ঢাকা, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সরকারি নমুনা মেনে নির্ভুল দলিল তৈরির ১১টি ধাপ জেনে নিন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১২ ১৪:২৪:২৭
সরকারি নমুনা মেনে নির্ভুল দলিল তৈরির ১১টি ধাপ জেনে নিন

ভূমি রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়ায় অসাবধানতা বা ত্রুটির ফলে প্রায়শই ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম বিপত্তির মুখে পড়েন। অনেকে ভুলবশত মনে করেন যে একবার দলিলে কোনো বিভ্রাট ঘটলে তা আর সংশোধনের অযোগ্য। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও যদি প্লট নম্বর (দাগ), খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি অথবা নামের বানানে কোনো গরমিল ধরা পড়ে, তবে তা আইনি প্রক্রিয়ায় সংশোধন করা সম্ভব। যদিও এটি একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়।

ত্রুটি সংশোধনের আইনি প্রক্রিয়া

যদি দলিলে কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে যায়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা দায়ের করতে পারবেন। এই সময়সীমা পার হয়ে গেলে অর্থাৎ তিন বছর অতিক্রান্ত হলে সেই ধরনের মামলা তামাদির (Limitations) কারণে বাতিল বলে গণ্য হয়। সেক্ষেত্রে সরাসরি সংশোধন মামলা করা না গেলেও, ঘোষণামূলক মামলা (Declaratory Suit) দায়েরের সুযোগ থাকে।

এক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক প্রদানকৃত মামলার রায়ই কার্যকর সংশোধন দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। রায়ের একটি অনুলিপি আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট পাঠানো হলে তিনি সেই রায়ের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ভলিউমটি সংশোধন করে নেন। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৩১ ধারায় এর জন্য নতুন করে কোনো দলিল সম্পাদনের আর প্রয়োজন হয় না।

ঝামেলা এড়াতে পূর্ব-সতর্কতা: নির্ভুল দলিল রচনার কৌশল

দলিল রেজিস্ট্রেশন-পূর্ববর্তী জটিলতা এড়াতে সরকারি প্রমিত নমুনা (Standard Template) ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ তালিকাভুক্ত দলিল লেখক নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি, যার কাজ একাধিকবার নিরীক্ষা (Proofreading) করানো উচিত। এতে বড় ধরনের ভুলত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

দলিল প্রস্তুতকালীন অবশ্য-পালনীয় ১১টি নির্দেশিকা

নির্ভুল দলিল তৈরির জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা আবশ্যক:

১. বিক্রেতার বৈধতা নিশ্চিতকরণ: সম্পত্তি হস্তান্তরকারী (দাতা/বিক্রেতা) আইনত সাবালক এবং স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন কিনা, তা প্রথমে নিশ্চিত করুন।

২. পূর্ববর্তী নথির যাচাই: নতুন দলিলে শিরোনাম, সাফকবলা এবং বায়নাপত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির সঙ্গে পুরাতন দলিলের তথ্য মিলিয়ে নিন।

৩. পক্ষ পরিচয় ও আর্থিক বিবরণ: গ্রহীতা ও দাতা (প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষ) উভয়ের পূর্ণ নাম, ঠিকানা, পেশা, ধর্ম সহ জমির পরিমাণ ও বিক্রয় মূল্য (বায়নার ক্ষেত্রে পরিশোধিত/বাকি অর্থ) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। মালিকানার ভিত্তি দলিল হলে, পূর্বের দলিলের নম্বর ও তারিখ এবং পর্চা/খতিয়ান পরীক্ষা আবশ্যক।

৪. উত্তরাধিকারের শৃঙ্খল: সম্পত্তিটি যদি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়, তবে মূল মালিকের সঙ্গে বর্তমান বিক্রেতার সম্পর্ক এবং যোগসূত্র যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত কিনা, তা নিশ্চিত হন।

৫. তফসিল ও শ্রেণির উল্লেখ: জেলা, উপজেলা, রেজিস্ট্রি অফিসের নাম, মৌজা, দাগ ও খতিয়ান নম্বর সহ সম্পত্তির সঠিক তফসিল এবং এর শ্রেণী (যেমন— ভিটা, দলা, ডাঙ্গা, জলাভূমি) পরীক্ষা করুন।

৬. সম্পত্তির চতুঃসীমা (চৌহদ্দি): উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম পাশের জমির বর্ণনা এবং সংলগ্ন মালিকদের নাম সহ চৌহদ্দি নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিনা, তা মিলিয়ে দেখুন।

৭. দাতার স্বাক্ষর/টিপসহি: দাতা যেন প্রথম পৃষ্ঠার ওপরে ডানদিকে (নিচে থেকে ওপরে) নিজের নাম স্বাক্ষর করেন অথবা নিরক্ষর হলে টিপসহি দেন। শেষ পৃষ্ঠায়ও দাতার স্বাক্ষর বা টিপসহি আবশ্যক। প্রতিটি পৃষ্ঠায় দাতার স্বাক্ষর বা টিপসহি দিলে নথিটি সুরক্ষিত হয়।

৮. সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য ও শনাক্তকরণ: শেষ পৃষ্ঠায় দাতার স্বাক্ষরের ঠিক নিচে দলিল লেখককে স্বাক্ষর করতে হবে। পাশাপাশি, কমপক্ষে দুজন সাক্ষী এবং বিক্রেতাকে শনাক্ত করে একজন শনাক্তকারীকেও স্বাক্ষর দিতে হবে।

৯. কাটাকাটি পরিহার ও কৈফিয়ত: নথিতে ঘষামাঝা, কাটাকাটি বা অস্পষ্টতা যথাসম্ভব পরিহার করুন। যদি তা একান্তই জরুরি হয়, তবে পরিবর্তনের লাইন ও শব্দক্রম উল্লেখ করে দলিলের শেষে অবশ্যই কৈফিয়ত (Justification) লিখে দলিল লেখককে তার নিচে স্বাক্ষর করতে হবে।

১০. দাগভিত্তিক পরিমাণ বিভাজন: তফসিল লেখার সময় প্রতিটি দাগে মোট কতটুকু জমি আছে এবং বর্তমান বিক্রয় দলিলে সেই দাগ থেকে কত একর বা শতাংশ হস্তান্তর করা হচ্ছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করুন।

১১. ক্রেতার সতর্কতা: তহশিল অফিসের তথ্য: ক্রেতার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিভিন্ন জরিপের সঠিক দাগ ও খতিয়ান নম্বর দলিল লেখকের মাধ্যমে সঠিকভাবে লেখানো। জমি ক্রয়ের আগে তহশিল অফিস থেকে এই নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যক।

আল-মামুন/

ট্যাগ: জমির দলিল তৈরির নিয়ম নির্ভুল দলিল লেখার পদ্ধতি সরকারি নমুনা অনুসরণ করে দলিল দলিল রেজিস্ট্রির সঠিক উপায় দলিল লেখার চেক লিস্ট দলিল লেখায় ভুল এড়ানোর উপায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন নিয়মাবলী জমি কেনা-বেচার দলিল তৈরির ধাপ দলিল ভুল হলে করণীয় ভুল দলিল সংশোধন করার উপায় জমির দলিলে দাগ/খতিয়ানে ভুল সংশোধন দলিল সংশোধনের মামলা কত বছর দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা তামাদির কারণে বারিত মামলা ঘোষণামূলক মামলা কি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৩১ ধারা দলিল সংশোধন করতে কত সময় লাগে রেজিস্ট্রির পর দলিল সংশোধন দলিললেখকের দক্ষতা যাচাই তালিকাভুক্ত দলিললেখক দলিলের চৌহদ্দি যাচাইয়ের নিয়ম দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর যাচাই দলিলের তফশিল লেখার নিয়ম দলিল প্রুফ রিডিং পদ্ধতি How to prepare land deed in Bangladesh Error-free property deed drafting Standard template for land deed Bangladesh Steps for accurate deed registration Land registry rules and guidelines Bangladesh Deed writing best practices Land deed correction procedure Bangladesh How to correct mistake in registered deed Deed amendment law in Bangladesh Civil court case for deed correction Limitation period for deed correction (3 years) Declaratory suit for land deed mistake Specific Relief Act 31 deed correction Correction of Dag Khatian number error in deed Legal remedy for faulty land deed Land deed verification checklist How to verify deed writer Checking land boundary (Chouhaddi) in deed Verifying Khatian and Dag number before deed Importance of proofreading land deed Legal requirements for deed signature What to check before registering a land deed জমিরদলিল দলিলসংশোধন দলিলভুল ঘোষণামূলকমামলা সুনির্দিষ্টপ্রতিকারআইন৩১ দলিলরেজিস্ট্রি নির্ভুলদলিল দলিললেখারনিয়ম দেওয়ানিআদালত দাগখতিয়ানভুল চৌহদ্দিযাচাই তামাদিআইন দলিললেখক PropertyDeedCorrection LandDeedBangladesh DeedRectification ErrorFreeDeed SpecificReliefAct31 DeclaratorySuit CivilCourtCase DeedVerification LandRegistryBD

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ