ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দুবাই-ভারতে সস্তা, বাংলাদেশে সোনা এত দামি কেন?

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১০ ১০:৪৪:৪৭
দুবাই-ভারতে সস্তা, বাংলাদেশে সোনা এত দামি কেন?

এক ভরি সোনায় পার্থক্য ৩০ হাজার টাকা, কিন্তু দায়ী কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও বাংলাদেশে সেই দাম যেন আরও এক ধাপ ওপরে। একই ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা দুবাইয়ে যেখানে মিলছে ১.৪৩ লাখ টাকায়, ভারতের বাজারে ১.৫৫ লাখে—সেটাই বাংলাদেশে কিনতে হচ্ছে প্রায় ১.৭২ হাজার টাকায়। কেন এই তীব্র মূল্যবৈষম্য? দায় শুধু বৈশ্বিক বাজার নয়, বরং দেশের আমদানি নীতিমালাও বড় ভূমিকা রাখছে।

সোনার বর্তমান দর (২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী):

দেশসোনার দাম (২২ ক্যারেট/ভরি)বাংলাদেশি টাকায় হিসাব
দুবাই ৪,৩১৮ দিরহাম ১,৪৩,৬৭৭ টাকা
ভারত ১,০৮,৯৬৫ রুপি ১,৫৫,৪৩২ টাকা
বাংলাদেশ ১,৭২,৩৩৬ টাকা

অর্থাৎ দুবাইয়ের তুলনায় বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনা কিনতে ২৮,৬৫৯ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। ভারতের তুলনায়ও ১৬,৯০৪ টাকা বেশি।

কেন বাংলাদেশে এত দামি?

বিশ্লেষক ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মতে, এ দামের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:

১. সোনার আমদানি নীতির জটিলতা:

বাংলাদেশে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা গোল্ড মার্কেট সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। সরকার অনুমোদিত আমদানিকারক থাকলেও তারা কার্যত নিষ্ক্রিয়। সোনা আসছে মূলত ব্যাগেজ নীতির আওতায়, যা সরবরাহ সীমিত করে।

২. ব্যাগেজ বিধিমালায় কড়াকড়ি:

২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে বছরে একজন যাত্রী মাত্র একবার সোনার বার আনতে পারবেন এবং তাও ৫০,০০০ টাকার শুল্ক দিয়ে। গয়নার ক্ষেত্রেও বিনা শুল্কে আনায় সীমা দেওয়া হয়েছে ১০০ গ্রাম, তাও বছরে একবার।

৩. পরিশোধন কারখানার অভাব:

বাংলাদেশে কোনো সোনা পরিশোধনকারী কারখানা নেই। ফলে পুরোনো অলংকার গলিয়ে বা চোরাচালানের সোনা দিয়েই বাজার চালাতে হয়।

৪. অবৈধ পথে আমদানির সম্ভাবনা:

যেহেতু বৈধ আমদানি বাধাগ্রস্ত, তাই ব্যবসায়ীরা মনে করেন এই কড়াকড়ি চোরাচালানকে উৎসাহিত করবে, যা আবার বাজারে অস্থিরতা ও দুর্নীতির সুযোগ বাড়াবে।

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা?

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“ভোক্তা ও ব্যবসায়ী—দুই পক্ষই আজ সংকটে। নীতিগত সমাধান না হলে বাজারে ভাঙন আসতে পারে। দাম কমবে না, বরং আরও অস্বাভাবিক হবে।”

অন্যদিকে, বাজেট আলোচনায় সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া বেশ কিছু দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:

সোনা আমদানিতে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস

পরিশোধন কারখানায় কর অবকাশ

সোনার গয়নায় ভ্যাট ৫% থেকে কমিয়ে ২%

তবে চূড়ান্ত বাজেটে শুধু ব্যাগেজ নীতির কড়াকড়িই কার্যকর হয়েছে।

ভোক্তার কণ্ঠ:

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য বিয়েশাদি বা উৎসবের সময় অলংকার কেনা এখন যেন বিলাসিতা। এক ক্রেতা বলেন,

“একটা চেইন কিনতে গেলেও এখন বাজেট ভেঙে যাচ্ছে। আমরা তো আর দুবাই থেকে কিনে আনতে পারি না!”

দামের এই ব্যবধান শুধু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে নয়, বরং দেশের আমদানি কাঠামো ও নীতিনির্ধারকদের কৌশলগত ভুলের প্রতিফলন। প্রয়োজন এখন স্বচ্ছ ও কার্যকর সোনার নীতিমালা—যা একদিকে বাজারে স্থিতিশীলতা আনবে, অন্যদিকে চোরাচালান ও ভোক্তাভোগান্তিও কমাবে।

FAQs (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশে সোনার দাম এত বেশি কেন?

উত্তর: সোনার আমদানিতে জটিলতা, ব্যাগেজ বিধিমালায় কড়াকড়ি, পরিশোধন কারখানার অভাব ও ভ্যাট–শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সোনার দাম বাড়ছে।

প্রশ্ন ২: বিদেশ থেকে কতটুকু সোনা আনা যায় এখন?

উত্তর: এখন একজন যাত্রী বছরে একবার মাত্র ১টি সোনার বার আনতে পারবেন, এবং সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম গয়না আনতে পারবেন বিনা শুল্কে।

প্রশ্ন ৩: দুবাইয়ে সোনার দাম কত?

উত্তর: বর্তমানে দুবাইয়ে প্রতি ভরি (২২ ক্যারেট) সোনার দাম প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৭ টাকা, যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৯ হাজার টাকা কম।

প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশে সোনা কি চোরাপথে বেশি আসে?

উত্তর: বৈধ আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চোরাপথে সোনা প্রবেশের আশঙ্কা বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ