ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল: যেসব আসনে পরিবর্তন হচ্ছে প্রার্থী

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২০ ১৫:০৬:০৮
বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল: যেসব আসনে পরিবর্তন হচ্ছে প্রার্থী

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণার পর সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি। ২৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর বিভিন্ন স্থানে পদপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মীদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন অসন্তুষ্ট নেতাদের নিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসছে। বিশেষ করে বয়সের কারণে প্রচারণায় পিছিয়ে পড়া প্রার্থীদের আসনগুলোতে বিশেষ নজর দিচ্ছে বিএনপি, যা শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন তালিকায় রদবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্যোগে অসন্তোষ প্রশমন

গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণার পর (পরে মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত করা হয় এবং সিলেটের একটি আসনে আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়) অন্তত ২৩টি আসনে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধ নিরসনে গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।

এই আলোচনার ফলস্বরূপ, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি আসনের পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া বিএনপি হাইকমান্ড ফোনেও যোগাযোগ রাখছে। তাদের প্রতি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়— এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে সম্মিলিতভাবে মাঠে থাকার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বঞ্চিত নেতারা নিজেদের আসনে জনপ্রিয়তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানালেও দলের প্রতি অনুগত থাকার অঙ্গীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মন্তব্য করেন, ‘কয়েকটি আসনে ক্ষোভ থাকতেই পারে। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

কয়েকটি আসনে সফল মীমাংসা

উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু আসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের বিরোধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে মনোনীত মো. আবুল কালাম এবং পদপ্রত্যাশী সামিরা আজিম দোলার কর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়, এমনকি দোলার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাও ঘটে। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ১৪ নভেম্বর রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উভয়কে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নির্দেশ দেন। এরপরই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এবং দোলা দলের নির্দেশনা মেনে কালামকে সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আবুল কালাম জানিয়েছেন, দলের সুসংগঠিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় ধানের শীষকে বিজয়ী করতে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা মেনে তারা ঐক্য অটুট রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এছাড়া সাতক্ষীরা-৩ আসনে ডা. শহিদুল আলম এবং ময়মনসিংহ-৬ আসনে আব্দুল করীম সরকারকে (যিনি আখতারুল আলমের বদলে মনোনয়ন দাবি করেছিলেন) ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাটোরসহ অন্যান্য আসনের চিত্র

মঙ্গলবার রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের মনোনয়নবঞ্চিত তাইফুল ইসলাম টিপু এবং ইয়াছির আরশাদ রাজনের সঙ্গেও কথা বলেন। প্রয়াত বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুলকে এ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। টিপু ও রাজন উভয়েই মহাসচিবকে জানিয়েছেন, মনোনীত প্রার্থীর এলাকায় কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারা সতর্ক করে বলেন, প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনা করা না হলে জয়ী হওয়া সম্ভব নয় এবং নিরপেক্ষ জরিপের মাধ্যমে বাস্তবতা যাচাইয়ের অনুরোধ জানান। তবে তারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়— এমন কোনো কাজ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এছাড়া এদিন জয়পুরহাট-১ ও জয়পুরহাট-২, রাজশাহী-৪ ও রাজশাহী-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনসহ আরও কয়েকটি আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব।

বয়সের ভারে পিছিয়ে থাকা প্রার্থীরা: তরুণ প্রজন্মের দাবি

কয়েকটি আসনে বয়স্ক প্রার্থী মনোনয়নের কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রবল সমালোচনার জন্ম হয়েছে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই প্রবীণ প্রার্থীরা কেবল বয়সের ভারে ঠিকমতো প্রচারণা চালাতে পারছেন না তাই নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের কাছেও তারা অপরিচিত। বিশেষ করে অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনীতিতে জেন-জি ভোটাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে, যাদের ভোট নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন প্রবীণদের কারণে তাদের ভোটদানে আগ্রহ কম থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।

এ কারণে বেশ কিছু আসনের মনোনয়নবঞ্চিতরা অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার দাবি তুলেছেন এবং বয়স্ক প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য দলীয় হাইকমান্ডের কাছে আবেদন করেছেন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪: ৮৮ বছর বয়সি মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় নেতারা পরীক্ষিত নেতৃত্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়াকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া-৪: ১৬ জন শীর্ষ নেতা বয়োবৃদ্ধ মেহেদী আহমেদ রুমীকে পরিবর্তন করে অপেক্ষাকৃত তরুণ, ক্লিন ইমেজ এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা মো. শেখ সাদীকে মনোনয়ন দেওয়ার আবেদন করেছেন।

চট্টগ্রাম-১৩: ৮০ বছরেরও বেশি বয়সি সরওয়ার জামাল নিজামের মনোনয়নে আপত্তি জানিয়ে দীর্ঘ সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে নির্যাতিত-নিপীড়িত কর্মী হিসেবে পরিচিত কাউকে প্রার্থী করার আবেদন করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ-২: ৮০ বছরের বেশি বয়সি মিজানুর রহমান সিনহা ঠিকমতো গণসংযোগ করতে পারছেন না বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। তারা কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে মনোনয়নের অনুরোধ জানিয়েছেন, যার স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।

বিরোধপূর্ণ আসনে শক্তিশালী অবস্থান ও জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা পর্যায়ক্রমে কথা বলছেন। এমনকি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও কিছু প্রার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করছেন। তৃণমূলের এই দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন কোন আসনে প্রার্থী বদল হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির হাইকমান্ড।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড তাদের চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটি... বিস্তারিত