ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে ফাটকাবাজি, DSEX বাড়লেও জেড স্টকে রেকর্ড লাভ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২৩ ২২:৫৫:০৭
শেয়ারবাজারে ফাটকাবাজি, DSEX বাড়লেও জেড স্টকে রেকর্ড লাভ

গত সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে দেখা গেছে মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এক ধরনের আগ্রাসী উন্মাদনা। কোম্পানির প্রকৃত মূল্যমান বা লাভ-ক্ষতির হিসাবকে গুরুত্ব না দিয়ে, দুর্বল পারফর্ম করা স্টকগুলো নিয়ে চলেছিল ব্যাপক বেচাকেনা।

সপ্তাহান্তে প্রধান সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে থাকলেও, অস্বাভাবিক লাভের তালিকাটি দখল করেছে মূলত ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারগুলি—যেগুলি সাধারণত ডিভিডেন্ড প্রদান করে না, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর অথবা যাদের নিয়মিত উৎপাদন কার্যক্রম নেই। বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত, বর্তমানে মার্কেট দীর্ঘমেয়াদি লগ্নির পরিবর্তে ভিত্তিহীন অনুমানের উপর নির্ভরশীল ফাটকাবাজির প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

অকেজো কোম্পানির অবিশ্বাস্য উল্লম্ফন

ইবিএল সিকিউরিটিজের সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা অনুযায়ী, ১৬ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত লোকসানে থাকা শেয়ারগুলিই বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ রিটার্ন দিয়েছে। এই সময়ের সবচেয়ে তেজি ছিল খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং—যে প্রতিষ্ঠানটি এখন কার্যত নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে এর শেয়ারদর প্রায় ৫২ শতাংশ বেড়েছে, যা ছিল সপ্তাহের রেকর্ড ব্রেকিং বৃদ্ধি।

একইভাবে, অর্থসংকটে জর্জরিত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল) এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) যথাক্রমে ৫০.৬৮ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশের লাফ দিয়ে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। ন্যাশনাল ব্যাংকও ৫০ শতাংশ লাভ তুলে নিয়ে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মিছিলে সামিল হয়।

এছাড়াও ফারইস্ট ফিন্যান্স, পিপলস লিজিং, মাকসন্স স্পিনিং, নুরানি ডাইং এবং হামিদ ফ্যাব্রিক্সের মতো তুলনামূলকভাবে কমজোরি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদরও ৪০ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূচকে ইতিবাচক ধারা, বাড়ছে তারল্য

এ ধরনের ফাটকাবাজি সত্ত্বেও, বাজারের বেঞ্চমার্ক সূচকগুলি সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে ছিল।

ডিএসইএক্স (DSEX) সূচক ৩.৫৪ শতাংশ বা ১৬৬ পয়েন্ট লাভ করে ৪,৮৬৯ পয়েন্টে স্থির হয়েছে।

ডিএস৩০ (DS30) সূচক ২৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ১,৮৭৭ পয়েন্টে সপ্তাহ শেষ করেছে।

ডিএসই এসএমই (DSMEX) সূচক মূল বোর্ডের চেয়ে আরও শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখিয়ে ১৩.১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮২৪ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।

এই সপ্তাহে সামগ্রিক বাজার মূলধন ৭,৮০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ১২ শতাংশ—যা বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। লেনদেনে অংশগ্রহণকারী ৩৪৭টি স্টকের মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে দাম কমেছে মাত্র ১৮টির।

আকর্ষণের কারণ ও সতর্কবার্তা

বাজারের এমন আচরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি শেয়ারদর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় 'ডিসকাউন্টেড সম্পদ' খুঁজে ফেরা বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছেন। এছাড়াও নতুন মার্জিন রুলস শিথিলের সম্ভাবনা নিয়ে বাজারে প্রচারিত গুজব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আরও উৎসাহিত করেছে।

তবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো কঠোর সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে, বৃহত্তর বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজারে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না। বাজারের দিকনির্দেশনা এখনও অনিশ্চিত, ফলে এই মুহূর্তে মুনাফা তোলার ঝুঁকিপূর্ণ খেলাটি মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ