MD. Razib Ali
Senior Reporter
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বসতে পারে বিরোধী দলের আসনে
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণে এক ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠছে। জামায়াতে ইসলামী এবার বিরোধী দলের আসন গ্রহণে নারাজ—এমন দৃঢ় অবস্থান প্রায় চূড়ান্ত। যদিও দলটির নেতারা প্রকাশ্যে সরকার গঠনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছেন, কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে প্রধান শরিক হিসেবে এককভাবে বিএনপির পাল্লাই বেশি শক্তিশালী হতে পারে। ফলস্বরূপ, জামায়াত নিজেদের ক্ষমতা ভাগীদার করতে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার দিকেই বেশি মনোযোগী।
এই পরিস্থিতিতে, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সেই সুযোগটিকেই নিজেদের কৌশলী চাল হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে না পারলেও, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানার ব্যবহার করে সংসদের বিরোধী শিবিরে নিজেদের স্থান করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে দলটি।
ক্ষমতার অংশীদারিত্বে জামায়াতের অগ্রাধিকার
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, জামায়াতে ইসলামী শুধু আসন নয়, বিএনপি ঘোষিত জাতীয় সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রিসভাতেও অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী। সাংগঠনিক ভিত মজবুত রাখাসহ বিভিন্ন কারণে জামায়াত আগামী সংসদে কোনো অবস্থাতেই বিরোধী আসনে বসতে চায় না। গত দেড় দশক ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময়ে মামলা-মোকদ্দমা, আক্রমণ ও অর্থনৈতিক ক্ষতির তিক্ত অভিজ্ঞতাই তাদের এমন কৌশলগত অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে।
সূত্রমতে, জামায়াত মনে করে যে কম সংখ্যক আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকলে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে সংসদে তাদের উপস্থিতি বাড়বে এবং দল সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। উপরন্তু, মন্ত্রিসভায় অংশ নিতে পারলে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রভাবও বহুগুণ বাড়বে।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ম্যাপ: নজর ৬০ আসনে
আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ছাড়াই অন্তত ৬০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই আসনগুলোর মধ্যে এমন কিছু স্থান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগের 'মূল ভোটব্যাংক' তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষভাবে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে—এমন আসনগুলোতে জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশ ও ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী টিম এই কৌশলগত মনোনয়ন নিয়ে কাজ করছে।
ওই টিমের বিশ্লেষণ বলছে, ১০ থেকে ১৫টি আসনে দলটি নিশ্চিত জয়লাভ করতে পারে। পাশাপাশি, আরও অন্তত ৪০টি আসনে সামান্য ব্যবধানে জয় আশা করছে তারা। তাদের ধারণা, সর্বনিম্ন ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেন। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিরোধী শিবিরে বসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জামায়াতের শঙ্কা: এক আত্মঘাতী 'ট্র্যাজিক পলিটিক্স'
জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র একটি জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের বিষয়টি সামনে এনেছে। তারা বলছে, যদি জামায়াত পৃথকভাবে নির্বাচন করে সংসদের বিরোধী আসনে বসে, তবে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে জনস্বার্থে কথা বলতে হবে। সেক্ষেত্রে, যদি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপিরাও সরকারের (বিএনপি-নেতৃত্বাধীন) বিরুদ্ধে কথা বলেন, তবে কার্যত জামায়াত এবং আওয়ামী লীগকে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। এমন একটি পরিস্থিতিকে তারা আত্মঘাতী 'ট্র্যাজিক পলিটিক্স' হিসেবে দেখছেন এবং এর জন্য জামায়াত কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়।
উল্লেখযোগ্য, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা জামায়াতই প্রথম সামনে আনে এবং সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক হয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছিল। ভবিষ্যতে সেই জামায়াতকে যদি স্বার্থের কারণে ফের আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে যেতে হয়, তবে তা দলের রাজনীতির জন্য হবে এক চরম বিপরীতমুখী যাত্রা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা অবশ্য কৌশলী উত্তর দিয়েছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে রাজনীতিতে স্বার্থের ঊর্ধ্বে কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের জয়ের আশা উড়িয়ে দিলেন জামায়াত নেতারা
এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের যুগান্তরকে জানান, জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে এবং দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সমান অংশীদার। তিনি বলেন, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আর দেখতে চায় না। বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগ ৪০-৫০টি আসনে বিজয়ী হবে বলে যারা মনে করছে, তাদের সে আশা পূরণ হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সচেতন এবং তারা ‘ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগারদের’ চিনতে ভুল করবে না; জনগণ তাদের প্রতিহত করবে।
অন্যদিকে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ যুগান্তরকে বলেছেন যে এসব কথা কিছু লোকের শুনতে ভালো লাগে, যারা ক্ষমতা সুনিশ্চিত করে রেখেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন—জামায়াত বিরোধী দলে কেন যাবে? তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে বলেন, "ইনশাআল্লাহ, জামায়াত তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে।" তিনি আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে সতর্ক করেন যে, ‘বর্ণচোরা আওয়ামী লীগারদের’ চিনতে মানুষ ভুল করবে না এবং তারা জনসমক্ষেই আসতে পারবে না।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে বড় ঘোষণা: ৪৪ কোম্পানির বোর্ড সভার সময়সূচি প্রকাশ, আসছে ইপিএস
- আজকের সোনার দাম: ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত জেনে নিন
- শেয়ার বাজারে কারসাজি: ১৩ পক্ষকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা জরিমানা বিএসইসির
- বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া: রনির ব্যাটিং ঝড়, ৭২ বলে ২৪৫, শেষ ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- আজকের সোনার দাম: দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি কত
- ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা
- সেনাবাহিনীসতর্কবার্তা: জারি করল সতর্কতা
- লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর সিরাপ, অজান্তেই খাচ্ছেন প্রতিদিন
- কিছুক্ষণ পর ব্রাজিল বনাম ইন্দোনেশিয়া ম্যাচ: খেলাটি সরাসরি দেখুন (Live)
- মাশরাফিকে দিয়ে আন্ডারওয়্যার ধুয়েছিলেন মঞ্জুরুল
- প্রকৌশল খাতে ১২ কোম্পানির লভ্যাংশ অপরিবর্তিত
- আবারও রেকর্ড গড়লো স্বর্ণের দাম
- সামিট অ্যালায়েন্সের রেকর্ড মুনাফা: শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আসছে রেকর্ড নগদ লভ্যাংশ
- আকবর-সোহানের ব্যাটিং ঝড়, শেষ বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- ফার্মা এইডসের বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা