ঢাকা, শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নতুন আইনে শেয়ারবাজারে সুশাসন আনতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০১ ১০:৩০:৫৬
নতুন আইনে শেয়ারবাজারে সুশাসন আনতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কারসাজি, স্বচ্ছতার অভাব এবং নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতার অভিযোগ এবার আইনগতভাবে সমাধানের পথে। বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন, ২০২৫–এর খসড়ায় এমন কিছু বড় ধরনের সংস্কার প্রস্তাব করেছে, যা বাস্তবায়িত হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় আসতে পারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন।

প্রস্তাবিত আইনে শেয়ার কারসাজির শাস্তি দ্বিগুণ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগ নিরাপত্তায় শক্তিশালী কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে। খসড়াটি বর্তমানে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহে।

কারসাজির শাস্তি দ্বিগুণ, বাড়ছে জরিমানাও

নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রতারণামূলক পদ্ধতিতে, সুবিধাভোগী লেনদেনে, বাজার প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে অথবা অসদুপায়ে সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ে প্ররোচনা দেন, তাহলে সেটি শেয়ার কারসাজি হিসেবে বিবেচিত হবে।

বর্তমানে এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা রয়েছে। নতুন আইনে এই শাস্তি দ্বিগুণ করে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বোর্ড গঠনে আসছে স্বাধীন নিয়োগ কমিটি

প্রস্তাবিত আইনের অন্যতম প্রধান পরিবর্তন হচ্ছে—বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতি।

বর্তমানে সরকার সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু খসড়ায় বলা হয়েছে, নিয়োগ হবে স্বাধীন বাছাই কমিটির মাধ্যমে, যাতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়।

বাছাই কমিটিতে যাঁরা থাকবেন:

কমিটি প্রতিটি পদের জন্য দুজন করে প্রার্থী সুপারিশ করবে, যাদের মধ্য থেকে সরকার একজনকে নিয়োগ দেবে। চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের মর্যাদা, বেতন ও সুবিধা ভোগ করবেন।

বিশ্লেষকদের অভিমত: শুধু শাস্তি নয়, দরকার কাঠামোগত সংস্কার

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনের ভাষা যত শক্ত হোক, প্রয়োগ না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আইসিবির বোর্ড চেয়ারম্যান ড. আবু আহমেদ বলেন,

“কারসাজিকারীরা আইনের ফাঁকফোকর জানে। শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে তাদের থামানো যাবে না। দরকার বিনিয়োগ কাঠামোয় বড় ধরনের সংস্কার।”

তিনি আরও বলেন,

“মার্জিন লোন সীমিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যেন নিজের টাকায় বিনিয়োগ করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্বল কোম্পানির প্রতি আকর্ষণ কমাতে প্লেসমেন্ট শেয়ার বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ভালো মিউচুয়াল ফান্ডে কমিশন সুবিধা বাড়িয়ে গুণগত কোম্পানির শেয়ারে চাহিদা তৈরি করা জরুরি।”

আসবে কি কাঙ্ক্ষিত সুশাসন?

নতুন আইনের খসড়া বাস্তবায়ন হলে বিএসইসির কার্যক্রম আরও স্বাধীন ও স্বচ্ছ হবে, নিয়ন্ত্রকের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমবে, এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে—এমনটি মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

তবে বাস্তবতা বলছে, আইন যতই কঠোর হোক, বাস্তবায়নের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা না থাকলে পরিবর্তন আসবে না। তাই এই আইনের পেছনে থাকা রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কতটা দৃঢ়, সেটাই নির্ধারণ করবে শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ