ঢাকা, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বাংলাদেশের খুব কাছেই আছেন শেখ হাসিনা, চট করেই দেশে ঢুকে পড়বেন?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১২:২৪:০৮
বাংলাদেশের খুব কাছেই আছেন শেখ হাসিনা, চট করেই দেশে ঢুকে পড়বেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গন্তব্য কি আবার ঢাকায়? ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার অবস্থান, গতিবিধি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘিরে চলছে টানটান উত্তেজনা ও জল্পনা। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—তিনি কি খুব শিগগিরই দেশে ফিরছেন?

ভারতে অবস্থান, কিন্তু কোথায়?

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট—এক ঐতিহাসিক দিন। ছাত্র ও জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মুখে প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন দুপুরেই ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে তিনি ভারতের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন। গন্তব্য ছিল গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটি।

তারপর থেকে এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও তার অবস্থান নিয়ে ভারত কিংবা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিনি দিল্লির ‘লুটিয়েন্স জোনে’ একটি নিরাপদ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সেখান থেকে মাঝে মাঝে লোধি গার্ডেন এলাকায় হাঁটতেও যান শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে, Zee News সহ একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাকে কলকাতায়ও দেখা গেছে এবং সেখানে একাধিক ‘গোপন বৈঠকে’ অংশ নিয়েছেন তিনি। এমনকি রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশেও তার অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে নিশ্চিত কোনো মন্তব্য আসেনি।

নয়াদিল্লির নীরবতা, কূটনৈতিক বার্তা?

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, “শেখ হাসিনা নিরাপত্তাজনিত কারণে স্বল্প নোটিশে ভারতে এসেছেন এবং সেভাবেই অবস্থান করছেন।” তার এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যও বিতর্ক থামাতে পারেনি বরং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারতীয় কূটনীতির একটি সুপরিকল্পিত নীরবতা।

রাজ্যসভার এক অধিবেশনে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো অনুরোধ এলে তবেই বিবেচনা করা হবে। এ উত্তরে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝা গেলেও ভারতের ‘বসন্তবাতাস’-এর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে।

দেশে ফিরলে কী অপেক্ষা করছে?

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলছে একাধিক মামলার কার্যক্রম। গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সময় ও আগে-পরে সংঘটিত ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ৩৫১টি মামলা, যার মধ্যে রয়েছে ২১৪টি হত্যা মামলা। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগেও বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হতে পারে। যদিও আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা, যিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আছেন, Zee News-কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন—“হাসিনা আপা পুরোপুরি পলাতক নন, তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন। দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে ফিরলে তিনিই ফিরে আসবেন।”

দেশে ফেরার সম্ভাবনা কতটা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দ্বিধাবিভক্ত। এক পক্ষ বলছে, ভারতের শরণে থাকা শেখ হাসিনার পক্ষে রাজনৈতিকভাবে আবারও সক্রিয় হওয়া অসম্ভব নয়। অন্য পক্ষ বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায় মাথায় নিয়ে তার দেশে ফেরা প্রায় অসম্ভব। কেউ কেউ আরও কঠোরভাবে মন্তব্য করছেন, “তার জীবদ্দশায় আর বাংলাদেশে ফেরা সম্ভব নয়।”

বর্তমান সরকার এবং দেশের মানুষ আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে। শেখ হাসিনার ফিরে আসা কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপরেও গভীর প্রভাব ফেলবে। আর এ কারণেই তার গতিবিধি, পরিকল্পনা ও ভারতের ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলেও নজরকাড়া হয়ে উঠেছে।

সময়ই বলবে, শেখ হাসিনা আরেকবার রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হবেন কিনা, নাকি ইতিহাসের পাতায় শুধু একটি বিতর্কিত অধ্যায় হয়েই থেকে যাবেন।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ