ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

বিএনপির আসন কৌশলে ৪০ ছাড়: এনসিপির সঙ্গে সমঝোতায় নয়া সমীকরণ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১০:৪৯:৫১
বিএনপির আসন কৌশলে ৪০ ছাড়: এনসিপির সঙ্গে সমঝোতায় নয়া সমীকরণ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে এই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে দলটি একাধারে শরিকদের প্রতি উদারতা এবং একটি নয়া রাজনৈতিক সমীকরণের আভাস দিয়েছে। অবশিষ্ট ৬৩টি আসনের মধ্যে ৪০টিই যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, যা তাদের জোট-কেন্দ্রিক নির্বাচনী কৌশলের ইঙ্গিত দেয়।

তবে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে যদি চূড়ান্তভাবে আসন সমঝোতা হয়, তবে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যান্য সঙ্গীদের জন্য ছাড় দেওয়া এই ৪০টি আসনের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। এই বিষয়ে একটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, এনসিপির সঙ্গে সমঝোতা হলে ছাড়ের পরিমাণ কম-বেশি হওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী তালিকাতেও সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে।

৬৩ আসনে রফা, ৪০টি শরিকদের জন্য

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। ঘোষিত তালিকা অনুসারে, এখনও ৬৩টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। এর মধ্যে ২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। এই অমীমাংসিত আসনগুলো নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, যেসব আসন খালি রাখা হয়েছে, সেগুলোতে বিএনপির প্রার্থীও আসবে, আবার যুগপৎ শরিকদের মধ্য থেকেও প্রার্থী দেওয়া হবে। পরবর্তীতে এগুলো সমন্বয় করা হবে। অন্যদিকে, স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা জানান, ২৬০টি আসনের একটি তালিকা নিয়ে আলোচনা হলেও ২৩৭টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঐকমত্য হয়।

প্রার্থী বাছাইয়ে 'ত্রিশঙ্কু' কৌশল ও পরিবার-নীতি

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত এক মাস ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির তিন নেতা— নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সারাদেশে ৩০০ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পর্যালোচনা করেন। এর পাশাপাশি তিনটি জরিপের ফলাফলকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়। সেই খসড়া থেকেই চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে একটি বিশেষ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, "এবার কোনো পরিবার থেকে দুজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে না। আপনারা দেখেছেন, এবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরিবারের কোনো ছেলে-মেয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।" স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই প্রক্রিয়াকে "দীর্ঘ পর্যালোচনা" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পর্যালোচনায় এনসিপি, পাল্টে যেতে পারে হিসাব

আগামী নির্বাচনে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপির আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনা চূড়ান্ত রূপ নিলে বিএনপি এই দলটিকেও একাধিক আসন ছাড় দেবে।

এনসিপির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর আগে বলেছিলেন, "সব রাজনৈতিক দলের জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে। আমরা তো তাদের স্বাগত জানিয়েছি... আমি এনসিপির বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলি না। আমি তাদের স্বীকার করি, পছন্দ করি, শ্রদ্ধা করি এবং চাই তারা ভালো করুক।"

এদিকে, যুগপৎ শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনো তাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে তারা তাদের পছন্দের আসনের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন।

বেগম জিয়ার আসন ও পরিচিত মুখের অনুপস্থিতি

ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনটি আসন— ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭— থেকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তবে দলীয় সূত্র বলছে, তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করেই শেষ পর্যন্ত কতটি আসনে তিনি অংশ নেবেন, তা চূড়ান্ত হবে।

তবে তালিকায় বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ অনুপস্থিত। এর মধ্যে রয়েছেন সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, যিনি গত নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন (আসনটি এবার খালি রাখা হয়েছে)। ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নামও তালিকায় দেখা যায়নি। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যিনি এর আগে কখনও নির্বাচনে অংশ নেননি, এবারও তার নাম সম্ভাব্য তালিকায় নেই।

৬৩টি অমীমাংসিত আসন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকাটিকে প্রাথমিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার যেকোনো সংশোধনী স্থায়ী কমিটি আনতে পারে। চূড়ান্ত না হওয়া ৬৩টি আসন হলো— ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-১ ও ৩, লালমনিরহাট-২, বগুড়া-২, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-১, ঝিনাইদহ-১, ২ ও ৪, যশোর-৫, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২ ও ৩, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, পিরোজপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-৪ ও ১০, কিশোরগঞ্জ-১ ও ৫, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সিগঞ্জ-৩, ঢাকা-৭, ৯, ১০, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২০, গাজীপুর-১ ও ৬, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-২, সুনামগঞ্জ-২ ও ৪, সিলেট-৪ ও ৫, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৬, কুমিল্লা-২ ও ৭, লক্ষ্মীপুর-১ ও ৪, চট্টগ্রাম-৩, ৬, ৯, ১১, ১৪ ও ১৫ এবং কক্সবাজার-২।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ