ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

নিজেদের প্রশিক্ষণে বিনা খরচে এক লাখ কর্মী নেবে জাপান

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৬:৩৫:১৯
নিজেদের প্রশিক্ষণে বিনা খরচে এক লাখ কর্মী নেবে জাপান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বিশাল সুযোগের দরজা খুলছে জাপানে। বিশ্বজুড়ে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়তে থাকায় এবার নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেবে দেশটি। আর সবচেয়ে বড় কথা—এই কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেবে জাপান নিজেরাই, কোনো খরচ ছাড়াই।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের সময় এই ঘোষণা এসেছে। সফরের সময় টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় জাপানের প্রশিক্ষকরা বাংলাদেশে এসে কর্মীদের জাপানি ভাষা ও নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ করে তুলবেন।

প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা ও চাকরি—সবকিছু এক ছাতার নিচে

নরসিংদীর মনোহরদীতে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-তে জাপানের নিজস্ব প্রশিক্ষকরা ভাষা ও স্কিল প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রশিক্ষণ শেষে যারা স্পেসিফায়েড স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট (SSW) উত্তীর্ণ হবেন, তারা এক টাকাও খরচ না করে জাপানে পাড়ি জমাতে পারবেন।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা এক লাখ দক্ষ কর্মী প্রস্তুত করবো। এটা বিশাল চ্যালেঞ্জ হলেও বাস্তবায়ন সম্ভব।”

কোন কোন খাতে কর্মী যাবে?

যদিও নির্দিষ্ট খাতের তালিকা এখনো প্রকাশ হয়নি, তবে বিএমইটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—চুক্তির কপি হাতে পাওয়ার পরই জানানো হবে কোন কোন সেক্টরে কর্মী যাবে এবং সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হবে।

ভাষা ও দক্ষতার ঘাটতি ছিল বড় বাধা

২০০৪ থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৫ হাজার ১৪ জন কর্মী জাপানে গেছে। মূল বাধা হিসেবে ধরা হয় জাপানি ভাষা ও নির্দিষ্ট স্কিলে দক্ষতার অভাবকে। তবে এবার সেই বাধা দূর করতে নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছে জাপান।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. শহিদুল আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের অনেক কর্মী ভাষা শেখে, কিন্তু গুণগত মান নিশ্চিত না হওয়ায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। এবার সরাসরি জাপানি প্রশিক্ষক দিয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাপান থেকে ৬৪.৯৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগের বছর (২০২২-২৩) এসেছিল ১১২.৯৯ মিলিয়ন ডলার। যদিও কর্মী সংখ্যা কম, কিন্তু আয় ভালো—এটাই জাপানকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য করে তুলছে।

অভিবাসন বিশ্লেষকদের পরামর্শ

অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভাষা শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে হবে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, “ভাষা শেখানোর মান নিশ্চিত না করলে অনেকেই মাঝপথে ছিটকে যাবে। কোটা পূরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি।”

আশাবাদী প্রধান উপদেষ্টা

টোকিওতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’-এ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা শুধু কাজের জন্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের তরুণদের বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা অর্জনের পথ খুলে দেবে। সরকার এর জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে।”

FAQ ও উত্তর:

প্রশ্ন: জাপান কতজন বাংলাদেশি কর্মী নেবে?

উত্তর: আগামী পাঁচ বছরে জাপান এক লাখ বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী নেবে।

প্রশ্ন: এই কর্মীদের প্রশিক্ষণ কোথায় হবে?

উত্তর: প্রথম ধাপে নরসিংদীর টিটিসিতে জাপানের প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণ দেবেন।

প্রশ্ন: প্রশিক্ষণের জন্য কোনো খরচ লাগবে কি?

উত্তর: না, প্রশিক্ষণ এবং জাপানে যাওয়ার জন্য কর্মীদের কোনো খরচ হবে না।

প্রশ্ন: জাপানে যেতে কী ধরনের দক্ষতা লাগবে?

উত্তর: নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক স্কিল ও জাপানি ভাষা দক্ষতা প্রয়োজন হবে।

প্রশ্ন: কারা এই সুযোগের জন্য আবেদন করতে পারবেন?

উত্তর: যারা ভাষা ও নির্দিষ্ট স্কিলে প্রশিক্ষণ নিয়ে SSW পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তারাই এই সুযোগ পাবেন।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

দাবি না মানলে রবিবার ‘ঢাকা ব্লকেড’

দাবি না মানলে রবিবার ‘ঢাকা ব্লকেড’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্দোলন এখন আর শুধু ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীদের একক প্রতিবাদ নয়। এটি পরিণত হয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর... বিস্তারিত