ঢাকা, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রেনে মৃত্যুর আগে বারবার সাহায্য চেয়েছিলেন বিক্রম

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৭ ১১:৩০:২০
ট্রেনে মৃত্যুর আগে বারবার সাহায্য চেয়েছিলেন বিক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোরের আলো তখনো পুরোটা ফোটেনি। ছত্তীসগঢ় এক্সপ্রেস হু হু করে ছুটছে দিল্লি থেকে গোয়ালিয়রের দিকে। গন্তব্য এক ক্রিকেটারের স্বপ্নের মাঠ—দিব্যাং (বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন) হুইলচেয়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। কিন্তু ট্রেন যত সামনে এগোয়, পিছিয়ে পড়ে একজন মানুষের জীবন। চলন্ত ট্রেনেই থেমে যায় ৩৮ বছর বয়সী বিক্রম সিংয়ের জীবনসংগ্রাম।

বিক্রম ছিলেন ভারতের জাতীয় দিব্যাং ক্রিকেট দলের একজন প্রতিশ্রুতিশীল সদস্য। ক্রিকেট তার কাছে ছিল কেবল খেলাই নয়, ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু জীবনের সেই প্রিয় খেলাটির দিকেই এগোতে গিয়েই হারিয়ে ফেললেন নিজেকে। পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বুক চেপে ধরা যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যখন সাহায্য চাইছিলেন, তখন চারপাশ ছিল নির্বিকার।

ট্রেনে থাকা সতীর্থরা জানালেন, হজরত নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্রম জানান বুকে ব্যথার কথা। সঙ্গে সঙ্গেই রেলের হেল্পলাইন নম্বরে একের পর এক ফোন যায়। প্রতিবারই প্রতিশ্রুতি আসে—চিকিৎসক আসবেন, স্টাফ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু অপেক্ষা দীর্ঘ হয়, আর সময় হারিয়ে যায় মথুরা পৌঁছনোর আগেই।

সকাল হতে না হতেই গোটা কামরায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ক্রিকেটের পোশাক পরা এক শরীর তখন নিথর, নিস্তব্ধ। সতীর্থদের চোখে জল, হতবাক মুখে ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন—“সময়মতো চিকিৎসা পেলে কি বাঁচানো যেত না?”

গোয়ালিয়রে যে টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছিলেন, সেটি ছিল বিক্রমের বহুদিনের স্বপ্ন। বল হাতে জয়ের গল্প লিখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিয়তি লিখে দিল এক অসমাপ্ত অধ্যায়ের যন্ত্রণাময় পরিসমাপ্তি।

বিক্রমের মৃত্যু কেবল একটি জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া নয়, এটি ভারতীয় রেল ব্যবস্থার, প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের প্রতি প্রশাসনের অবহেলার এক করুণ প্রতিচ্ছবিও। যে সমাজে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড় বারবার সাহায্য চেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, সেখানে প্রশ্ন জাগেই—মানবতা কি আজও যাত্রী তালিকায় রয়েছে?

আজ গোটা ভারতের ক্রিকেটজগৎ শোকাহত। বিক্রম সিং নেই, কিন্তু তার অসহায় মৃত্যু যেন অদূর ভবিষ্যতের এক কঠিন বার্তা দিয়ে গেল—বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য নিরাপদ, সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থার সময় এখনই। নয়তো হারিয়ে যেতে থাকবে আরও বিক্রম, নিঃশব্দে, রেলপথের ধুলোয় চাপা পড়ে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ