ঢাকা, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

এক কোম্পানির জোরেই শেয়ারবাজারে ফিরলো স্বস্তি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১৬:২৫:৫৮
এক কোম্পানির জোরেই শেয়ারবাজারে ফিরলো স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস (৩০ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১.৩৮ পয়েন্ট কমে ৪,৮৩৮.৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সামান্য এই সংশোধনের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল একক একটি কোম্পানির ব্যতিক্রমধর্মী পারফরম্যান্স। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দিনের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি এবং সর্বাধিক সূচক-অবদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আজ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯.৭৬ শতাংশ বেড়ে ৪০ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়, যা কোম্পানিটির গত এক মাসের সর্বোচ্চ দর। লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির শেয়ারে চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, ফলে কোম্পানিটি বিক্রেতা সংকটে পড়ে এবং ট্রেডিং সেশনে ‘হল্টেড’ হয়।

সারাদিনে ইসলামী ব্যাংকের ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৪টি শেয়ার লেনদেন হয়, যার মোট আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ডিএসই সূচকে এককভাবে ব্যাংকটি প্রায় ২১ পয়েন্টের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা মূল সূচককে বড় ধরনের পতন থেকে বিরত রাখে।

‌ডিএসইতে টানা দুটি দিনে বড় অবদান

এই প্রবণতা আগের দিন রোববারও দেখা গেছে। সেদিনও ইসলামী ব্যাংক সূচকে ২০ পয়েন্ট যুক্ত করে, যেখানে মূল সূচক বেড়েছিল ৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির পারফরম্যান্স না থাকলে সূচকে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যেত। দুই কার্যদিবস মিলিয়ে এটি ডিএসই সূচকে ৪১ পয়েন্টের যোগফল করেছে, যা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

‌মূলধন ও রিজার্ভ কাঠামো

১৯৮৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া ইসলামী ব্যাংক ‘এ’ ক্যাটাগরির একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যাংকের রিজার্ভ পরিমাণ ৫ হাজার ৬৭৪ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা তার মূলধনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ।

ডিভিডেন্ড নীতির দিক থেকে, ২০১৭ সালের পর থেকে ব্যাংকটি প্রতি বছর ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে ২০২৪ অর্থবছরের জন্য এখনো কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তিন মাস সময় চেয়ে নিয়েছে, যার মাধ্যমে বোঝা যায় তারা নীতি নির্ধারণে আরও সময় নিচ্ছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, ব্যবস্থাপনায় এস আলম গ্রুপের প্রভাব ব্যাংকটির আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।

‌শেয়ারহোল্ডিং কাঠামো

ব্যাংকটির মোট শেয়ারের পরিমাণ ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ০.১৮ শতাংশ, যা তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ৭৪.৮২ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে এবং ১৭.৮৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৭.১১ শতাংশ শেয়ার।

‌পর্যবেক্ষণ

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেকাংশেই নির্ভর করছে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির ওপর, তখন ইসলামী ব্যাংকের এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও তারল্যবান শেয়ার হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। একক কোম্পানির এই ধরনের অবদান বাজার ব্যবস্থাপনা এবং পোর্টফোলিও রিস্ক ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ