ঢাকা, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

Zakaria Islam

Senior Reporter

হুরুব: সৌদিতে বিপদে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মে ০১ ১৩:৩৮:৪৯
হুরুব: সৌদিতে বিপদে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সৌদিতে আতঙ্কের নাম ‘হুরুব’: প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপদে

সৌদি আরব—যেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাজের স্বপ্ন সব সময় উজ্জ্বল ছিল, সেখানে এখন একটি শব্দ তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সেই শব্দটি হল ‘হুরুব’। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, যারা তাদের নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল পরিবর্তন করেন বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন, তাদের পলাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়—এবং সেই কর্মীদের জন্য অপেক্ষা করে এক কঠিন বাস্তবতা: দেশে ফেরত পাঠানো।

এই হুরুবের কারণে এবার বিপদে পড়েছেন শত শত বাংলাদেশি প্রবাসী। যারা বৈধভাবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন, তারা এখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। সম্প্রতি ২৮ এপ্রিল সৌদি আরব থেকে শতাধিক বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই এই হুরুব সমস্যার কারণে সৌদি প্রশাসনের হাতে আটক হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

কী এই ‘হুরুব’?

‘হুরুব’ শব্দটি সৌদি আরবের আইনে পলাতক বা অবৈধ কর্মীকে বোঝাতে ব্যবহার হয়। একবার যদি কেউ হুরুব হিসেবে চিহ্নিত হন, তবে তাকে আর বৈধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। নিয়োগকর্তা তাকে অনলাইনে বা সরাসরি ইমিগ্রেশন অফিসে হুরুব রিপোর্ট করলে, কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে, যদি কর্মী ২০ দিনের মধ্যে ফিরে আসে, তবে নিয়োগকর্তা রিপোর্ট তুলে নিতে পারেন। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে গেলে কর্মীকে সৌদি আরবের অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাকে জোরপূর্বক দেশে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন:

সৌদিতে ঈদ হতে পারে ৬ জুন, ৪ দিনের সরকারি ছুটি

২০২৫: সৌদি আরবে ভিসা ও ইকামা ফি বৃদ্ধি – জানুন নতুন নিয়ম

দালালদের ফাঁদে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা

দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক প্রবাসী সৌদি আরব পৌঁছানোর পরেও চাকরি বদলাতে বাধ্য হন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভালো কাজ পাওয়া, কিন্তু তারা দালালদের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হয় এবং নিয়োগকর্তার কাছ থেকে হুরুব চিহ্নিত হন। যে টাকা খরচ করে তারা সৌদি গিয়েছিলেন (গড়ে ৫.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা), সেই টাকা তারা কখনও পায়নি। বরং জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েন।

সৌদি আইন: কষ্টের পরিণতি

সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কর্মী যখন ছুটি না নিয়ে কোথাও চলে যায়, তখন তার নিয়োগকর্তা তাকে ‘হুরুব’ রিপোর্ট করেন। এমনকি ইমিগ্রেশন অফিসে বা অনলাইনে সহজেই এই রিপোর্ট করা যায়। এরপর ২০ দিনের মধ্যে কর্মী যদি কাজে ফিরে না আসেন, তাহলে তাকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

তবে, সৌদি আরবে থাকা কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী অভিযোগ করেছেন যে, তাদের ইকামা (ভিসা) বৈধ থাকা সত্ত্বেও, তারা হুরুবের কারণে সৌদি প্রশাসনের হাতে আটক হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

সমাধান কোথায়?

এই পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। দালালমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সৌদি আরবের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোই এখন সময়ের দাবি।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা নিরসনে নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি তাদের দুর্দশার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ