Alamin Islam
Senior Reporter
ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ বিপজ্জনক 'জোন-১'-এ সিলেট-ময়মনসিংহসহ ১৯ অঞ্চল
দেশের ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগের মাত্রা নির্ধারণ করে একটি নতুন পর্যবেক্ষণ সামনে এসেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের একটি মানচিত্রের মাধ্যমে সমগ্র ভূখণ্ডকে ঝুঁকির ভিত্তিতে তিনটি অঞ্চলে (জোন) শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জোন-১-কে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে মাঝারি ঝুঁকি রয়েছে জোন-২-এ এবং সর্বনিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল হলো জোন-৩।
ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারি সংলগ্ন উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অঞ্চলগুলো এই সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জোন-১-এর অন্তর্ভুক্ত।
সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (জোন-১) হিসেবে চিহ্নিত এলাকা
প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে 'সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ' তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উচ্চঝুঁকির এই তালিকায় স্থান পেয়েছে:
সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সম্পূর্ণ ৯টি জেলা।
ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও নরসিংদীর আংশিক এলাকা।
পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা।
কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিস্তৃত অংশ।
এগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। অপরদিকে, জোন-৩-এর আওতায় থাকা খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বা সর্বনিম্ন ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
ভৌগোলিক কাঠামো ও অতীতের কম্পন
ঐতিহাসিক উপাত্ত বলছে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত পাঁচবার শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সেই সব কম্পনের কেন্দ্র ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজারের মতো এলাকা—যা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের কম্পনের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
এছাড়াও, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তসংলগ্ন সিলেট এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলকেও অত্যন্ত উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের চারপাশ ঘিরে আছে ভূমিকম্পের পাঁচটি প্রধান উৎপত্তিস্থল বা প্লেট বাউন্ডারি:
প্লেট বাউন্ডারি-১: মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত।
প্লেট বাউন্ডারি-২: নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত।
প্লেট বাউন্ডারি-৩: সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে।
ডাউকি ফল্ট: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায়।
মধুপুর ফল্ট।
এগুলোই বাংলাদেশের উচ্চ ঝুঁকির মূল কারণ।
রাজধানীর মারাত্মক অবকাঠামো ঝুঁকি
রাজধানীর অবকাঠামো নিয়ে আরও ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন থাকলেও, এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন (দ্বিতল বা তার কম) কম ঝুঁকিপূর্ণ।
কিন্তু এর চেয়ে উঁচু, অর্থাৎ ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত নির্মিত বাকি ৬ লাখ ভবন মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। এই উচ্চ স্থাপনাগুলো ধসে পড়লে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে দ্রুত সংস্কার করে ভূমিকম্প সহনশীল করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ: সক্ষমতা ও করণীয়
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতিরোধ করা কারও হাতে নেই। তাই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এর আগাম পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তার গবেষণাকে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো এই খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে।
দেশের সক্ষমতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মাত্র ৫.৭ মাত্রার একটি কম্পন (যা ঢাকা থেকে ৬০ কিমি দূরে উৎপাদিত) যদি রাজধানীর স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তবে এর চেয়ে শক্তিশালী কম্পন নিঃসন্দেহে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিল্ডিং কোড না মেনে অহরহ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, যা নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ - Frequently Asked Questions)
প্রশ্ন ১: ভূমিকম্পের ঝুঁকির ভিত্তিতে সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছে?
উত্তর: ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় সমগ্র বাংলাদেশকে মোট তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে: উচ্চঝুঁকির জোন-১, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ জোন-২, এবং নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ জোন-৩।
প্রশ্ন ২: কোন কোন এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ (জোন-১) হিসেবে চিহ্নিত?
উত্তর: সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বেশ কিছু এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণ (জোন-১) হিসাবে চিহ্নিত।
প্রশ্ন ৩: কোন এলাকাগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বনিম্ন (জোন-৩)?
উত্তর: খুলনা, যশোর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী এলাকাগুলো জোন-৩-এর আওতায় সর্বনিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত।
প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রধান উৎপত্তিস্থল বা ফল্ট লাইনগুলো কী কী?
উত্তর: বাংলাদেশে ভূমিকম্পের পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এগুলো হলো: প্লেট বাউন্ডারি-১ (মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী), প্লেট বাউন্ডারি-২ (নোয়াখালী থেকে সিলেট), প্লেট বাউন্ডারি-৩ (সিলেট থেকে ভারত), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট।
প্রশ্ন ৫: রাজউকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় কতগুলো ভবন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে?
উত্তর: রাজউকের তথ্যমতে, ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবনের মধ্যে ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত নির্মিত প্রায় ৬ লাখ ভবন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে, যা ভূমিকম্পের সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট: দ্বিতীয় দিন শেষে চালকের আসনে বাংলাদেশ
- আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কোথায়
- সতর্কবার্তা: ‘আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে’
- ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঢাকাসহ কেঁপে উঠল সারাদেশ
- বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল: যেসব আসনে পরিবর্তন হচ্ছে প্রার্থী
- বাংলাদেশ বনাম ভারত সেমি ফাইনাল: সুপার ওভারে শেষ ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- সোনার দামে বড় পতন: ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি এখন কত
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: বোলিংয়ে বাংলাদেশ, খেলাটি সরাসর দেখুন Live
- ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ; আতঙ্কের মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন আজহারী
- আজকের সোনার দাম:(শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫)
- ভূমিকম্প: এই সময় করণীয় কি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
- ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ: ১৩টি এলাকা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে
- বাংলাদেশ বনাম ভারত সেমি ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- আজ ব্রাজিল বনাম মরক্কো কোয়ার্টার ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি Live দেখবেন যেভাবে
- dhaka division earthquake:‘এটি বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা’