ঢাকা, সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

নতুন ভূমি আইনে তিন বছর খাজনা বকেয়া থাকলেই বিপদ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১২:৪১:৪৫
নতুন ভূমি আইনে তিন বছর খাজনা বকেয়া থাকলেই বিপদ

স্মার্ট ভূমি কার্ড চালু, জমি বাজেয়াপ্ত হবে খাস খতিয়ানে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) তিন বছর বকেয়া থাকলেই মালিকানার ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়বে। নতুন ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৪’-এ এমনই বিধান যুক্ত হচ্ছে।ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আনতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নতুন আইনে জমির খাজনা, মালিকানা, শ্রেণি পরিবর্তন এবং জালিয়াতি ঠেকাতে একাধিক কঠোর ও আধুনিক বিধান যোগ হচ্ছে।

তিন বছর খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত

আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে:

টানা তিন অর্থবছর খাজনা বকেয়া থাকলে জমি বাজেয়াপ্ত করে সরকারের খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অর্থাৎ, জমির আসল মালিক আর সেই জমির মালিক থাকবেন না। সরকার সেটি নিজের নামে নিবন্ধন করে নেবে।

ভূমির জন্য আসছে স্মার্ট কার্ড (CLO)

নতুন আইনে প্রতিটি জমির জন্য থাকবে একটি সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ (CLO) বা স্মার্ট ভূমি কার্ড, যাতে থাকবে:

জমির মালিকের নাম ও জাতীয় পরিচয়

জমির দাগ, খতিয়ান ও মৌজার তথ্য

একটি ইউনিক নম্বর ও QR কোড

এই কার্ডই হবে জমির মালিকানার চূড়ান্ত প্রমাণ। খাজনা পরিশোধ, দলিল লেনদেন, নামজারি—সব কিছু CLO অনুসারে করতে হবে।

জাল কাগজে জমি নিলে শাস্তি: ২ বছর জেল

আইনে জমি জালিয়াতির জন্য কঠোর দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে:

জাল দলিল বা কাগজে জমি দখলের চেষ্টা করলে

২ বছরের জেল

বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা

বা উভয় দণ্ড

এতে জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা যাবে।

কৃষিজমি রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা

সরকার আর ইচ্ছেমতো তিন ফসলি কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে পারবে না। নতুন আইনে বলা হয়েছে:

উন্নয়ন প্রকল্পে দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি লাগবে

অগ্রাধিকার পাবে কম উৎপাদনশীল বা অনুর্বর জমি

এর ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন সক্ষমতা রক্ষিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে শাস্তি

সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে না

এক বিঘা পর্যন্ত জমির ক্ষেত্রে এই বিধান শিথিল

নিয়ম না মানলে—

এক বছর জেল

অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ভূমি মানচিত্র তৈরি হবে

জমির ধরন ও ব্যবহার শনাক্তে স্যাটেলাইট চিত্রভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি মানচিত্র তৈরি করা হবে। এতে আলাদা করে চিহ্নিত থাকবে:

আবাসিক এলাকা

বাণিজ্যিক এলাকা

কৃষি জমি

বনাঞ্চল ও জলাশয়

এতে ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক হবে।

জমি বদলের সঙ্গে সঙ্গে নামজারি ও খাজনা হালনাগাদ বাধ্যতামূলক

জমি বিক্রি বা উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরের পর

নতুন মালিককে নামজারি করতে হবে

সিএলও কার্ড হালনাগাদ করতে হবে

সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে

এটি না করলে নতুন মালিকানা স্বীকৃত হবে না।

বর্তমান আইন কী বলে?

বর্তমানে, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির ওপর খাজনা নেই, তবে মালিকদের ১০ টাকায় দাখিলা সংগ্রহ বাধ্যতামূলক।

এই দাখিলা জমির মালিকানা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও অনেকেই তা নেন না। নতুন আইনে দাখিলা ও খাজনার গুরুত্ব আরও বাড়ছে।

সরকার যা বলছে

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন:

“এই আইন বাস্তবায়িত হলে জমি নিয়ে জালিয়াতি কমবে, খাজনা আদায় নিয়মিত হবে এবং সাধারণ মানুষ জমির বিষয়ে আরও সচেতন হবেন।”

নতুন ভূমি আইন অনুসারে, খাজনা বকেয়া রাখার অর্থই হতে পারে মালিকানা হারানোর পথে প্রথম পদক্ষেপ।

তাই এখনই সচেতন হোন—নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করুন, দাখিলা সংগ্রহ করুন, স্মার্ট কার্ড হালনাগাদ রাখুন।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ