দায় এড়ানোর জন্যই ভারতের বিপক্ষে উসকে দেওয়া হয় আম্পায়ারিং বিতর্ক

আলমের খান: পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ বাস্তবতাকে গ্রহণ করা এবং নিজের দোষ স্বীকার করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। এবং সহজতর কাজটি হলো নিজের দোষকে অগ্রাহ্য করে কোনো একটি অজুহাত দাঁড় করানো। প্রায় কমবেশি সব মানুষই এই কাজটি করে থাকেন। বর্তমান পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ পাওয়া প্রায় অসম্ভব যে কখনো অজুহাতকে ব্যবহার করেনি।
তবে দেশটি যখন বাংলাদেশ তখন এখানে অজুহাতের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত। তাই আবেগি বাঙালি জাতির প্রায় সবকিছুতেই ফুটে ওঠে নানান অজুহাত। রাজনৈতিক দল হোক কিংবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি অফিসের বস কিংবা কেরানি। কেউই তাদের কাজের কারণে কোন ক্ষতি হলে সেই দায় স্বীকার করে না। পরিস্থিতি কিংবা অন্য কারোর উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয় সেই দায়ের গুরুভার।
বাংলাদেশের প্রাণ মনে করা হয় ক্রিকেটকে। ফলে ক্রিকেটেও এই অজুহাতের সমারোহ থাকাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। তবে অজুহাত ক্রিকেটাররা কিংবা ম্যানেজমেন্ট যতটা ব্যবহার করেন তার চেয়ে কয়েকগুণ ব্যবহার করেন ভক্ত সমর্থকরা। অধিকাংশ সময় ক্রিকেটাররা খারাপ করলে তাদের তুলোধোনা করে ফেলা হয়। সেই সমালোচনাটাও হয়না গঠনমূলক,হয় অনেকটাই আবেগী সমালোচনা।
ফলশ্রুতিতে একটি মাত্র ভালো পারফরমেন্সই আবারও দর্শকদের ভুলিয়ে দেয় সেই সমস্যাগুলো। তবে ভারতের সাথে খেলা হলেই বাঙালি দর্শকদের অজুহাত দেওয়ার প্রবণতা যেন আরো বৃদ্ধি পায়। ম্যাচে দু-একটি সিদ্ধান্ত যদি হেরফের হয় তাহলে বুঝতে হবে আম্পায়ার থেকে শুরু করে আইসিসি সবারই গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলবে দর্শকবৃন্দ। উদাহরণ হিসেবে এরকম অজস্র ম্যাচের প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। ২০১৫ বিশ্বকাপে রুবেল হোসেনের একটি বল রোহিত শর্মার মাঝার খানিকটা উপরে উঠে যায়। সেই বলটিতে সজোরে ব্যাট চালান রোহিত শর্মা।
তবে বাউন্ডারি লাইনে মুঠোবন্দী হন তিনি।বলটি ব্যাটসম্যানের কোমরের উপর দিয়ে যাওয়ায় বলটি নো বল ছিল কিনা এইরকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ডেলিভারিটি নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ বিশ্লেষণ করার পর আম্পায়াররা ভারতের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্ষোভের বন্যা বইতে দেখা যায়। নিশ্চিতভাবেই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের পক্ষে আসাটাই ছিল যুক্তিসঙ্গত।
খেলাটি যারা দেখেছেন তারা লাল সবুজের পক্ষেই রায় দিবেন। তবে ক্রিকেটে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়া নতুন কিছু নয়। অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষে সিদ্ধান্ত আশা যে শতভাগ নিশ্চিত ছিল এমনটিও নয়, অনেক ম্যাচেই এই ধরনের ডেলিভারিকে নো বল ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ম্যাচটি হেরেছে টাইগাররা, ভারতের ৩০২ রান তাড়া করতে গিয়ে ৪৫ ওভারে ১৯৩ রানের বেশি করতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। তবে এই ম্যাচে টাইগারদের ব্যাটিংয়ের বিন্দুমাত্র সমালোচনা হতে দেখা যায়নি।
সব সমালোচনাই হয়েছিল আইসিসিতে ভারতের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে। অথচ এমসিজির সে উইকেটটি ছিল বেশ ব্যাটিং বান্ধব। অনায়াসেই টাইগাররা যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দিতা উপহার দিতে পারতো দর্শকদের। ফলে ব্যর্থতার দায় নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ক্রিকেটারদেরই ছিল। ঠিক এর পরের বছর ২০১৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্যক এক ম্যাচ হেরে বসে টাইগাররা। এইরকম পরিস্থিতিতেও যে হারা সম্ভব তা বোধ হয় বাংলাদেশের খেলা না দেখলে কখনো বিশ্বাস হতো না।
তিন বলে দুই রানের সমীকরণটি মেলাতে পারেননি অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিম। সেই ম্যাচে টাইগারদের নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। যা নিশ্চিতভাবেই ছিল প্রত্যাশিত। তবে টাইগারদের সমালোচনার চেয়েও বেশি হয়েছিল আইসিসির পক্ষপাতিমূলক আচরণের কথা। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের একটি পর্যায়ে এলপিডব্লিউ আপিল করে বসেন ভারতীয়রা। সেই আপিলে সাড়া দিয়ে দেন আম্পায়ার।
তবে পরবর্তীতে রিভিউ নিলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়। তবে এল বি ডব্লিউর আবেদন করার সময় বলটি ব্যাটসম্যানের পায়ে লেগে সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলে। আপিল করার ফলে আম্পায়ার কিংবা মাঠে থাকা ক্রিকেটার কারোই সেদিকে খেয়াল ছিল না। যদি খেয়াল থাকতো তাহলে চার রান বাড়তি যোগ হতো টাইগারদের স্কোর কার্ডে। যা তাদের বিজয়ী বেশে মাঠ ছাড়ার অনুমতি প্রদান করতো।
বাংলার অধিকাংশ দর্শনবৃন্দ ঠিক এই জায়গাটি নিয়ে আবারো শুরু করেন তোলপাড়। নিশ্চিতভাবেই হয়তো এখানেও থাকতে পারে পক্ষপাতীত্বের চিহ্ন। তবু যে ম্যাচটি একেবারে হাতের মুঠোয় ছিল। যেই জয় না পাওয়ার দায় শুধুই হওয়া উচিত ক্রিকেটারদের। সেটি আবারো আইসিসির ঘাড়ে গিয়ে উঠল। অর্থাৎ এখানে ব্যাপারটি পরিষ্কার আমরা নিজেদের ভুল শুধরাতে মনোযোগী নই।
বরঞ্চ পরিস্থিতি কিংবা আরেকজনকে দায়ী দেওয়াতেই আমাদের সকল মনোযোগ নিহিত। ফলে দিন যায় বছর যায় তবে আমাদের উন্নতির গ্রাফটা আর উপরে যায় না। আমাদের এই অজুহাত প্রীতির সাম্প্রতিক উদাহরণ ভারতের বিপক্ষে ইমার্জিং এশিয়া কাপের ম্যাচটি। যেখানে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ২১১ রানে বেঁধে দিয়েও ম্যাচটি হারতে হয় টাইগারদের। এই ম্যাচেও কয়েকটি সিদ্ধান্ত গিয়েছে টাইগারদের বিপক্ষে।
তাই অজুহাত তো প্রস্তুত করাই ছিল এখন সেগুলো জায়গামতো দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায় সবাই। তবে এই কথা আজ হোক কিংবা কাল আমাদের মেনে নিতেই হবে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে অধিকাংশ সময় ম্যাচগুলো আমরাই জিততাম। এবং তখন হয়তো অজুহাত প্রতিপক্ষেরই দিতে হতো। এই উপলব্ধিটা যত দ্রুত আমরা করতে পারব ততই সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাব। তা না হলে সময় নিজের গতিতে চলে যাবে তবে থেমে থাকবে দেশের ক্রিকেট।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে কারসাজির চক্র: দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দামে অস্বাভাবিক উল্লম্ফন
- ৩ কোম্পানির কারখানায় ঝুলছে তালা, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- ৮ প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণা, ছয় কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা খেলো ধাক্কা
- শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় আইসিবির বিশেষ তহবিল থাকবে ২০৩২ সাল পর্যন্ত
- শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বাঁচা মরার ম্যাচ
- রপ্তানি আয়ের ৮ হাজার কোটি টাকা গায়েব: কেয়া গ্রুপ ও চার ব্যাংককে তলব
- এশিয়া কাপ ২০২৫: তিন ওপেনার নিয়ে বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা
- ভারত বনাম বাংলাদেশ : ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- ভারত বনাম বাংলাদেশ: গোল, গোল, ৮০ মিনিটের খেলা শেষ
- বদলে গেল ফোনের ডায়াল প্যাড, জানুন আসল কারণ ও আগের অবস্থায় ফেরানোর উপায়
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা
- বীমা খাতে সুবাতাস, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৯ কোম্পানির মুনাফায় উল্লম্ফন
- বদলে গেল আপনার ফোনের ডায়াল প্যাড, আতঙ্ক নয় সমাধান আছে, জেনে নিন
- এশিয়া কাপ 2025 : বাংলাদেশের চুড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করলো বিসিবি
- গুজব না সত্য: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা হাসিনার পদত্যাগপত্র খুঁজে পায়নি