ঢাকা, রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

ম্যাচ ফিক্সিং জেনে পিছু ছাড়ছে না আফগানিস্তানের

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৩ আগস্ট ০৬ ২১:৩১:২৯
ম্যাচ ফিক্সিং জেনে পিছু ছাড়ছে না আফগানিস্তানের

আলমের খান: ক্রিকেটের সাথে ফিক্সিং এমনই নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে এই দুটিকে একই সত্তা বলে মনে হবে। যেখানে ক্রিকেট ম্যাচ চলছে সেখানেই যেন ফিক্সিংয়ের অস্তিত্ব বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিটি দেশেই কোনো না কোনো স্তরে ফিক্সিংয়ের কিছু কিছু তথ্য প্রমাণ মিলেছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ভারত প্রায় সবগুলো দেশেই কোনো না কোনো পর্যায় ফিক্সিং এর প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার আশরাফুলতো হারিয়ে গিয়েছে ফিক্সিং এর এই অটল গহবরে। শ্রীলংকান ক্রিকেটাররাও রেহাই পাননি এই ভয়াল জাল থেকে।

পাকিস্তানের প্রসঙ্গ না হয় বাদই থাকুক। এই দেশটিকে ক্রিকেট বিশ্বের ফিক্সিং রাজধানী বললেও হয়তো ভুল হবে না। একাধিক সময় আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে মিলেছে পাকিস্তানিদের ফিক্সিংয়ের জলজ্যান্ত প্রমান। এশিয়ার নতুন প্রগতিশীল দল হিসেবে আফগানিস্তান যাত্রা শুরু করেছে সদ্য। ক্রিকেটের প্রায় সব ক্ষেত্রেই যেহেতু উন্নতি করছে আফগানরা তাহলে এখানেই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? আফগানিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়া কাবুল প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ ফিক্সিংয়ের কালো গন্ধ পাচ্ছে। মূলত সেই ম্যাচে এক ওভারে ৪৮ রান দিয়েছেন আবাসিং ডিফেন্ডারসের স্পিনার আমির জাজাই। আর তার ওপর এই ঝড় চালিয়েছে শাহিন হালন্ডসের ব্যাটসম্যান সাদিকুল্লাহ আতাল।

এই সাদিকুল্লাহ আফগানিস্তানের হয়ে একটি ম্যাচও খেলেছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে মোটামুটি মারকুটে ধরনের তিনি। তবুও এক ওভারে ৪৮ রান উপহার পেয়ে যাবেন এমনটি নিশ্চয়ই তার কাছেও বাস্তবতাবিমুখ। তবে ৪৮ রান তিনি পেয়েছেন, বাস্তবেই পেয়েছেন। তবে পেয়েছেন নাকি তাকে দেওয়া হয়েছে এটাই এখন মূল প্রশ্ন। প্রথমত যে প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে সেটি হলো এক ওভারে ৪৮ রান করা সম্ভব কিভাবে? ওভারে তো বল হয় ছয়টা, সেই হিসেবে ছয় বলে ছয়টি ছক্কা মারা হলে রান হবে 36। অতিরিক্ত এই ১২ রানের উৎস কি? মূলত নিজের ওভারে নো বল ওয়াইড কোনো কিছু করাই বাকি রাখেনি জাজাই। ব্যাটসম্যানকে যথাসম্ভব রান বিলিয়ে দেওয়ার পরিপূর্ণ চেষ্টাই করেছেন তিনি।

আর বলতে হবে ব্যাটসম্যানও সেটি গ্রহণ করেছে সাদরে। ওভারের প্রথম বলই নো বল করে বসেন জাজাই। ব্যাটসম্যান সাদিকুল্লাও সাজোরে ব্যাট চালিয়ে মেরে দেন ছক্কা। পরবর্তী বলে ওয়াইড করে বসেন জাজাই। যা কিপারের হাত ফসকে বাউন্ডারি লাইনে চলে যায়। ফলস্রুতিতে কোনো বৈধ ডেলিভারি না করেই ব্যাটসম্যানকে ১২ রান উপহার দিয়ে বসে এই স্পিনার। জাজাইর পরবর্তী ছয় বলে তার ওপর মোটামুটি টাইফুন গিয়েছে। তার পরের ছয়টি বলই সীমানা ছাড়া করেন সাদিকুল্লাহ। সব মিলিয়ে এক ওভারে উঠে ৪৮ রান।

সাধারণ দর্শকবৃন্দরা হয়তো বলবেন এটি নিছক ক্রিকেটের একটি আশ্চর্য ছিল। ক্রিকেটে মাঝে মাঝে এই ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতেই পারে। এটিকে ফিক্সিং মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে নিশ্চিতভাবেই এটিকে শুধু একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা মনে করাটাও হবে হাস্যকর। মূলত জাজাই সেই ওভারে যে বলগুলো করেছে তার একটিও পেশাদার ক্রিকেটার সুলভ ছিল না। অথচ নিজের আগের ওভারগুলোতেও মোটামুটি সাবলীলভাবেই বোলিং করে গিয়েছেন তিনি। এছাড়া পরপর নো বল এবং ওয়াইড যেকোনো স্পিনারের জন্য বেশ ব্যতিক্রমীই বটে।

এখানে স্ট্রেটেজির মধ্যেও রয়েছে ফিক্সিংয়ের সম্ভাবনা। মূলত ১৯তম ওভারে সচরাচর একটি স্পিনারকে বোলিংয়ে দেখাই যায় না। কবে এমনটি শেষ দেখেছেন এটি ভাবতেও বোধহয় বেশ কিছু সময় নিতে হবে সবার। বিশেষ করে সাদিকুল্লাহ যখন এরকম আগুনে ফর্মে ছিল তখন কেন একটি স্পিনারকে বোলিংয়ে এনেছেন অধিনায়ক এটিও রহস্যজনকই বটে। সব মিলিয়ে এই ম্যাচে ফিক্সিং হয়েছে এমনটি জোড় গলায় কেউ বলতে পারছে না। তবে সম্ভাবনা যে রয়েছে এটিও স্বীকার করে নিতেই হবে। বিশ্ব ক্রিকেটে হওয়া হাজার হাজার ফিক্সিং এর ঘটনার মধ্যে মাত্র প্রমাণ হয় গুটি কয়েক। হয়তো এই ঘটনাটিও সেই হাজারের মধ্যেই রয়ে যাবে। গুটি কয়েকের মধ্যে আসার সৌভাগ্য তো আর সবার হয় না।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ