ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২

ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধি অভিযান: সাবেক গভর্নরসহ ২৬ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা তদন্তের জালে

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৬ ১৯:৪১:৪০
ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধি অভিযান: সাবেক গভর্নরসহ ২৬ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা তদন্তের জালে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের টালমাটাল ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং বিগত দেড় দশকের অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটনে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ২০টি বেসরকারি ব্যাংককে। এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং শীর্ষ নির্বাহীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সংঘটিত লুটপাট ও অর্থপাচারের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে এই তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। দুদকের প্রাথমিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অভিযুক্তদের ব্যাংক হিসাব এবং সম্পদের বিস্তারিত তথ্য তলব করা হয়েছে। শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকই নয়, এই তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আবদুর রউফ তালুকদারসহ ছয়জন ডেপুটি গভর্নরকেও।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ১৯ আগস্ট দুদককে চিঠি দিয়ে এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে বড় অংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়া বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের ঘটনা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

বেসরকারি খাতের ১৮টি ব্যাংকও এই তদন্তের বাইরে থাকছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদ্ধতিগত অনিয়মের মাধ্যমে এসব ব্যাংককে দুর্বল করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তীব্র সংকটে পড়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৫টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এই ব্যাংকগুলোর আগের পর্ষদের কর্মকাণ্ডও এখন তদন্তাধীন। ব্যাংকগুলো হলো: ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ইউসিবি, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আল-আরাফাহ ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, মেঘনা, বাংলাদেশ কমার্স এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক। পাশাপাশি, এবি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধেও লুটপাটের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংকিং খাতের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "ব্যাংকের মালিক ও পরিচালকরাই যোগসাজশে টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।" তিনি নিজের ছাত্র ছিলেন এমন একজন ব্যাংক চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে জানান, সেই ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি, যার প্রায় পুরোটাই মালিক-পরিচালকরা আত্মসাৎ করেছেন। অর্থ উপদেষ্টার এই মন্তব্য চলমান সংকট এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের যৌক্তিকতাকেই স্পষ্ট করে তোলে।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ