ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

এক সিদ্ধান্তে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ০৮:৩৯:১৫
এক সিদ্ধান্তে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান: খাগড়াছড়ির দুর্গম গ্রামে বিশুদ্ধ পানির নতুন দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের অবহেলা আর মৌলিক সুবিধা বঞ্চিত খাগড়াছড়ির দুর্গম কারিগর পাড়া ও রেজামনি পাড়ার পাঁচ শতাধিক বাসিন্দার জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। বিদ্যুৎ, রাস্তা এবং বিশেষত বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এই মানবতাবাদী প্রকল্পের নির্দেশদাতা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দূরদর্শী নেতৃত্ব বর্তমানে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রশংসার কেন্দ্রে রয়েছে। তাঁর এই প্রশংসনীয় পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দুর্গম পার্বত্য এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের একটি মৌলিক চাহিদা পূরণ হতে যাচ্ছে।

সেনাপ্রধানের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা ও গ্রামবাসীর মুখে হাসি:

জানা যায়, প্রায় তিন মাস পূর্বে রেজামনি পাড়া আর্মি ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেখানে তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন। গ্রামবাসী এ সময় তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবের কথা তুলে ধরেন।

বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশুদের পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সেনাপ্রধানকে গভীরভাবে মর্মাহত করে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি গ্রামবাসীদের সামনেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন, যা এলাকাবাসীর মধ্যে তাৎক্ষণিক আশার সঞ্চার করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর গভীর সংবেদনশীলতা এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দৃঢ় মানসিকতা।

সোলার প্যানেল প্রকল্প: একটি নতুন ভোরের আগমন:

সেনাপ্রধানের নির্দেশনার পরপরই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি অত্যাধুনিক সোলার প্যানেলভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে গ্রামবাসীর চোখে-মুখে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এই প্রকল্পটি তাদের জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেবে এবং এটিকে তারা "ওপরওয়ালার আশীর্বাদ" হিসেবে দেখছেন।

কারিগর পাড়ার ৭০ বছর বয়সী কৃষক সুবীন্দ্র লাল কারবারি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জানান, "আমরা দুর্গম পাহাড়ের কুয়া ও টিউবওয়েল থেকে যে পানি সংগ্রহ করতাম, তাতে প্রচুর আয়রন ছিল। সেনাপ্রধানের কাছে আমাদের সমস্যার কথা জানালে তিনি দ্রুত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। আমরা মনে করি সেনাপ্রধানের এই উদ্যোগ ওপরওয়ালার আশীর্বাদ।"

কারিগরি সক্ষমতা ও সুদূরপ্রসারী সুফল:

রাজলক্ষ্মী অ্যান্ড রাজ পিউ ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশন নামক একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব বড়ুয়া জানান, এই সোলার প্যানেল সিস্টেম প্রতিদিন চার হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।

প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার লিটারের দুটি এবং ২ হাজার লিটারের একটি সহ মোট ৪ হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাবার পানি পাবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দুর্গম পাহাড়ের উন্নয়নে সেনাবাহিনীর বহুমুখী ভূমিকা:

সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেবল সীমান্ত সুরক্ষায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও তা প্রসারিত হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য সীমান্ত সড়ক নির্মাণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব এনেছে। যে পথ পাড়ি দিতে পূর্বে দুই-তিন দিন সময় লাগত, এখন তা মাত্র দুই-তিন ঘণ্টায় সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়াও, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের ফলে অনেক শিক্ষার্থী নামকরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করছে। বাজারগুলোতে সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এমনকি পর্যটন শিল্পের বিকাশেও সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

চিকিৎসা সেবায় সেনাবাহিনীর মানবিক হাত:

সরেজমিনে ১ নম্বর খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে স্থাপিত সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল ক্যাম্পে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি উন্নতমানের ওষুধও বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

গোগড়াছড়ি থেকে হাতের চামড়ার ইনফেকশনের চিকিৎসার জন্য আসা টিমরশ মারমা জানান, তার ছয় বছর বয়সী বাচ্চার হাতের অবস্থা আগে অনেক খারাপ ছিল, কিন্তু এখানকার ওষুধ খেয়ে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। মেডিক্যাল ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট মুনিম ইসলাম সামিন জানান, ক্যাম্পে চারজন ডাক্তার কাজ করছেন, যার মধ্যে নারীদের চিকিৎসার জন্য একজন আলাদা গাইনি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, মুমূর্ষু রোগীদের দুর্গম অঞ্চল থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসতেও সেনাবাহিনী সহযোগিতা করে। কিছু ক্ষেত্রে, মুমূর্ষু রোগীদের নিজস্ব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য এক বিরাট স্বস্তি। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সেনাবাহিনী ১৯ হাজার ৯১২ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে, যার মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১২ হাজার ৫৫৪ জন এবং বাঙালি ৭ হাজার ৩৫৮ জন রোগী অন্তর্ভুক্ত।

এই বহুমুখী জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাই করছে না, বরং দুর্গম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও এক অবিস্মরণীয় ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও মানবিক উদ্যোগে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের মুখে যে হাসি ফুটেছে, তা সমগ্র দেশবাসীর জন্য এক অনুপ্রেরণামূলক বার্তা বহন করছে।

জামিরুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ