রোজা অবস্থায় ইনজেকশন ও ইনসুলিন নেয়া যাবে কিনা যা বলা আছে হাদিসে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজা রাখা একটি ফরজ ইবাদত, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, রোজা রাখার সময়ে অসুস্থ হলে বা চিকিৎসা প্রয়োজন হলে, অনেকের মনে সন্দেহ দেখা দেয় যে, এমন অবস্থায় রোজা কি ভাঙবে? বিশেষত ইনজেকশন এবং ইনসুলিন গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, এসব কি রোজাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? এই বিষয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের বিশদ মতামত রয়েছে, যা আজকে আমরা আলোচনা করব।

রোজা রাখার সময় চিকিৎসা গ্রহণ

বিশ্বব্যাপী ইসলামী স্কলাররা চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন, যেখানে তারা বলেছেন, কিছু বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি রোজাকে নষ্ট করবে না। তবে, এটি নির্ভর করে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কীভাবে তা শরীরের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর।

ইনজেকশন গ্রহণের প্রভাব

রোজা রাখার সময় ইনজেকশন নেওয়া রোজা নষ্ট করে না। বিশেষভাবে, যদি ইনজেকশনটি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য না হয়ে অন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজনে নেওয়া হয়, তবে এটি রোজার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ইনজেকশন দেহের মাংসপেশি বা রগে প্রবাহিত হয়ে শরীরের অভ্যন্তরে পৌঁছায়, যা একটি অস্বাভাবিক প্রবেশপথ। এই কারণে, এটি রোজা ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হয় না। (ইবনে আবিদিন, খ. ২, পৃ. ৩৯৫; ইবনু নুজাইম, খ. ২, পৃ. ২৭৮; আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, খ. ৩, পৃ. ২১৪)

ইনসুলিন গ্রহণের বিষয়

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন গ্রহণ একটি সাধারন চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং রোজা থাকাকালীন এটি নেওয়া রোজা নষ্ট করবে না। ইনসুলিন শরীরে এমনভাবে প্রবাহিত হয়, যা রোজা ভাঙার জন্য গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়। এটি রোজার ক্ষতি করে না এবং শরীরের মধ্যে কোনো ধরনের খাদ্য বা পানীয় প্রবাহিত করে না। (ইবনে আবিদিন, খ. ৩, পৃ. ৩৬৭; ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, পৃ. ৩২৭)

ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও রোজা

ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার জন্য যদি রক্ত নেওয়া হয়, যেমন সুচ দিয়ে একফোঁটা রক্ত নিয়ে শর্করা পরিমাপ করা হয়, তবে এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। এটি শরীরের মধ্যে খাদ্য বা পানীয় প্রবাহিত করে না, তাই রোজা ভাঙে না। রক্ত নেওয়া শুধুমাত্র শারীরিক পরীক্ষা, যা রোজাকে প্রভাবিত করে না।

সাম্প্রতিক ইসলামী গবেষণা ও চিকিৎসা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা যায়, রোজা রাখা অবস্থায় ইনজেকশন নেওয়া, ইনসুলিন গ্রহণ এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো কোনোভাবেই রোজা নষ্ট করে না। এসব চিকিৎসা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের খাদ্য বা পানীয় প্রবাহিত করে না, তাই রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে, এসব চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

আব্দুর রহিম/