ঢাকা, শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২

গোল উৎসব করলো জার্মানি

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৪ জুন ১৫ ০৯:১২:১৯
গোল উৎসব করলো জার্মানি

প্রথম ২০ মিনিটে দুটি শটে দুটি গোল হলো, দুবারই বল জড়াল জালে। বিরতির আগে আরেকটি গোল এবং স্কটল্যান্ডের ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া। বাকি সময়ে একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দুর্দান্ত জয়ে শুরু করল জার্মানি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের অভিযান।

মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শুক্রবার রাতে উদ্বোধনী ম্যাচে ৫-১ গোলে জিতেছে তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা। তাদের গোলগুলো করেন ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ, জামাল মুসিয়ালা, কাই হাভার্টজ, নিকলাস ফুয়েলখুগ এবং এমরে কান।

প্রতিপক্ষের এমন দাপুটে ও আক্রমণাত্মক ফুটবলের কোনো জবাবই দিতে পারেনি স্কটল্যান্ড। পুরো ম্যাচে ৭০ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২০টি শট নেয় জার্মানি, যার ১০টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে, স্কটিশরা একটিমাত্র শট নিতে পেরেছে, সেটাও লক্ষ্যভ্রষ্ট। তাদের একমাত্র গোলটি আসে প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোল থেকে।

ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ৫৪ সেকেন্ড, মাঝমাঠেরও বেশ আগে থেকে সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো বল বুক দিয়ে নামিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিরৎজ, শটও নেন; কিন্তু গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে পারেননি। অবশ্য মুহূর্ত বাদেই ওঠে অফসাইডের পতাকা।

ওই আক্রমণে দলের মনোভাব বুঝিয়ে দেওয়ার পর গোল পেতে দেরি হয়নি স্বাগতিকদের। দশম মিনিটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান ২০২৩-২৪ মৌসুমে বুন্ডেসলিগার সেরা খেলোয়াড় ভিরৎজ। ডান দিক থেকে জসুয়া কিমিখের পাস বক্সের মুখে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে গোল করেন বায়ার লেভারকুজেনের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

প্রায় ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে খেলতে থাকা জার্মানি ১৯তম মিনিটে গোলের জন্য দ্বিতীয় শট নেয় এবং সেটাও পায় জালের দেখা। ইলকাই গিনদোয়ানের দারুণ পাসে কাই হাভার্টজকে খুঁজে পায়। বক্সে তিনি শট নিতে সামান্য দেরি করেন; তবে আর্সেনাল মিডফিল্ডার শান্ত থেকে বক্সের মাঝামাঝি কাটব্যাক করেন। বল ধরে জোরাল শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুসিয়ালা।

সাত মিনিট পর আবারও ভীতি ছড়ান মুসিয়ালা। বক্সে ঢোকার মুখে তিনি পেছন থেকে ফাউলের শিকার হওয়ায় প্রথমে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি; পরে ভিএআরের সাহায্যে ফ্রি কিক দেন। হাভার্টজের নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

প্রতিপক্ষের আক্রমণের ঢেউ সামলাতে গিয়ে প্রথমার্ধে সেভাবে নিজেদের ঘর ছেড়েই বের হতে পারেনি স্কটিশরা। করতে পারেনি উল্লেখযোগ্য কোনো আক্রমণও।

৪২তম মিনিটে গিনদোয়ানের দারুণ হেড গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিলেও, পরমুহূর্তের ঘটনায় অনেক বড় ধাক্কা খায় স্কটল্যান্ড। বলা যায়, ম্যাচ থেকেই ছিটকে পড়ে তারা।

গিনদোয়ান দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় শট নিতে গেলে তাকে বিপজ্জনক ফাউল করে বসেন রায়ান পোটিয়াস। ভিএআর মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি এবং ওয়াটফোর্ডের এই ডিফেন্ডারকে দেখান লাল কার্ড। আর সোজাসুজি নেওয়া স্পট কিকে দলকে জয়ের পথে আরও এগিয়ে নেন হাভার্টজ। ১৯৮৪ সালে ফ্রান্সের পর, প্রথম দল হিসেবে ইউরোর গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচে প্রথমার্ধে তিন গোল করল জার্মানি।

দ্বিতীয়ার্ধেও একইরকম চাপ ধরে রেখে খেলতে থাকে জার্মানরা। ৫০তম মিনিটে আন্টোনিও রুডিগারের দূর থেকে নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আঙ্গুস গুন।

তবে এই অর্ধেও প্রতিপক্ষের দাপটের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৬৩তম মিনিটে হাভার্টজের বদলি নামা নিকলাস ফুয়েলখুগ ডি-বক্সে বল পেয়ে বুলেট গতির শটে স্কোরলাইন ৪-০ করেন। খানিক পর আবারও জালে বল পাঠান ফুয়েলখুগ। তবে এবার মেলেনি গোল, অফসাইডে ছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই ফরোয়ার্ড।

জার্মানির একক আধিপত্যের মাঝেই ম্যাচ শেষের দিকে যাচ্ছিল। এর মাঝেই ৮৭তম মিনিটে আচমকা সান্ত্বনাসূচক গোলটি পায় স্কটল্যান্ড। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের নেওয়া ফ্রি কিকে বল বক্সে পেয়ে ঠিকমতো হেড করতে পারেননি স্কট ম্যাককেনা; কিন্তু বল ডিফেন্ডার রুডিগারের মাথায় লেগে চলে যায় জালে।

ক্ষণিকের সেই কষ্ট ভুলিয়ে দেয়ার জন্য সময় নেয়নি সবশেষ ১৯৯৬ সালের ইউরো জয়ীরা। তিন মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে, দুই বদলির নৈপুণ্যে পঞ্চম গোলটি করে তারা। টমাস মুলারের পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন ডর্টমুন্ডের মিডফিল্ডার কান।

সবশেষ বড় তিন টুর্নামেন্টে জার্মানির গল্প ছিল হতাশায় মোড়া এবং প্রতিবারই যার শুরু হয়েছিল প্রথম ম্যাচ হেরে। গত দুই বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় তারা। এর মাঝে গত ইউরোয় কোনোমতে গ্রুপের বৈতরণী পার হলেও আটকে যায় শেষ ষোলোয়।

সেই বৃত্ত ভেঙে এবার অসাধারণ শুরু পেল চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী বুধবার হাঙ্গেরির মুখোমুখি হবে নাগেলসমানের দল।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ