ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: ভারতের আনুষ্ঠানিক বার্তা, ফেরত দেয়া নিয়ে যা জানা গেল

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৯:৪৩:১৪
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: ভারতের আনুষ্ঠানিক বার্তা, ফেরত দেয়া নিয়ে যা জানা গেল

গত বছরের জুলাইয়ে সংঘটিত ব্যাপক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সাজা, অর্থাৎ ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। সোমবারের এই দণ্ডাদেশ ঘোষণার প্রেক্ষিতে, ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রক (MEA) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তবে ঢাকা সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রত্যর্পণের যে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানো হয়েছে, সে বিষয়ে নয়াদিল্লি তাদের কূটনৈতিক বার্তায় নীরবতা পালন করেছে।

ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান

সোমবার প্রকাশিত MEA-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত নির্বাসিত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া এই বিচারিক সিদ্ধান্তটি আমলে নিয়েছে। প্রতিবেশী দেশটি আরও জানিয়েছে যে, তারা সর্বদা ‘‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ’’ রয়েছে।

বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘‘আমরা সবসময়ই এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকল অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করে যাবো।’’ আরও বলা হয়েছে, ‘‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের শ্রেষ্ঠ কল্যাণের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’’ তবে এই বার্তায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশের আহ্বান এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

আইসিটি-১ কর্তৃক দণ্ডাদেশ

এর আগে, সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংগঠিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর চালানো মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ সংক্রান্ত মামলায় তাঁর এই দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। আদালতের রায়ে নিশ্চিত করা হয় যে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত তিনটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অপর দুটি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আরোপ করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীর পাশাপাশি জুলাই-আগস্টে নিহত কয়েকজনের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকার কঠোর প্রত্যর্পণ দাবি

ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশ ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে অবিলম্বে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইসিটির আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ জন্য অপরাধী সাব্যস্ত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার সতর্ক করেছে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদেরকে অন্য কোনো দেশ আশ্রয় দিলে, তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ’ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।

বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে, ভারত সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেন। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে কার্যকর প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা ভারতের জন্য একটি অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব।

ভারত কি হাসিনাকে হস্তান্তর করবে? বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ

ফাঁসির দণ্ডাদেশের পর শেখ হাসিনাকে ভারত প্রত্যর্পণ করবে কি না, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। অধ্যাপক দত্ত বলেছেন, ‘‘হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ভারত এই পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কখনোই ফেরত দেবে না।’’

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘‘ভারত কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে হস্তান্তর করবে না।’’ তিনি আরও পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, ‘‘গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি, ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা সুদৃঢ় ছিল না এবং অনেক সময়ই তা ভঙ্গুর বলে মনে হয়েছে।’’

অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত উল্লেখ করেন যে, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিচার করে প্রত্যেকেই আশা করেছিল যে তার বিচার কঠিন হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরাও একমত যে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এমন প্রমাণও বিদ্যমান।’’

এই বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ হলো, আওয়ামী লীগ হয়তো একটি পাল্টা-বয়ান সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশিরা মনে করেন যে শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ