ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২

৩ কোম্পানির কারখানায় ঝুলছে তালা, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২২ ২১:৩৫:৪৬
৩ কোম্পানির কারখানায় ঝুলছে তালা, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের ঝলমলে দুনিয়া হাজারো বিনিয়োগকারীর জন্য এখন এক অন্ধকার সুড়ঙ্গে পরিণত হয়েছে। রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম), নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার এবং আরামিট সিমেন্টের মতো তিনটি কোম্পানির কারখানার গেটে ঝুলছে তালা। উৎপাদন বন্ধ, মেশিনের শব্দ থেমে গেছে, আর তার সাথে সাথেই থেমে গেছে হাজারো বিনিয়োগকারীর স্বপ্ন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শনের পর এই চিত্রটি নিশ্চিত করেছে।

ডিএসই-এর পরিদর্শক দল ২১ আগস্ট আরএসআরএম, এবং গত জুলাই মাসে আরামিট ও নূরানী ডাইং-এর কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছে, সবখানেই নীরবতা। একসময় যেখানে কর্মচাঞ্চল্য ছিল, আজ সেখানে কেবলই শূন্যতা। এই অচলাবস্থা সেই সব বিনিয়োগকারীদের বুকে ছুরির মতো বিঁধছে, যারা লভ্যাংশ এবং শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির আশায় তাদের সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছিলেন।নামমাত্র মূল্যের শেয়ার বুকে জড়িয়ে রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা

নূরানী ডাইং-এর পরিস্থিতি সবচেয়ে করুণ। ২০১৮ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় আর্থিক সংকটে পড়ে কোম্পানিটি। ব্যাংকের বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ তো দূরের কথা, সামান্য কোনো তথ্যও সরবরাহ করেনি কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার এর শেয়ারের দাম ২ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে এসেছে। এক বিনিয়োগকারী ক্ষোভের সাথে বলেন, "ডিভিডেন্ডের আশাতেই তো বিনিয়োগ করেছিলাম। বছরের পর বছর কারখানা বন্ধ থাকলে আমাদের লোকসান ছাড়া আর কী প্রাপ্য?"

অন্যদিকে, একসময়ের ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি আরএসআরএম-এর গল্পটাও ভিন্ন নয়। ২০২০ সাল থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা তাদের উৎপাদন পুরোপুরি থামিয়ে দেয়। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ঝুলে আছে একাধিক মামলা। ফলস্বরূপ, বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুনছে এবং কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে না আরএসআরএম। বৃহস্পতিবার তাদের শেয়ারের দাম ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা, যা এক বছর আগেও ২০ টাকার উপরে ছিল। যদিও কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দিনের দাবি, কার্যকরী মূলধনের অভাবে উৎপাদন হচ্ছে না, কিন্তু কারখানা চালু আছে।

আরামিট সিমেন্টের সংকটটি আবার ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই কোম্পানিটি লোকসানে নিমজ্জিত হয়। এর চেয়ারম্যান রুখমিলা জামান সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী, যার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার এই কোম্পানির শেয়ার ১২ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

সুশাসনের অভাবকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের দাবি, জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে এই কোম্পানিগুলোকে পুনরায় চালু করা হোক, যাতে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা পায় এবং মানুষের কর্মসংস্থান ফিরে আসে।

তাদের মতে, এই বিপর্যয় একদিনে ঘটেনি। যদি কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও সুশাসন থাকত, তবে সংকটের আভাস অনেক আগেই পাওয়া যেত। কিন্তু কোনো সতর্কতামূলক লক্ষণ না থাকায়, বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ করেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসই-কে আরও কঠোর ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের মতে, দুর্বল কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়মিত নজরদারি করলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আগে থেকেই মূল্যায়ন করা সম্ভব হতো।

বিনিয়োগকারীরা জানেন, ব্যবসায় লাভ-লোকসান থাকবেই। কিন্তু যখন একটি প্রতিষ্ঠান আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না এবং বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকেন, তখন সেই অনিশ্চয়তাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ