ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শায়খ সালেহ আল-ফাওযান হলেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ০৮:৪২:১৭
শায়খ সালেহ আল-ফাওযান হলেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি

মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র, পবিত্র দুই মসজিদ—মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সেবক বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এক বিশেষ রাজকীয় আদেশের মাধ্যমে বিশিষ্ট ইসলামী পন্ডিত শায়খ সালেহ আল-ফাওযানকে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হিসেবে অধিষ্ঠিত করলেন। গত বুধবার (২২ অক্টোবর) দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়ার পর এই ফরমানটি কার্যকর হয়।

শায়খ আল-ফাওযান এই নিয়োগের মাধ্যমে সদ্য প্রয়াত গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুলআজিজ আল-শেখের শূন্যস্থান পূরণ করলেন, যিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।

একসঙ্গে তিনটি শীর্ষ পদের দায়িত্ব

রাজকীয় নির্দেশনায় জানানো হয়েছে যে, নতুন গ্র্যান্ড মুফতি শেখ ফাওযানকে এককভাবে আরও দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বভারও দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন থেকে প্রবীণ আলেমদের পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইফতা (ধর্মীয় নির্দেশনা) ও গবেষণাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সৌদি আরবের ধর্মীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মূল কেন্দ্রে অবস্থান নিলেন।

দীর্ঘকাল ধরে ইসলামী অঙ্গনে তাঁর প্রভাব

শায়খ সালেহ আল-ফাওযান দীর্ঘকাল ধরে সৌদি আরবের ইসলামী অঙ্গনে তাঁর প্রজ্ঞা ও কাজের জন্য অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত। সর্বোচ্চ পদে আসার আগে তিনি সিনিয়র আলেম পরিষদ ও ইফতা কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার সামলেছেন। পাশাপাশি, মুসলিম বিশ্ব লীগের আওতাধীন ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিলের সদস্য এবং হজ চলাকালীন কর্মরত দাঈদের তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য হিসেবেও তাঁর অবদান ছিল।

শায়খ আল-ফাওযানের জীবন ও শিক্ষাসফর

শায়খ আল-ফাওযানের জন্ম ১৯৩৫ সালে সৌদি আরবের কাসিম অঞ্চলের আশ-শিমাসিয়াহ এলাকায়। শৈশবেই তিনি তাঁর পিতাকে হারান। তবে পরিবার এবং স্থানীয় মসজিদের ইমাম শায়খ হাম্মুদ বিন সুলায়মান আত-তিলালের পরিচর্যায় তাঁর শৈশব কাটে। তিনি তাঁদের কাছ থেকেই কুরআন তিলাওয়াত এবং প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি নেন।

তিনি ১৯৫০ সালে আশ-শিমাসিয়াহর একটি সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৯৫২ সালে বুরাইদার আল-ফয়সালিয়া স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর কিছুদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার কাজও করেন।

১৯৫৪ সালে বুরাইদার নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ইনস্টিটিউট-এ ভর্তি হন এবং চার বছর পর সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি রিয়াদের শরিয়াহ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ফিকহ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট ডিগ্রিও লাভ করেন। তাঁর স্নাতকোত্তর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে অনুমানভিত্তিক অনুসন্ধানের প্রয়োগ’ এবং পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী খাদ্য সংক্রান্ত নির্দেশাবলী’।

জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পথে নেতৃত্ব

তিনি একসময় হায়ার ইনস্টিটিউট অব জুডিশিয়ারির পরিচালকের পদেও কাজ করেন এবং ১৯৯২ সালে স্থায়ী ইফতা কমিটির সদস্য হিসেবে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হন। শায়খ ফাওযান অসংখ্য ইসলামিক গ্রন্থের প্রণেতা এবং ইসলামী শিক্ষায় তাঁর গভীর অবদান সুপরিচিত। জনপ্রিয় রেডিও অনুষ্ঠান ‘নূর আলা আল-দার্ব’-এর নিয়মিত আলোচক হিসেবেও তিনি শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

শায়খ সালেহ আল-ফাওযানের এই শীর্ষ পদে দায়িত্ব গ্রহণ সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতৃত্বে একটি নতুন পর্বের সূচনা করল, যা ঐতিহ্য, পাণ্ডিত্য ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ