ঢাকা, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

তালাকের পর স্ত্রীকে ফেরানোর ইসলামি পদ্ধতি জেনে নিন

২০২৫ জুন ১৯ ২২:৪৫:৪৭
তালাকের পর স্ত্রীকে ফেরানোর ইসলামি পদ্ধতি জেনে নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিন যে মানুষটিকে ‘জীবনসঙ্গী’ বলে কাছে টেনেছিলেন, সময়ের এক বিচিত্র মোড়ে তাকেই হয়তো তালাক দিয়ে বসেছেন আপনি। অভিমান, রাগ কিংবা ভুল বোঝাবুঝির জেরে যে সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ভালোবাসার নাম দিয়ে, তা আজ ভেঙে গেছে 'তালাক' শব্দটির উচ্চারণে। কিন্তু তালাক দেওয়ার পর বুকের ভেতরটা হঠাৎ করে ফাঁকা লাগছে? মনে হচ্ছে—সে ফিরে আসুক, আবার সব আগের মতো হোক?

এই ফিরে পাওয়ার পথ আছে, তবে তা আবেগ দিয়ে নয়—শরীয়তের আলো দিয়ে খুঁজে নিতে হবে। ইসলামে তালাকের পর স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়ার স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে। অনেকেই তা না জেনে ভুল পথে হাঁটেন, হয়ে ওঠেন গুনাহগার। তাই চলুন জেনে নিই, কীভাবে ইসলাম তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার পথ দেখায়।

প্রথমে বুঝে নিন—তালাকের ধরন কী ছিল?

ইসলামে তালাকের প্রকারভেদ আছে। প্রতিটি তালাকের পর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর করণীয়ও ভিন্ন। ফিরে পাওয়ার পথ তালাকের ধরনের ওপরই নির্ভর করে।

১. তালাকে রাজঈ (প্রথম বা দ্বিতীয় তালাক):

এই তালাক হল এমন, যেখানে ‘ফেরার পথ’ এখনো খোলা। স্বামী যদি স্ত্রীকে প্রথম বা দ্বিতীয়বার তালাক দেন এবং এখনো ইদ্দতের সময় শেষ না হয়, তাহলে তাকে ফেরত নেওয়া যায়—এটাকে বলে ‘রুজু’ করা।

রুজুর দুইটি উপায়:

মৌখিকভাবে:

বলতে পারেন— “আমি তোমাকে ফেরত নিলাম”, “আবার একসাথে থাকতে চাই” ইত্যাদি।

কার্যত:

ইদ্দতের সময় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করাও রুজু হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই রুজুর জন্য স্ত্রীর বা তার পরিবারের অনুমতি লাগে না। কারণ তালাকে রাজঈ অবস্থায় স্ত্রী এখনো স্বামীর অধীনে।

সূরা বাকারা, আয়াত ২২৮ বলছে—

"তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার তাদের স্বামীদের রয়েছে, যদি তারা মিলনের ইচ্ছা পোষণ করে।"

২. তালাকে বাইন (সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার তালাক):

এই তালাক এমন, যেখানে ‘ফেরার দরজা’ আছে, তবে নতুন চাবি দিয়ে। মানে, স্বামী-স্ত্রী পুনরায় এক হতে চাইলে নতুন করে বিবাহ করতে হবে।

খোলা তালাক (স্ত্রীর অনুরোধে বিবাহ বিচ্ছেদ) কিংবা শর্তযুক্ত তালাক এ ধরনে পড়ে।

নতুন বিয়েতে প্রয়োজন হবে মোহর, সাক্ষী এবং স্ত্রীর সম্মতি।

৩. তালাকে মুগাল্লাযা (তৃতীয় বা একত্রে তিন তালাক):

এটি সেই তালাক, যেখানে ‘ফেরার রাস্তা’ বন্ধ—তবে বিকল্প পথ আছে।

স্বামী যদি স্ত্রীকে তিনবার তালাক দেন (একত্রে বা আলাদা সময়ের মধ্যে), তাহলে আর সরাসরি রুজুর সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় স্ত্রীকে ফেরত পেতে হলে:

স্ত্রীকে একজন ভিন্ন পুরুষকে শরীয়তসম্মতভাবে বিয়ে করতে হবে।

সে স্বামী যদি তালাক দেয় বা মারা যায়, এবং ইদ্দত শেষ হয়—তবেই আগের স্বামী নতুন করে বিয়ে করতে পারবেন।

একে বলা হয় হিল্লা শরীয়ি, তবে এটা যেন কৌশলী বা নাটকীয় না হয়। হোক সত্যিকার বিয়ে।

ইদ্দতের সময় কীভাবে গণনা হবে?

যদি হায়েজ আসে: তিন হায়েজ (মাসিক)।

হায়েজ না এলে (অল্প বয়স বা বেশি বয়স): তিন মাস।

গর্ভবতী হলে: সন্তান জন্ম পর্যন্ত।

একটি ভুল, সারাজীবনের আফসোস

অনেকে রাগের বশে তালাক দেন, পরে স্ত্রীকে মুখে বলেই ‘ফেরত’ নিয়ে নেন, অথচ শরীয়তের নিয়ম জানেন না। আবার কেউ হিল্লার নামে নাটক সাজিয়ে স্ত্রীকে ফেরত আনেন—যা বড় গুনাহ।

তাই তালাক দেওয়ার আগে যেমন ভেবে নিতে হয়, তেমনি স্ত্রীকে ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রেও চাই ইসলামী জ্ঞান, হিকমত আর নিয়তের পবিত্রতা।

তথ্যসূত্র:

আল কুরআন: সূরা বাকারা (২:২২৮), সূরা তালাক (৬৫:৪)

সহিহ বুখারী: হাদিস ৫২৬১

সহিহ মুসলিম: হাদিস ১৪০৭

ফাতাওয়া আলমগীরি: ১/৩৭৩

বিয়ে যেমন আল্লাহর নিআমত, তেমনি তালাকও তাঁর দেওয়া বৈধ একটি পথ—কিন্তু শেষ রাস্তা। তাই ভুল করে যদি সম্পর্ক ভেঙেই যায়, তবে সেটি ফিরিয়ে আনতেও চাই সঠিক জ্ঞান, ধৈর্য ও আত্মশুদ্ধি।

মনে রাখুন, সম্পর্ক হারিয়ে গেলে আফসোস নয়—শরীয়তের পথে ফিরে চললেই হয়তো আবার ভালোবাসার দরজায় কড়া নাড়া যাবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ