ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে বাবার নাম মুছে ফেলার নজিরবিহীন রায়

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ১২:৩০:২২
জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে বাবার নাম মুছে ফেলার নজিরবিহীন রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: একটা সাধারণ দাম্পত্য জীবনের ছবি যেন ভেঙে পড়ল এক মহিলার আরেকজন পুরুষের আদরের ছায়ায় বড় হওয়া পাঁচ সন্তানের বাবার জীবনে। বাহরাইনের এক ব্যক্তি ৪০ বছর ধরে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গড়েছেন পরিবারের সুখ-শান্তি। দায়িত্বপূর্ণ বাবার মতোই হাস্যোজ্জ্বল মমতা দিয়ে পাঁচ সন্তানকে বড় করেছেন তিনি। কিন্তু সময়ের ধারায় সামনে এল এমন এক ভয়াবহ সত্য, যা তাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি এক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেল, তিনি শারীরিকভাবে কখনোই সন্তান জন্মদানে সক্ষম নন। সন্দেহ হলে স্ত্রী গর্ভে জন্ম নেওয়া পাঁচ সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করান, যা প্রমাণ করে—তাঁর সাথে ওই সন্তানদের জৈবিক কোনো সম্পর্ক নেই।

শোকের অন্ধকারে আদালতের সিদ্ধান্ত

এই ঘটনা নিয়ে বাহরাইনের উচ্চ শরিয়াহ আদালতে মামলা হয়। আদালত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে পিতৃত্ব বাতিলযোগ্য বলে রায় দেন। রায়ের ফলে ওই ব্যক্তির নাম পাঁচ সন্তানের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ সব সরকারি নথি থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়—একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

বাদী পক্ষের আইনজীবী ইবতিসাম আল সাবাগ জানান,

“৪০ বছর ধরে বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই ব্যক্তি। অথচ পরীক্ষায় দেখা গেল, তিনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। এটি শুধু আইনি না, মানবিক দিক থেকেও গভীর প্রভাব ফেলে।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“এই রায় শুধু এক ব্যক্তির জীবনে নয়, একটি পরিবারের সামাজিক কাঠামোতে এক ধাক্কা। এখন থেকে এমন মামলার জন্য একটি সুস্পষ্ট আইনি ভিত্তি তৈরি হলো।”

আধুনিক বিজ্ঞানের আলোয় শরিয়াহ আইন

এই রায় মুসলিম বিশ্বের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত। আধুনিক ডিএনএ প্রযুক্তির সাহায্যে পিতৃত্ব যাচাই ও বাতিলের পথ সুগম করলো এই রায়। পরিবার ও সমাজের কাঠামোকে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

কিন্তু একই সঙ্গে উত্থাপিত হচ্ছে অনেক প্রশ্ন—সন্তানের পরিচয় ও সামাজিক নিরাপত্তা কী হবে? এমন ঘটনায় শিশুর অধিকার ও দায়িত্ব কাদের ওপর থাকবে?

ভবিষ্যতের জন্য এক দৃষ্টান্ত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় আধুনিক বিজ্ঞান ও ধর্মীয় আইনের সংমিশ্রণ ঘটানোর এক অনন্য উদাহরণ। এটি ভবিষ্যতে পিতৃত্ব সংক্রান্ত আইনি বিবাদে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ