ঢাকা, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সূচকের উল্লম্ফন, কিন্তু পোর্টফোলিও লাল

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ১৫:৩৯:০৮
সূচকের উল্লম্ফন, কিন্তু পোর্টফোলিও লাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা পতনের পর গত কয়েকদিন ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। পতনের সর্বনিম্ন অবস্থান ৪৬৬৪ পয়েন্ট থেকে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে আজ ৫৫৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনও ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকার ঘর। আপাতদৃষ্টিতে এটি বাজারের জন্য বড় স্বস্তির খবর হলেও, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের পোর্টফোলিও এখনো লাল রঙেই রয়ে গেছে। এই অসামঞ্জস্যই এখন বাজারের প্রধান আলোচনার বিষয়। প্রশ্ন উঠেছে, সূচকের এই বড় উল্লম্ফনের পেছনে আসল কারণ কী এবং এর সুবিধা আসলে কারা পাচ্ছে?

আজকের বাজারের চিত্র:

রবিবার (৩ আগস্ট, ২০২৫) দিনশেষে ডিএসই'র পরিসংখ্যান একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরে:

DSEX সূচক:

৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫৫৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে (বৃদ্ধি ১.৭০%)।

DS30 সূচক:

৩৬ পয়েন্ট বেড়ে ২১৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে (বৃদ্ধি ১.৭১%)।

লেনদেন:

১,১৩৭ কোটি টাকা, যা তারল্য প্রবাহের ইঙ্গিত দেয়।

দর বৃদ্ধি: ২১৮ টি কোম্পানির।

দর পতন: ১২২ টি কোম্পানির।

অপরিবর্তিত: ৫৮ টি কোম্পানির। কাগজে-কলমে বাজারের স্বাস্থ্য বেশ ভালো মনে হলেও বাস্তবতা হলো, এই বৃদ্ধি সার্বজনীন নয়।

বিশ্লেষণ: কেন সূচক বাড়ছে, কিন্তু আপনার শেয়ার বাড়ছে না?

বাজারের এই আচরণের পেছনে মূল কারণ হলো, সূচকের বৃদ্ধি কয়েকটি নির্দিষ্ট বড় মূলধনী কোম্পানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।

১. ব্লু-চিপ বা বড় কোম্পানির প্রভাব: ডিএসইএক্স সূচকটি বাজার মূলধনের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হয় (Market-Cap Weighted)। এর অর্থ হলো, যে কোম্পানির বাজার মূলধন যত বেশি, সূচকে তার প্রভাবও তত বেশি। ডিএস৩০ সূচকের প্রায় ১.৭১% বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে মূলত ব্লু-চিপ বা বড় মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামই সূচককে টেনে তুলেছে।

২. অধিকাংশ শেয়ার এখনো তলানিতে: যখন সূচক ৪৬৬৪ পয়েন্টের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছিল, তখন ভালো-মন্দ প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দরই ব্যাপক হারে কমেছিল। কিন্তু এখনকার এই ৮০০ পয়েন্টের প্রত্যাবর্তনে ছোট ও মাঝারি মূলধনের (Small & Mid-cap) অসংখ্য শেয়ার অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অনেক শেয়ার এখনো ফ্লোর প্রাইস বা তার কাছাকাছি দামে আটকে আছে।

৩. নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ: প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ সাধারণত নিরাপদ ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকমিউনিকেশন এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের বাছাই করা কিছু শেয়ারে তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ফলে এই শেয়ারগুলোর দাম বাড়ায় সূচক ইতিবাচক থাকছে, কিন্তু অন্যান্য খাতের শেয়ারগুলো অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা ও করণীয় এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি: সূচক দেখে বিভ্রান্ত হবেন না: আপনার পোর্টফোলিওর লাভ-ক্ষতি বাজারের সার্বিক সূচকের ওপর নির্ভর করে না, বরং আপনার নিজের কেনা শেয়ারগুলোর পারফরম্যান্সই আসল।

গুজবে কান দেবেন না: "অমুক শেয়ার অনেক বাড়বে"—এই ধরনের গুজবে কান দিয়ে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।

ধৈর্য ও কৌশল: যদি আপনার পোর্টফোলিওতে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার থাকে এবং সেগুলো এখন কম দামে থাকে, তবে ধৈর্য ধারণ করাই ভালো কৌশল হতে পারে। বাজার সার্বিকভাবে ঘুরে দাঁড়ালে এসব শেয়ারও মূল্য ফিরে পাবে।

পোর্টফোলিও পর্যালোচনা করুন: এটাই সঠিক সময় আপনার পোর্টফোলিও পর্যালোচনা করার। দুর্বল, 'জেড' ক্যাটাগরি বা দীর্ঘমেয়াদে লোকসানে থাকা কোম্পানি থেকে বেরিয়ে এসে ভালো ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা লাভজনক কোম্পানিতে বিনিয়োগের কথা ভাবুন।

সূচকের এই বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে বাজারের প্রতি আস্থা ফেরাতে সাহায্য করছে। তবে এই উত্থান কতটা টেকসই এবং বিস্তৃত, তার ওপরই বাজারের প্রকৃত স্বাস্থ্য নির্ভর করছে। যতদিন পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বগতি কয়েকটি বড় কোম্পানির গণ্ডি পেরিয়ে সার্বজনীন না হচ্ছে, ততদিন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওর হতাশা কাটবে না।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ