ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

স্থায়ী নামজারি: দলিল-খতিয়ান নয়, এক ক্লিকে জমির প্রকৃত মালিক

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১২:৫৩:৫৪
স্থায়ী নামজারি: দলিল-খতিয়ান নয়, এক ক্লিকে জমির প্রকৃত মালিক

বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনে আসছে এক অভূতপূর্ব সংস্কার। কাগজপত্র নির্ভরতা ও ভূমি অফিসে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটিয়ে সরকার চালু করতে চলেছে “তৃতীয় প্রজন্মের স্থায়ী নামজারি সিস্টেম”। এই নতুন প্রক্রিয়ায় জমির স্বত্ব যাচাই ও নিবন্ধন সম্পন্ন হবে তাৎক্ষণিকভাবে—যেখানে কোনো দলিল, খতিয়ান বা সনাতন নথিপত্রের প্রয়োজন পড়বে না।

স্থায়ী স্বত্বাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে দেশের ভূমি স্বত্বাধিকার পদ্ধতি স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে। এখন থেকে কেবল সরকার নির্ধারিত ডিজিটাল সিস্টেমে যারা নিবন্ধিত থাকবেন, তারাই বৈধ স্বত্বাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। অন্য কোনো পক্ষ কোনোভাবেই সেই জমির মালিকানা দাবি করতে পারবে না।

দীর্ঘদিন ধরে জমি মালিকানা প্রমাণের ক্ষেত্রে দলিল, খতিয়ান ও দখল—এই তিনটি মানদণ্ডকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু একই সম্পত্তির ওপর একাধিক নথিপত্র বা রেকর্ড থাকার কারণে প্রকৃত স্বত্ব নির্ধারণে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নতুন ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই দ্বৈত মালিকানা বিতর্ক এবং দুর্নীতির পথ চিরস্থায়ীভাবে রুদ্ধ হবে।

পুনঃবিক্রয়ের সুযোগ বন্ধ; মামলা কমবে ৯০ শতাংশ

সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, একবার কোনো জমির দলিল নিবন্ধিত হয়ে গেলে তা দ্বিতীয়বার বিক্রির আর কোনো সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ, একই সম্পত্তি নিয়ে আর কেউ নতুন করে দলিল বা নামজারির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে না। এর ফলস্বরূপ, ভূমি জালিয়াতি, বিরোধ, এবং দেওয়ানি মোকদ্দমার সংখ্যা নব্বই শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৭টি আধুনিক ডিজিটাল টুলস, ৫টি মূল অ্যাপ্লিকেশন

ভূমি ব্যবস্থাপনাকে জবাবদিহিতামূলক ও দ্রুত সেবামুখী করতে এই ডিজিটাল সিস্টেমে যুক্ত হচ্ছে মোট ১৭টি অত্যাধুনিক ডিজিটাল টুলস বা অ্যাপস। এর মধ্যে নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি অ্যাপ্লিকেশন হলো:

১। নামজারি সংক্রান্ত অ্যাপ

২। দলিল যাচাই সংক্রান্ত অ্যাপ

৩। খতিয়ান (রেকর্ড) উত্তোলন সংক্রান্ত অ্যাপ

৪। ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) প্রদান সংক্রান্ত অ্যাপ

৫। জমির ম্যাপ উত্তোলন সংক্রান্ত অ্যাপ

এই সহায়ক সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে জমির মালিকেরা সহজেই যাচাই করতে পারবেন তাদের মালিকানায় কোনো প্রকার অসঙ্গতি বা ত্রুটি আছে কিনা। এর ফলে ভূমি অফিসের হয়রানি, ঘুষ লেনদেন ও অনিয়মের সুযোগ প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।

২০২৬ সালের মধ্যে লক্ষ্যপূরণ

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অটোমেশন এবং ডিজিটালাইজেশনের কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং আগামী ২০২৬ সালের মধ্যেই দেশের প্রতিটি জেলা ও মৌজায় এই স্থায়ী নামজারি পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর করা হবে। সরকার মনে করে, নামজারি প্রথা ছিল দুর্নীতির অন্যতম মূল উৎস। তাই পুরনো পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে চালু হওয়া এই নতুন স্থায়ী মালিকানা যাচাই ব্যবস্থা দেশের ভূমি প্রশাসনকে স্বচ্ছ, দ্রুত সেবামুখী ও নাগরিকবান্ধব করে তুলবে।

দলিল, খতিয়ান বা নথিপত্র নয়—মুহূর্তের মধ্যে এক ক্লিকেই নির্ধারিত হবে, কে জমির প্রকৃত স্বত্বাধিকারী!

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) এবং উত্তর

নতুন স্থায়ী নামজারি সিস্টেমটি কী?

এটি হলো "তৃতীয় প্রজন্মের স্থায়ী নামজারি সিস্টেম," যা কাগজপত্রের ঝামেলা ছাড়াই এক ক্লিকেই জমির মালিকানা যাচাই ও নিবন্ধন সম্পন্ন করবে এবং স্থায়ী স্বত্বাধিকার দেবে।

জমির মালিকানা যাচাইয়ে কি দলিল বা খতিয়ান লাগবে?

না। নতুন পদ্ধতিতে দলিল, খতিয়ান বা পুরনো রেকর্ডের প্রয়োজন নেই। এখন থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরাই প্রকৃত মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কবে থেকে এই স্থায়ী নামজারি পদ্ধতি চালু হবে?

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই দেশের প্রতিটি জেলা ও মৌজায় এই স্থায়ী নামজারি পদ্ধতি পুরোপুরি চালু করা হবে।

এই সিস্টেমে ভূমি জালিয়াতি কীভাবে কমবে?

একবার দলিল রেজিস্ট্রেশন হলে তা আর দ্বিতীয়বার বিক্রি করা যাবে না। এতে ভূমি জালিয়াতি, দ্বন্দ্ব ও মামলা-মোকদ্দমা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।

জমির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৫টি অ্যাপস কী কী?

নামজারি অ্যাপ, দলিল যাচাই অ্যাপ, খতিয়ান উত্তোলন অ্যাপ, ভূমি উন্নয়ন কর অ্যাপ, এবং জমির ম্যাপ উত্তোলন অ্যাপ।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আজ ৮ কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড সভা: আসছে ইপিএস

আজ ৮ কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড সভা: আসছে ইপিএস

বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে আজ আটটি ভিন্ন কোম্পানি। ঘোষণা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ সভা (বোর্ড সভা) আজকের দিনটিতে (১০... বিস্তারিত