ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

বিনিয়োগকারীর জন্য সতর্কবার্তা: গুজব এবং বাজার কারসাজি

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৪ ১৭:০৯:০৪
বিনিয়োগকারীর জন্য সতর্কবার্তা: গুজব এবং বাজার কারসাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করে এমন এক অদৃশ্য শত্রু রয়েছে—গুজব। কখনো এটি একটি শেয়ারের দাম উর্ধ্বগতি ঘটায়, আবার কখনো হঠাৎ ধস নামিয়ে দেয়। মিথ্যা বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজারো বিনিয়োগকারী, অথচ এই “ধোঁয়াশার কারিগররা” প্রায়ই আড়ালে থেকে যান।

গুজবের উৎস মূলত তিনটি জায়গা থেকে উদ্ভূত হয়। প্রথমত, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব চ্যানেল বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ—যেখানে যাচাই-বাছাই ছাড়া খবর ছড়িয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁস, যা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করা হয়। তৃতীয়ত, বাজার কারসাজি—যেখানে বড় বিনিয়োগকারী বা সিন্ডিকেট ভুয়া খবর ছড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।

এই ধরনের ঘটনা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারেই দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গেমস্টপ শেয়ার নিয়ে Reddit প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত খবরের কারণে কয়েক দিনের মধ্যে শেয়ারের দাম কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই লাভ করলেও, যারা শীর্ষ দামে কিনে নেন তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়েন। ভারতে টেলিগ্রাম গ্রুপে ভুয়া খবর ছড়ানোর কারণে SEBI জরিমানা আর গ্রেপ্তার কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব দ্রুত ছড়ায় এবং বিনিয়োগকারীর আবেগকে প্রভাবিত করে। কেউ লাভের লোভে অযৌক্তিক দামে কিনে ফেলে, আবার কেউ ভয় পেয়ে অল্প দামে বিক্রি করে দেয়। এই আবেগনির্ভর লেনদেনই গুজব রটনাকারীদের মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ:

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো গুজব নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তথ্য পরিষ্কার করা, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির তদন্ত করা এবং কারসাজি প্রমাণিত হলে জরিমানা আরোপ করা অন্যতম। তবে বাস্তবতা হলো, অনেক বিনিয়োগকারী এখনো যাচাই-বাছাই ছাড়া গুজবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন, যা ঝুঁকি বাড়ায়।

গুজব মোকাবেলার উপায়:

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা আরও কঠোর ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া উচিত। গুজব রটনাকারী ও বাজার কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান জরুরি। শুধু আর্থিক জরিমানা নয়, প্রয়োজনে শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা এবং কারাদণ্ডও প্রযোজ্য করা উচিত।

সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও বিনিয়োগকারীদের জন্য ধারাবাহিক কার্যক্রম প্রয়োজন—অনলাইন ও অফলাইনে সেমিনার, বাজার সচেতনতা সপ্তাহ এবং শিক্ষামূলক কনটেন্টের মাধ্যমে তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব বোঝানো। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব শনাক্ত ও প্রতিহত করার জন্য অফিসিয়াল মনিটরিং টিম সক্রিয় রাখতে হবে, যাতে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার আগেই বন্ধ করা যায়।

প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বও অপরিসীম। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি লেনদেনের স্বচ্ছ রেকর্ড রাখা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে তাৎক্ষণিক ডেটা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সন্দেহজনক কার্যক্রম দ্রুত চিহ্নিত হবে, তদন্তে সময় কম লাগবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে।

শেষ পর্যন্ত, গুজব একটি নীরব ফাঁদ—যা প্রথমে লাভের মতো মনে হলেও ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষয় করে। শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সচেতনতা, প্রযুক্তি এবং কঠোর শাস্তির সমন্বয় অপরিহার্য। গুজবের আধিপত্য ভাঙা না গেলে, বিনিয়োগকারীর ক্ষতি থামানো সম্ভব হবে না।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ