ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জীবন-মৃত্যুর সেই লড়াইয়ের গা ছমছমে বর্ণণা তামিম ইকবালের মুখে

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০২ ১৯:৫৮:৫০
জীবন-মৃত্যুর সেই লড়াইয়ের গা ছমছমে বর্ণণা তামিম ইকবালের মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের জীবনে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ও অলৌকিক ঘটনার কথা সামনে এসেছে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। হার্ট অ্যাটাক, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এবং ২২ মিনিট ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ থাকার মতো ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তামিম নিজেই বললেন, “জীবনে আসলে কোনো নিরাপত্তা নেই।”

ঘটনাটি ঘটে এক ম্যাচের দিনে, যখন মাঠে নামার আগেই তিনি শরীরে অস্বস্তি অনুভব করেন। প্রথমে গ্যাসের সমস্যা ভেবে ওষুধ খেয়েছিলেন, এরপর খেলায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মাঠেই হঠাৎ তীব্র পিঠ ও বুকব্যথা অনুভব করেন, ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে তাঁর বাম বাহু ও শরীরজুড়ে। সেই ব্যথা শুরু হয় প্লেয়ারদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময়, কিন্তু তখনো তিনি বুঝতে পারেননি যে এটি একটি হার্ট অ্যাটাক।

ইসিজি রিপোর্ট ছিল স্বাভাবিক

তামিমকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম ইসিজি রিপোর্টে কোনো সমস্যা ধরা না পড়ায় ডাক্তাররা গ্যাসের সমস্যা ভেবে ইনজেকশন ও ওষুধ দেন। এরপর আরও পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা নেওয়া হয় এবং সেই রিপোর্ট আসার আগেই তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন।

হাসপাতালের ওয়াশরুমে থাকাকালীন সময়েই রিপোর্ট চলে আসে এবং তখনই ডাক্তাররা নিশ্চিত হন, তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। এরপরই শুরু হয় চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

হেলিকপ্টারে উঠলে বেঁচে থাকতেন না

তামিম জানান, তাঁর এক বন্ধু আগেই হেলিকপ্টার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া যায়। হেলিকপ্টারটি ভুল করে নির্ধারিত জায়গা থেকে একটু দূরে ল্যান্ড করে, যার ফলে তাঁকে গাড়িতেই অপেক্ষা করতে হয়। আর এই ‘ভুলটিই’ তাঁকে বাঁচিয়ে দেয়।

তামিম বলেন, “আমি যদি হেলিকপ্টারে উঠতাম, সারভাইভ করার কোনো চান্সই ছিল না।”

২২ মিনিট কোনো পালস বা হার্টবিট ছিল না

হাসপাতাল ফেরার পথেই তিনি পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়েন। তাঁর কোনো পালস বা হার্টবিট ছিল না — ছিলেন ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’। এরপর তাঁকে ২২ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয় এবং তিনবার ইলেকট্রিক শক দেওয়ার পর ধীরে ধীরে পালস ফিরে আসে। সাধারণত ৫ মিনিটের বেশি সিপিআর দেওয়া হয় না, তাই এই ২২ মিনিটের সিপিআর এক প্রকার ব্যতিক্রম বলেই গণ্য করছেন চিকিৎসকেরা।

তাঁর কথায়, “আমি তখন মারা গিয়েছিলাম, আমার কোনো সেন্স ছিল না। আমার ট্রেনার ডালিম ভাই, এম্বুলেন্সের ড্রাইভার— এরা না থাকলে আমি আজ বেঁচে থাকতাম না।”

বিশ্বজুড়ে প্রার্থনা

এই ঘটনার পর দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেটাররাও তামিমের জন্য দোয়া করেন। বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে অসংখ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা তামিমকে মেসেজ পাঠান। এই ভালোবাসা ও দোয়া তামিমকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।

তিনি বলেন, “আমি এটা কোনোদিন ভুলব না। সবাই যেভাবে দোয়া করেছে, আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি এখনো মনে করি, সেদিন আল্লাহ না বাঁচালে কিছুই হতো না।”

পরিবার ও ফিরে আসা

তামিম বলেন, সবচেয়ে বেশি ভাবেন তাঁর পরিবার নিয়ে— স্ত্রী, সন্তান, মা ও ভাই। তাঁদের চোখে কান্না ও উৎকণ্ঠা দেখে তিনি উপলব্ধি করেছেন, জীবন কতটা অনিরাপদ।

“আমার স্ত্রী তখনই বুঝে গিয়েছিল কিছু একটা হয়ে গেছে। আমি সেন্সলেস ছিলাম, কিন্তু ওরা সব দেখেছে। আমার ভাইয়াকে ফোন করে বলা হয়েছিল, শক্ত থাকো। আমি তখন ক্লিনিক্যালি ডেড। এটা শুধু অলৌকিক না, এটা ছিল আল্লাহর রহমত।”

এখন কেমন আছেন তামিম?

বর্তমানে তিনি অনেকটাই সুস্থ। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন এবং চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৯৯.৯% মানুষ এমন কন্ডিশনে বাঁচে না। তাঁর দেহে যে ধকল গেছে, তাতেও এখন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন— এটি একধরনের ‘মিরাকল’।

তামিম ইকবালের এই বর্ণনা শুধু তাঁর জীবন সংগ্রামের দলিল নয়, এটি একটি প্রেরণার গল্প। চিকিৎসা, সময়োচিত সিদ্ধান্ত এবং আল্লাহর অশেষ কৃপা মিলেই যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন তামিম।

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন একটাই প্রশ্ন করছেন— তামিম আবার ফিরবেন তো? খেলোয়াড় হিসেবে হোক, নাকি ক্রিকেট প্রশাসক— তামিমের দ্বিতীয় ইনিংসের অপেক্ষায় গোটা দেশ।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ