ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

BCCI-কে সুদ-সহ ৫৩৮ কোটি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ হাই কোর্টের

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১৮:৫৮:১২
BCCI-কে সুদ-সহ ৫৩৮ কোটি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রিকেট এখন শুধু খেলা নয়, কোটি টাকার ব্যবসা। আর সেই ব্যবসার সবচেয়ে ঝলমলে মঞ্চ হলো আইপিএল (IPL)। যেখানে ব্যাট-বলের বাইরেও চলে দম্ভ, দৌরাত্ম্য আর কোর্ট-কাছারির খেলা। এমনই এক পুরনো ঝামেলার নিষ্পত্তিতে এবার আদালতের কড়া বার্তা—চুক্তিভঙ্গ করলে শোধ দিতে হবে পুরো দাম! আর সেই দাম এবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) পকেট থেকে গুনতে হচ্ছে ৫৩৮ কোটি টাকা, তাও সুদ-সহ!

২০১১ সাল। আইপিএলে যোগ দিয়েছিল এক নতুন দল—কোচি টাস্কার্স কেরল। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি তাদের স্বপ্নযাত্রা। নানা টানাপোড়েন আর প্রশাসনিক জটিলতায় বোর্ড তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিন্ন করে দেয়। বোর্ডের দাবি ছিল, সময়মতো ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে না পারায় দলটিকে ছেঁটে ফেলা হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ—প্রথমে রঁদেভু স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড (RSW) ও পরে কোচি ক্রিকেট প্রাইভেট লিমিটেড (KCPL)—এই অভিযোগ মানতে রাজি হয়নি।

তাদের পাল্টা দাবি, স্টেডিয়াম নিয়ে জট, শেয়ার হস্তান্তরের বাধা, এমনকি আইপিএলে ম্যাচের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া—সব মিলিয়ে যথাসময়ে অর্থ জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবুও বোর্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তারপরও হঠাৎ করে চুক্তি বাতিল করে বোর্ড আগাম দেওয়া টাকাও ফিরিয়ে দেয়নি। তাই শুরু হয় এক দীর্ঘ আইনি লড়াই।

২০১৫ সালে সালিশি আদালতের রায়ে জয় পায় কোচির পক্ষ। রায়ে বলা হয়, BCCI-কে আরএসডব্লুকে ফেরত দিতে হবে ১৫৩ কোটি টাকা এবং কেসিপিএলকে ৩৮৪ কোটি টাকা, যা সুদ-সহ ৫৩৮ কোটিরও বেশি। বোর্ড এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বম্বে হাই কোর্টে যায়। তাদের বক্তব্য ছিল, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি না দেওয়া চুক্তিভঙ্গের শামিল এবং এই সালিশি সিদ্ধান্ত চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

তবে আদালত অন্য কথা বলেছে। বিচারপতি আর আই চাগলা স্পষ্ট জানিয়ে দেন—বোর্ড যে আইনের ৩৪ নম্বর ধারা টেনে নিজেদের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে, তা প্রমাণের অভাবে টেকে না। বরং বোর্ডের দোষেই চুক্তিভঙ্গ হয়েছে এবং কোচি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। তাই পুরনো সালিশি রায় বহাল রাখা হয়েছে।

ফলাফল—ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে এখন প্রায় ৫৩৮ কোটি টাকা সুদ-সহ ফেরত দিতে হবে। ক্রিকেটের মাঠে যারা প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে, তারা এবার হেরে গেল আদালতের কাঠগড়ায়।

এই রায় শুধু আর্থিক জরিমানা নয়, ক্রিকেট প্রশাসনের কাছে এক স্পষ্ট বার্তা—আইনের চোখে সবাই সমান। চুক্তি যদি ভাঙো, তাহলে দামের প্রস্তুতিও রাখতে হবে। আইপিএলের ঝলমলে পর্দার আড়ালে যে কঠিন বাস্তব লুকিয়ে থাকে, এই রায় যেন তারই এক উন্মোচন!

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ