ঢাকা, রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে দলের বন্ডিং সবই ছন্নছাড়া

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৩ জুলাই ২৪ ২২:৪৩:৩৫
পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে দলের বন্ডিং সবই ছন্নছাড়া

আলমের খান: সময়ের হিসেবে আড়াই মাস পর শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ঘিরে মোটামুটি সব দলেরই কিছুটা মাতামাতি রয়েছে। তবে অল্প কয়েকটি দেশে সে মাতামাতির পর্যায়টি মাত্রাতিরিক্ত। সে অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। লাল সবুজের ছোট্ট এই দেশটির স্বপ্নের পরিধিও কখনো খুব একটা বড় ছিল না।

সব সময় অল্পতেই তুষ্ট থাকতে পারেন বাঙালিরা। হোক সেটা পারিবারিক জীবনে কিংবা চাকরি জীবনে। হোক সেটা ক্রিকেট কিংবা অন্য কোনো খেলায়। তবে ২০১৫ সালের পর ক্রিকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো বড় স্বপ্ন দেখতে উজ্জীবিত হয় হাজারো সমর্থক। বাংলাদেশ নিজেদের সামর্থের চেয়েও ভালো খেলা শুরু করে। সাথে সাথে নিজেদের সামর্থের চেয়েও বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করে সাধারণ বাঙালিরা।

দিনশেষে তারা তো সাধারণ, অসাধারণের দেখানো স্বপ্নই দেখতে চাইবেন। সময়ের পরিক্রমায় সে স্বপ্নের পরিধি বড় হতে হতে আজ বিশ্বজয়ে গিয়ে থেমেছে। এর চেয়ে বড় স্বপ্ন দেখা তো বোধহয় আর সম্ভব নয়। এই অসম্ভব স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার যথার্থ চেষ্টাই সাম্প্রতিক সময় করছিলেন ক্রিকেটাররা। পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে দলের বন্ডিং সবই যেন ছিল স্বপ্নময়। অধিনায়ক তামিম চেয়েছিলেন ওয়ানডে সুপার লিগের সেরা চারে থেকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে। অধিনায়কের চাওয়াকেও অতিক্রম করে তৃতীয় স্থান দখল করেছে টাইগাররা। এই ধরনের একটি দলের উপর তো বাজি রাখাই যায়।

এদের নিয়ে স্বপ্ন তো দেখাই যায়। তবে বিশ্বকাপ যতই ঘনিয়ে আসছে টাইগাররা যেন ততটাই খোলোসে আটকে পড়ছে। দলের অন্ত কলহ থেকে শুরু করে নানান বিশৃঙ্খলার খবর গণমাধ্যমে বেরিয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ থেকে আড়াই মাস দূরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা নাজেহাল। টি-টোয়েন্টিতে আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারলেও যেই আসরের বিশ্বকাপ সেই ওয়ানডেতেই যেন খেয় হারিয়ে ফেলছে টাইগাররা। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হার যার যথার্থ উদাহরণ। তবে শুধু পারফরমেন্সই দেশের ক্রিকেটের কঙ্কালসার রূপ ঠিকমতো তুলে ধরছে না।

বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসরের সিদ্ধান্তটি ছিল আশ্চর্যজনক। যেই দলকে নিয়ে অধিনায়কের এত স্বপ্ন, যেই দলকে নিয়ে বিশ্বজয় করতে তিনি মত্ত। সেই দলটি ছেড়েই কেন তাহলে চলে যেতে চান তিনি? তামিম তো আর দুধের শিশু নয়। যে ছোট্ট একটি কথা কাটাকাটি কিংবা ঘটনাতে তার এই সিদ্ধান্ত। নিশ্চিতভাবেই লম্বা সময় ধরেই অবসর সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনায় জর্জরিত ছিলেন তিনি। যেটি প্রেস কনফারেন্সে কান্নার মাধ্যমে জাতির সামনে চলে আসে।

অর্থাৎ দলের ভিতরের আবহাওয়া যে খুব একটা ভালো নয় এটি মোটামুটি নিশ্চিত। কোচ চণ্ডিকা এবং সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যকার একটি অলিখিত দ্বন্দ্ব যে রয়েছে এটি কম বেশি সবারই জানা। তবুও বাংলাদেশে পা রেখেই তিনি সরাসরি সংঘাতে জড়াবেন এমনটি আগে ভাবা হয়নি। তবে তিনি জড়িয়েছেন এই ব্যাপারে নেই কোনো সন্দেহ। এবং তামিমের অবসর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে পরোক্ষভাবে যে তার অবদান রয়েছে এটিও নিশ্চিত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আবারো ক্রিকেটে ফিরতে হয় বাংলার কাপ্তানকে। তবে এটিও খুব একটা ভালো দিক নয়।

বিসিবি সভাপতি কিংবা নির্বাচকদের কোনো অনুরোধই তামিমের উপর প্রভাব ফেলছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যেটি নিশ্চিতভাবেই দুঃখজনক, তামিম যদি চেইন অফ কমান্ড মানাতেই বিশ্বাসী না হয় তাহলে তারা একসাথে কাজ করবেন কিভাবে। এই ব্যাপারটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গিয়েছে এর অর্থই হলো তামিমের উপর বোর্ড সভাপতি কিংবা ম্যানেজমেন্টের কোনো অধিকার কিংবা প্রভাব নেই।

এছাড়াও দলগত অবস্থা বাংলাদেশের খুব একটা ভালো নয়। অধিনায়ক তামিম ব্যাটসম্যান হিসেবেও নেই ভালো ছন্দে। দেশের সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যানের জ্বলে ওঠা বাংলাদেশের বিশ্বকাপে ভালো করার পূর্বশর্ত। তবে এই পূর্বশর্ত পূরণ হওয়ার কোনো হাদিস এখনো পাওয়া যায়নি। ওপেনিংয়ে তামিম যদি দুরন্ত সূচনা আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে পুরো মিডল অর্ডার এবং লোয়ার মিডল অর্ডার দারুন চাপের সম্মুখীন হয়। ফলশ্রুতিতে টাইগারদের স্কোর তিনশোর উপরে যেতে পারে না। বাংলাদেশ যে ম্যাচগুলোতেই তিনশোর্ধ্ব স্কোর করেছে তার ৮০ শতাংশেই তামিমের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে দুরন্ত সূচনা। অর্থাৎ টাইগাররা বড় স্কোর করার জন্য তামিমের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।

এছাড়াও ফিনিশিং পজিশন নিয়ে যথেষ্ট মাথা ব্যথার কারণ রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। ১৬ বছর ধরে এই দায়িত্ব নিপুণতার সাথে পালন করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অফ ফর্মের কারণে দলের বাইরে। ভবিষ্যৎ তারকা মনে করে আফিফ হোসেন অধারাবাহিকতার চরম শৃঙ্খলে বন্দী। তরুণ শামীম পাটোয়ারির উপর হয়তো ভরসা করা যায়। তবে তিনিও বড় কোনো আসরের জন্য এখনো অপরিপক্ক। সব মিলিয়ে বছরখানেক আগেও দুরন্ত ফর্মে থাকা দলটি আচমকাই বিশ্বকাপের আগে হয়ে গেল অধারাবাহিক। ছন্নছাড়া এই দলের দরকার পরিবর্তন, তা না হলে পরিবর্তন হবে না টাইগারদের বিশ্বকাপ ভাগ্য।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ