, আসছে নতুন মুখ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় বড় ধরনের রদবদল আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, দলের পূর্বঘোষিত তালিকা থেকে ন্যূনতম ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।

চলমান ৫ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক বাকি সাতটি ইসলামী দলের জন্য আসন সমঝোতার পথ প্রশস্ত করতেই এই বৃহৎ পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা এবং মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতেও বেশকিছু আসনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের জোর দিয়ে বলেছেন যে, আসন সংখ্যা নয়, বরং বিজয়ের সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তার ভাষ্যমতে, আট দলের নেতারা এই নীতিতে ঐক্যবদ্ধ যে, যাকে যেখানে দিলে জয়ী হতে পারবেন, তাকেই সেখানে মনোনীত করা হবে। তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা।

‘এক বাক্সে সব ইসলামী ভোট’: সমঝোতার কৌশল

দলগুলো ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে যে অভিন্ন ও সম্মিলিত আন্দোলন শুরু করেছিল, সেই ধারাবাহিকতায় এবার নির্বাচনি সমঝোতার দিকে মনোনিবেশ করেছে। তাদের প্রধান কৌশল হলো ‘ইসলামি দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে’ আনা। এই লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবেই আটটি ইসলামী দল একক প্রার্থী নির্ধারণে কাজ করছে।

আন্দোলনের বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আট দলের লিয়াজোঁ কমিটি আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করবে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন এবং খেলাফত আন্দোলনসহ জোটের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মাঠ জরিপের প্রতিবেদনেই স্পষ্ট হবে কোন দল কত আসনে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে বা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। যদিও শীর্ষ নেতারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতার কথা জানিয়েছেন, তবুও আসন বণ্টন নিয়ে কিছুটা অস্বচ্ছতা রয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব

আসন বণ্টন নিয়ে প্রধান দুটি শরিক দলের মধ্যে একটি মতপার্থক্যের আভাস দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি)। দলটির দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী মনে করেন, আইএবি ও জামায়াতে ইসলামী এই জোটের প্রধান শরিক। তাই তাদের দুজনের আসন সংখ্যা প্রায় সমান হওয়া উচিত। তার প্রস্তাব হলো, আইএবি ১২০টি, জামায়াত ১৩০টি, এবং বাকি ৫০টি আসন অন্য ছয়টি দলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে।

তবে মাওলানা জাফরী এ-ও জানিয়েছেন যে, যেহেতু জামায়াত পূর্বে পার্লামেন্টে ছিল, তাই তারা সামান্য বেশি আসন পেতে পারে। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, জোটের পরিধি বেড়ে ১০ বা ১১ দলে উন্নীত হতে পারে, সেক্ষেত্রে নতুন দলগুলোর জন্যও আসন ছাড়তে হবে। তিনি দাবি করেন, তাদের কাছে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো তালিকা রয়েছে, যার মধ্যে ৪০-৫০ জনের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

অপরদিকে, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ২০টি আসন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এই দলের আরেক অংশের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ হোসেন আকন্দ ৫টি আসনে প্রার্থী দিতে আগ্রহী হলেও, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিও তাদের নিজস্ব প্রার্থী তালিকা ও জরিপের কাজ চালাচ্ছে।

শীর্ষ নেতৃত্ব ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব

আট দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কে কোথায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত হয়েছে। নিশ্চিত প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক এবং খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী—তিনজনই ঢাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর) নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে জানা গেছে।

অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের জানিয়েছেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২ জন হিন্দু প্রার্থীকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দী এবং কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে আরও একজন রয়েছেন। এছাড়াও সনাতন এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও উপজাতিদের মধ্য থেকে আরও ৪ থেকে ৫ জন প্রার্থী হতে পারেন।

ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার

ডাকসু কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমার নাম রাঙামাটি আসনের জন্য আলোচিত হলেও, কম বয়সের কারণে তার মনোনয়ন নাও মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাকসু জিএস এসএম ফরহাদকে রাঙামাটি থেকে দেওয়া হতে পারে। বান্দরবন থেকে একজন উপজাতি প্রার্থীর সন্ধান চলছে। অন্যদিকে, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমকে খাগড়াছড়ি অথবা ঢাকার কোনো আসন থেকে মনোনয়ন দিতে পারে জামায়াত। এছাড়া চাকসু, রাকসু, জাকসুতে বিজয়ীদের কয়েকজনকে মাঠ জরিপের ভিত্তিতে প্রার্থী করা হবে।

ইতিমধ্যে জামায়াতের প্রার্থী রদবদল শুরু হয়েছে। দলের জেলা আমির যেখানে প্রার্থী ছিলেন, সেই হবিগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাসিত প্রবাসী সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে একদিন আগেই নিশ্চিত করা হয়েছে। কুড়িগ্রামেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। শরিক দলগুলোর জন্য আসন ছাড় এবং অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে সব মিলিয়ে বর্তমান প্রার্থীদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে পূর্বঘোষিত প্রার্থীরা বাদ পড়ছেন, যা নিশ্চিত বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।

আল-মামুন/

ট্যাগ: বাংলাদেশের রাজনীতি Bangladesh Politics জামায়াত প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন Jamaat candidate list change জামায়াতের ১০০ প্রার্থী বাদ Jamaat dropped 100 candidates জামায়াত আসন সমঝোতা Jamaat seat sharing ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন 13th Jatiya Sangsad Election জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন Jamaat-e-Islami nomination জামায়াত ৮ দল জোট Jamaat 8-party alliance ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী Islamic parties single candidate সংসদ নির্বাচন জামায়াত কৌশল Jamaat electoral strategy জামায়াত ইসলামী আন্দোলন আসন বণ্টন Jamaat Islami Andolan seat distribution ৮ দলীয় ইসলামী জোট 8 party Islamic coalition ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী Islami Andolan Bangladesh candidate খেলাফত আন্দোলনের আসন দাবি Khilafat Andolan seat demand মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী Maulana Lokman Hossain Jafri ইসলামি দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে All Islamic votes in one box জোটের জন্য আসন ছাড় Seat concession for alliance ডা. শফিকুর রহমান প্রার্থী Dr. Shafiqur Rahman candidate অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের Advocate Ehsanul Mahbub Zobayer মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ঢাকা Maulana Mamunul Haque Dhaka চরমোনাই পীর প্রার্থী হবেন না Chormonai Pir will not be a candidate অলিউল্লাহ নোমান হবিগঞ্জ-৪ Oliullah Noman Habiganj-4 ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম মনোনয়ন Duksu VP Sadik Quayum nomination জামায়াতের হিন্দু প্রার্থী Jamaat Hindu candidate কৃষ্ণ নন্দী খুলনা-১ Krishna Nandi Khulna-1 জামায়াতের সংখ্যালঘু প্রার্থী Jamaat minority candidates জামায়াতের উপজাতি প্রার্থী Jamaat tribal candidate সর্বমিত্র চাকমা রাঙামাটি Sarbamitra Chakma Rangamati ডাকসু/চাকসু/রাকসু বিজয়ী প্রার্থী DAKSU/Chaksu/Raksu winning candidate রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা Establish Islam in state power জুলাই সনদ বাস্তবায়ন July Charter implementation ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন 5-point demand movement যুগপৎ আন্দোলন নির্বাচন Joint movement election নির্বাচন ২০২৩/২০২৪ (প্রাসঙ্গিক বছর) Election 2023/2024 (Relevant Year) ইসলামী দল Islamic Party বাংলাদেশের জোট রাজনীতি Bangladesh alliance politics

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ